thereport24.com
ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল 24, ৭ বৈশাখ ১৪৩১,  ১১ শাওয়াল 1445

কর্তৃপক্ষের অসহযোগিতা, ন্যাশনাল ব্যাংকের দুর্নীতির অনুসন্ধান বাধাগ্রস্ত

২০২২ জুলাই ২৩ ১৪:০০:২৪
কর্তৃপক্ষের অসহযোগিতা, ন্যাশনাল ব্যাংকের দুর্নীতির অনুসন্ধান বাধাগ্রস্ত

মাহি হাসান, দ্য রিপোর্ট: বিভিন্ন সময়ে আলোচিত ন্যাশনাল ব্যাংকের নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে বেশ আগেই অনুসন্ধানে নেমেছিলো দুর্নীতি দমন কমিশন( দুদক)। তবে ব্যাংক কর্তৃপক্ষের অসহযোগিতায় সে তদন্তে এগুতো পারছে না দুদক। সম্প্রতি দুদক থেকে পাঠানো এক চিঠিতে সে অসহযোগিতার ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। দুদকের পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেনের স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বলা হয়েছে আগেও এ সংক্রান্ত কাগজপত্র চেয়ে চিঠি দিয়েছিলো দুদক। তবে সেসব কাগজপত্র অসম্পূর্ণ থাকায় অনুসন্ধান কাজের বিঘ্ন হচ্ছে। তাই প্রয়োজনীয় সব ধরণের কাগজ সরবরাহ করতে চিঠি দিয়েছে দুদক।

ন্যাশনাল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে পাঠানো ওই চিঠিতে বলা হয়েছে ব্যাংকের চেয়ারম্যান,পরিচালনা পর্ষদ ও ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেডের সদস্যবৃন্দের দুর্নীতি,স্বেচ্ছাচারিতা,নামে বেনামে আমানতকৃত অর্থ লুটপাট করেছে। ঘুষের বিনিময়ে ঋণ দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে। পাশাপাশি ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে ৩০ লাখ ডলার খরচের অভিযোগ রয়েছে পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে ।

দুদকের চিঠিতে ব্যাংকটির নিমতলী শাখায় মের্সার্স ইপসু ট্রেডিং কর্তৃক চলতি হিসাব (কারেন্ট একাউন্ট) খোলার আবেদনের তথ্য চেয়েছে। একই সঙ্গে এই হিসাবে লেনদেনের তথ্য চেয়েছে দুদক। পাশাপাশি ব্যাংকটি কর্তৃক কারওয়ানবাজার ও চট্রগ্রামে এনবিএল টাওয়ারে বিনিয়োগ সংক্রান্ত সব ধরণের কাগজ চাওয়া হয়েছে। এসব কাগজের মধ্যে রয়েছে প্রাক্কলন টেন্ডার, ঠিকাদার নির্বাচন, কাজের আদেশপত্র , কাজ সম্পাদন হওয়া সংক্রান্ত প্রত্যায়ন, বিল প্রদানসহ সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্র। এছাড়া যৌথ বিনিয়োগ হয়ে থাকলে সে বিষয়ক চুক্তিপত্র, ঋন প্রদান সংক্রান্ত রেকর্ডপত্র।
একই সঙ্গে ব্যাংকের ২ পরিচালক রণ হক শিকদার ও রিক হক শিকদার সহ আরো ৫ জনের (জন হক শিকদার,মমতাজুল হক,মনিরা শিকদার খান,নাসিম হক শিকদার ,সৈয়দ কামরুল ইসলাম) নামে ব্যাংক থেকে যেসব ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করা হয়েছে তার সর্বশেষ বিবরণী দুদকে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ন্যাশনাল ব্যাংকের রর্তমান চেয়ারম্যান মনোয়ারা শিকদার। তিনি সাবেক চেয়ারম্যান সিকদার গ্রুপের চেয়ারম্যান প্রয়াত জয়নুল হক শিকদারের স্ত্রী। ২০২১ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি তিনি মৃত্যু বরণ করেন।
দুদকের পাঠানো চিঠির বিষয়ে জানতে চাওয়া হয় ব্যাংকটির এমডি মো.মেহমুদ হোসেনের সঙ্গে। কথা বলতে কয়েক দফা সময় নেন তিনি। পরে এ বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকার করেন। আইন অমান্য করে ব্যাংকের পরিচালক ও তাদের আত্মীয় স্বজনদের ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে নজীরবিহীন পরিমান ঋণ দেয়ার যে অভিযোগ রয়েছে তা নিয়েই তদন্ত শুরু করে দুদক। তবে এ অভিযোগের বিষয়ে ক্ষমা চায় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ক্ষমা চায়। গত ১২ জানুয়ারি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে পাঠানো চিঠিতে ন্যাশনাল ব্যাংক প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, 'এ ধরণের অন্যায় ভবিষ্যতে আর হবে না।'

ব্যাংকিং আইনের গুরুতর লঙ্ঘন করে ন্যাশনাল ব্যাংক তাদের ২ পরিচালক রিক হক সিকদার ও রন হক সিকদার এবং তাদের পরিবারের সদস্যসহ মোট ১১ জনকে ২০১৭ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে আন্তর্জাতিক ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে ১৩ দশমিক ৬৩ মিলিয়ন ডলার (প্রায় ১১৮ কোটি টাকা) খরচ করার সুবিধা দেয়। একইসঙ্গে ন্যাশনাল ব্যাংক তাদের কার্ড বিভাগকে সর্বোচ্চ সতর্কতার সঙ্গে পরিচালনা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলো তখন। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছিলো যেন তাদের কার্ড সেবা বন্ধ করে না দেওয়া হয়।

পরবর্তীতে শাস্তিস্বরূপ বাংলাদেশ ব্যাংক গত মাসে ১১ জন গ্রাহকের ঋণ সংক্রান্ত তথ্য গোপনের অভিযোগে ন্যাশনাল ব্যাংককে ৫৫ লাখ টাকা জরিমানা করেছিলো।

এতশত অভিযোগের ও ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে নীতিমালার বড় ধরণের লঙ্ঘন চিহ্নিত হওয়ার পর বাংলাদেশ ব্যাংক গত বছরের এপ্রিলে ন্যাশনাল ব্যাংককে তাদের পূর্ব অনুমতি ছাড়া কোনো ধরনের ঋণ না দেওয়ার নির্দেশ দেয়। তবে কর্তৃপক্ষ ক্ষমা চাওয়ায় ব্যাংকটি গত বছরের ডিসেম্বরে ঋণসেবা পরিচালনার অনুমতি ফিরে পায়। কিন্তু গত ৯ জুন এক চিঠি দিয়ে ব্যাংকটির বড় অঙ্কের ঋণ বিতরণ বন্ধ করে দেওয়া হয়। ব্যাংকের আর্থিক অবস্থার অবনতির পাশাপাশি ব্যাংক ব্যবস্থাপনার অবনতি হওয়ায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে জানা গেছে।


উল্লেখ্য, ন্যাশনাল ব্যাংক ১৯৮৪ সালে পুজিবাজারে তালিকুভুক্ত হয়। দেশের প্রথমদিককার এই ব্যাংকটি ৩ হাজার ২১৯ কোটি টাকা পরিশোধিত মুলধন নিয়ে তালিকাভুক্ত হয়। সর্বশেষ হিসাবমতে কোম্পানিটিতে পরিচালকদের শেয়ার রয়েছে ২৮ দশমিক ৪৭ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক শেয়ার রয়েছে ২২ দশমিক ৩২ শতাংশ।বিদেশী বিনিয়োগ দশমিক ৭৯ শতাংশ। সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের বিনিয়োগ রয়েছে ৪৮ দশমিক ৪২ শতাংশ। গত বছর ৩৮ কোটি টাকা বা শেয়ারপ্রতি ১২ পয়সা মুনাফা হলেও শেয়ারহোল্ডারদের কোনো লভ্যাংশ দেয়নি প্রথম প্রজন্মের বেসরকারি ব্যাংক ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেড বা এনবিএল। বৃহস্পতিবার (২১ জুলাই) এই ব্যাংকের প্রতিটি শেয়ার ৮টাকা ২০ পয়সা দরে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেন হয়েছে। এদিন ব্যাংকটির ৬৬ লাখ ১৮ হাজার ৯২২টি শেয়ার লেনদেন হয়।

(দ্য রিপোর্ট / টিআইএম/ মাহা/জুলাই, ২০২২)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

SMS Alert

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর