thereport24.com
ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল 24, ৭ বৈশাখ ১৪৩১,  ১১ শাওয়াল 1445

উৎপাদনে ফিরলো সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইল

২০২২ আগস্ট ১৩ ১৯:৩১:২২
উৎপাদনে ফিরলো সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইল

দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: বন্ধ হওয়ার পাঁচ বছর পর ফের উৎপাদনে ফিরেছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইল। প্রাথমিকভাবে কোম্পানিটি পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরু করেছে। পরীক্ষামূলক উৎপাদন শেষে শিগগিরই পরিপূর্ণ উৎপাদন শুরু হবে।

চট্টগ্রামে অবস্থিত কোম্পানিটির কারখানা প্রাঙ্গণে উপস্থিত হয়ে শনিবার সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইলের পরীক্ষামূলক উৎপাদন উদ্বোধন করেন পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। বস্ত্র খাতের কোম্পানি সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইল ২০১৫ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। কোম্পানিটি প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে শেয়ার ছেড়ে বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে ৪৫ কোটি টাকা সংগ্রহ করে।
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার পর তিনি বছর পার না হতেই ২০১৭ সালে কোম্পানিটির উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপভিত্তিক তৈরি পোশাক ক্রেতাদের সংগঠন অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সের চাহিদা অনুযায়ী কোম্পানির কারখানা সংস্কার করার কথা বলে ২০১৭ সালের ১ মে উৎপাদন বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয় কোম্পানিটির কর্তৃপক্ষ।
এরপর আর উৎপাদনে না ফেরায় অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলামের নেতৃত্বাধীন কমিশন বিএসইসির দায়িত্ব নেওয়ার পর গত বছর কোম্পানিটিকে পুনরুজ্জীবিত করার উদ্যোগ নেয়। তারই অংশ হিসেবে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে আলিফ গ্রুপের পক্ষ থেকে সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইল অধিগ্রহণের প্রস্তাব দেয়া হয়। আলিফ গ্রুপের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে অক্টোবরে বিএসইসি কিছু শর্ত দিয়ে সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইল অধিগ্রহণে সম্মতি দেয়। নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদন পেয়ে চলতি বছরে সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইলকে উৎপাদনে ফিরেছে আনার লক্ষ্যে কার্যক্রম শুরু করে আলিফ গ্রুপ। পুরাতন মেশিন সংস্কারের পাশাপাশি কিছু নতুন মেশিন স্থাপনের মাধ্যমে এখন কোম্পানিটির পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরু হলো।
পরীক্ষামূলক উৎপাদনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিএসইসির চেয়ারম্যান বলেন, আমাদের দেশের সব থেকে বড় সমস্যা কর্মসংস্থান। ব্যাংকের দুই'শ কোটি টাকা লোনসহ হঠাৎ করে একটি কোম্পানি বন্ধ হয়ে গেলে ব্যাংক বিপদে পড়ে এবং আমাদের সাধারণ বিনিয়োগকারীরাও বিপদে পড়েন। আর দুই-তিন হাজার লোক বেকার হয়ে যায়। এখন ওনারা (আলিফ গ্রুপ) দায়িত্ব নিয়েছেন আশা করা যায় আবার নতুন করে কাজের উদ্যমে কর্মসংস্থান হবে। এক্সপোর্ট হবে। তিনি বলেন, আমাদের গার্মেন্টস সেক্টরের গ্রোথ অনেক হাই। এখানে ক্যাপাসিটি বাড়ানোটা খুবই দরকার। এখানে ওনাদের উৎপাদনের মাধ্যমে নতুন যে ডিমান্ড সৃষ্টি হচ্ছে তা হয় তো ফুলফিল হবে। ব্যাংকও তাদের আটকে যাওয়া অর্থ ফেরত পাবেন। ওনারা (আলিফ গ্রুপ) এখন ব্যাংকের আটকে যাওয়া ফান্ড গ্রাজুয়ালি শোষ করে রিলিজ করবেন। বিনিয়োগকারী যারা বিনিয়োগ করে আটকে গিয়েছিলেন তারাও সুবিধা পাবেন।
যারা বিশাল প্রজেক্টর দিয়ে পুঁজিবাজার থেকে টাকা তুলে নিলো এবং ব্যাংকের লোন নিয়ে সটকে পড়ল, সেই সঙ্গে বিনিয়োগকারীদের ক্ষতির মধ্যে ফেললো তাদের বিরুদ্ধে কি ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বা বিষয়টি তদন্ত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে কি? সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে এমন একটি প্রশ্ন করা হয়।
এর উত্তরে বিএসইসির চেয়ারম্যান বলেন, আমরা দায়িত্ব নেয়ার পর একটা কোম্পানিও বন্ধ হয়নি। তাছাড়া আগে বিএসইসিতে কোনো তদন্ত বিভাগ ছিলো না। আমরা তদন্ত বিভাগ করেছি। এখন ফৌজদারি মামলা দায়ের করার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে একটি ফৌজদারি মামলা দায়ের করা হয়েছে। আগে এটা ছিলো না।
তিনি বলেন, আগে একদিনে ৬৫টি কোম্পানি ওটিসিতে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছিলো। সেগুলোকে এখন আমরা দেখছি অ্যাসেট নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, সেগুলো একটা একটা করে আমরা করছি এবং ভালো ফলাফল পাচ্ছি। খুব ইন্টারেস্টিং বিষয় দুই- চারটা কোম্পানি ইতিমধ্যে উৎপাদনে চলে গেছে।আমার হিসেবে আমরা যদি ৫০-৬০টা কোম্পানি চালু করতে পারি ২০-৩০ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হবে।
তিনি আরও বলেন, এর জন্য নতুন করে জয়ী কেনা, জায়গা কেনা, ফ্যাক্টরি করা এগুলোর কিছু করতে হবে না। শুধু তারা যে কাজগুলো করছেন সেগুলো নতুন করে সার্ভিসিং করে ঠিকঠাক করা, কোথাও কোথাও হয় তো নতুন মেশিন স্থাপন করছেন। সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইল পুনরুজ্জীবিত করতে কি পরিমান অর্থ বিনিয়োগ করা হচ্ছে এবং কবে নাগাদ পরিপূর্ণ উৎপাদন শুরু হবে? এমন প্রশ্নের উত্তরে আলিফ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. আজিমুল ইসলাম বলেন, আমরা ৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগের পরিকল্পনা করেছিলাম। এখন মনে হচ্ছে আরও বেশি লাগবে। আর আমরা চেষ্টা করছি যতদ্রুত সম্ভব পরিপূর্ণ উৎপাদন শুরু করার। পরীক্ষামূলক উৎপাদন শেষে শিগগিরই পরিপূর্ণ উৎপাদন শুরু করতে পারবো বলে আমরা আশাবাদী।
সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইল ফিরে দেখা-
২০০১ সালে মাত্র পাঁচ লাখ টাকা মূলধনের কোম্পানি ছিল সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইল। এরপর ২০১৩ সালের ২৫ নভেম্বরে ৯ লাখ ৯২ হাজার নতুন শেয়ার ইস্যু ও প্রাক-আইপিও প্লেসমেন্টের মাধ্যমে মূলধন বাড়ানো হয় ৯ কোটি ৯২ লাখ টাকা। মাত্র এক মাসের ব্যবধানে একই বছরের ৩০ ডিসেম্বর ফের নতুন শেয়ার ছেড়ে ১২০ কোটি টাকার বেশি মূলধন বাড়িয়ে বিএসইসির কাছে আইপিও আবেদন জমা দেয়া হয়।
অর্থাৎ আইপিও আবেদনের আগের দুই মাসে পাঁচ লাখ টাকার কোম্পানিটি হয়ে যায় ১৩০ কোটি টাকা মূলধনের কোম্পানি। আইপিওর ৪৫ কোটি টাকা যোগ হওয়ার পর সেটি হয়ে যায় ১৭৫ কোটি টাকা মূলধনের কোম্পানি। তালিকাভুক্তির পর তিন বছরে কোম্পানিটি ১১, ১২ এবং ১০ শতাংশ বোনাস শেয়ার লভ্যাংশ দেয়। এতে কোম্পানির মূলধন বেড়ে দাঁড়ায় ২৩৯ কোটি ৩১ লাখ টাকা।
একদিকে বোনাস শেয়ার লভ্যাংশ দিয়ে শেয়ার বাড়ায় কোম্পানিটি, অন্যদিকে গোপনে শেয়ার বিক্রি করে পুঁজিবাজার থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা তুলে নেয় সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইলের উদ্যোক্তা পরিচালকরা।
আইন লঙ্ঘন করে কোনো ঘোষণা ছাড়া বিপুল শেয়ার বিক্রি করায় ২০২০ সালের জুলাইয়ে কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক রুখসানা মোর্শেদ, পরিচালক শারমিন আকতার এবং প্রাতিষ্ঠানিক পরিচালক বাংলাদেশ শু ইন্ডাস্ট্রিজকে ১৪ কোটি টাকা জরিমানা করে বিএসইসি।
আলিফ গ্রুপকে যে সব শর্ত দেয়া হয়-
>> নতুন শেয়ার ইস্যু ও বন্ডের মাধ্যমে মূলধন বৃদ্ধিতে আসন্ন নতুন ম্যানেজমেন্টকে প্রযোজ্য সকল সিকিউরিটিজ আইন পরিপালন করতে হবে।
>> সংশ্লিষ্ট আইনের বিধি-বিধান পরিপালন করে আলিফ গ্রুপকে তাদের প্রস্তাবিত অধিগ্রহণ কার্যক্রম নিষ্পত্তি করতে হবে।
>> সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইলকে উৎপাদনে ফেরাতে আলিফ গ্রুপ অবিলম্বে কাজ শুরু করবে। এ জন্য গ্যাস লাইনসহ অন্যান্য সকল ইটিলিটিজের সমস্যা কাটিয়ে তুলবে।
>> আলিফ গ্রুপকে সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইলের ব্যাংকের দায় মেটাতে হবে।
>> আলিফ গ্রুপের শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ ও আলিফ ম্যানুফ্যাকচারিংকে সিকিউরিটিজ আইন মেনে ঝুলে থাকা সব এজিএম সম্পন্ন এবং আর্থিক প্রতিবেদনে দাখিল নিয়মিত করতে হবে।
>> শেয়ার মানি ডিপোজিটের বা সংগৃহীত অর্থ পৃথক ব্যাংক হিসাবে রাখতে হবে। যা দিয়ে শুধুমাত্র ব্যাংকের দায় মেটানো ও উৎপাদন চালুর কাজে ব্যবহার করা যাবে।
>> সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইলের উৎপাদন শুরু করতে আলিফ গ্রুপ সকল উদ্যোগ এবং দায় নেবে।

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

SMS Alert

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর