thereport24.com
ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল 24, ৭ বৈশাখ ১৪৩১,  ১১ শাওয়াল 1445

কয়েক দফা সময় বাড়িয়েও  হজযাত্রী পাওয়া যাচ্ছে না

২০২৩ মার্চ ০৫ ১১:৪৯:৩৩
কয়েক দফা সময় বাড়িয়েও  হজযাত্রী পাওয়া যাচ্ছে না

দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক:কয়েক দফা নিবন্ধনের সময় বাড়িয়েও হজযাত্রী পাওয়া যাচ্ছে না। শুক্রবার পর্যন্ত নিবন্ধন করেছে সরকারি ব্যবস্থাপনায় প্রায় ৮ হাজার ২৪ জন এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় প্রায় ৩৫ হাজার ৮৯৫ জন। কোটার হিসাবে এখনও বাকি ৮৩ হাজার ২৭৯ জন। দেশে হজের প্রাক-নিবন্ধনকারী প্রায় ২৩ লাখ। এখন ক্রমানুযায়ী ৮ লাখ প্রাক-নিবন্ধনকারীকে নিবন্ধনের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। সবাইকে নিবন্ধনের সুযোগ দেওয়া এবং আরও সময় বাড়ালেও অর্ধেক হজযাত্রী পাওয়ারও সম্ভাবনা কম। এতে হজের কোটা পূরণ না হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। চলতি বছরে খরচ বেড়ে যাওয়ায় এমনটা হচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সূত্র অনুযায়ী করোনা মহামারির পর এবারই প্রথম বাংলাদেশ পূর্ণ কোটায় হজযাত্রী পাঠানোর সুযোগ পেয়েছে। এবার বাংলাদেশ থেকে ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজে যেতে পারবেন। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ১৫ হাজার আর বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ১ লাখ ১২ হাজার ১৯৮ জন হজে যাওয়ার সুযোগ পাবেন। কিন্তু খরচ অতিমাত্রায় বেড়ে যাওয়ায় হজে যেতে ইচ্ছুকরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। ফলে প্রতি বছর যেখানে নিবন্ধনের জন্য মানুষ অতিরিক্ত টাকা খরচ করে থাকেন, সেখানে এবার বারবার সময় বাড়িয়েও হজযাত্রী মিলছে না।
গত ১ ফেব্রুয়ারি জনপ্রতি ৬ লাখ ৮৩ হাজার ১৮ টাকার হজ প্যাকেজ ঘোষণা করে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়। এর এক দিন পর ২ ফেব্রুয়ারি সরকারি প্যাকেজ থেকে ১০ হাজার টাকা কমে ৬ লাখ ৭২ হাজার ৬১৮ টাকার প্যাকেজ ঘোষণা করে হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব)। সরকারি-বেসরকারি উভয় প্যাকেজেই গত বছরের চেয়ে খরচ বেড়েছে প্রায় দেড় লাখ টাকা। তবে কুরবানি, খাবার ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক খরচ যোগ করার পর হজ প্যাকেজের প্রকৃত খরচ দাঁড়াবে ৮ লাখ থেকে সাড়ে ৮ লাখ টাকায়। ২০২২ সালে হজের সর্বনিম্ন প্যাকেজ ছিল ৫ লাখ ২২ হাজার ৭৪৪ টাকা।
প্যাকেজ ঘোষণার পর গত ৫ ফেব্রুয়ারি প্রাক-নিবন্ধিতদের মধ্য থেকে হজে যেতে ইচ্ছুকদের নিবন্ধন শেষ করতে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়। সেখানে বলা হয়, সরকারি ও বেসরকারি উভয় ব্যবস্থাপনায় ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৩ ফেব্রুয়ারির মধ্যে নিবন্ধন শেষ করতে হবে। এ সময়ের মধ্যে আশানুরূপ নিবন্ধন না করায় ২২ ফেব্রুয়ারি রাত থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৫ দিন সময় বাড়িয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়। সময় শেষে মাত্র ২০ শতাংশ হজযাত্রী নিবন্ধন করায় আবারও সময় বাড়িয়ে ৭ মার্চ পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়।
হজে যাওয়ার জন্য ২০২৩ সালের ১১ জানুয়ারি থেকে শুক্রবার পর্যন্ত বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় প্রাক-নিবন্ধন করছেন ২২ লাখ ২৬ হাজার ৯৭৭ জন। আর সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজে যাওয়ার জন্য প্রাক-নিবন্ধন করেছেন ৭ হাজার ৬৬৭ জন। প্রাক-নিবন্ধনের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিবন্ধনের সুযোগ দেয় মন্ত্রণালয়। দুবার সময় বাড়িয়েও কাক্সিক্ষত হজযাত্রী না পাওয়ায় আগামী ৭ মার্চ পর্যন্ত ৮ লাখ পর্যন্ত প্রাক-নিবন্ধনকারীকে নিবন্ধনের সুযোগ দেওয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এমনিতেই মানুষের হাতে টাকা নেই। প্রতিটি জিনিসের দাম আকাশচুম্বী। এর মধ্যে বেড়েছে হজের খরচ। এ জন্য অনেকের ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও এবার হজে যেতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন। মন্ত্রণালয় ধাপে ধাপে বাড়িয়ে ৮ লাখ পর্যন্ত প্রাক-নিবন্ধনকারীদের নিবন্ধন করার সুযোগ দিয়েছে। এরপরও সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। এ অবস্থায় ৫০ শতাংশ হজযাত্রী পাওয়া যাবে কি না তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। প্রতিবেশী দেশগুলোতে হজের খরচ অনেক কম। দেশেও খরচ কমালে যাত্রী বাড়বে।
পাকিস্তানে আনুমানিক হজ প্যাকেজ হবে প্রায় ১০ লাখ পাকিস্তানি রুপি, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৪ লাখ টাকা। ভারতের সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, এ বছর প্রত্যেক হজযাত্রীর জন্য ১ লাখ রুপি ভর্তুকি দেওয়া হবে। সে অনুসারে ভারতীয়দের হজ প্যাকেজ হবে ৩ লাখ রুপি, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৪ লাখ টাকার কম। ভারত ও পাকিস্তানের উড়োজাহাজ ভাড়া ১ লাখ থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকার বেশি নয় বলে জানিয়েছে এটিএবি। এ ছাড়া হজে যেতে মালয়েশিয়ায় সর্বনিম্ন ২ লাখ ১৮ হাজার ৭৫৪ টাকা ও সর্বোচ্চ ২ লাখ ৫৮ হাজার ৬০০ টাকা দিতে হয়। গত বছরের ২২ এপ্রিল দেশটির সরকার হজে যাওয়ার এ খরচ ঘোষণা করে।

হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব) এবং অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ (এটিএবি) নেতারা বলছেন, প্রাক-নিবন্ধনকারী অনেকেই এবার হজের যাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু এখন তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা অধিক খরচের কথা উল্লেখ করে অপারগতা প্রকাশ করছেন। হজ প্যাকেজের মূল্যবৃদ্ধির অন্যতম প্রধান কারণ হলো অস্বাভাবিক বিমান ভাড়া। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স কোনো যৌক্তিক কারণ ছাড়াই অতিরিক্ত মুনাফা করতে ৩০ শতাংশ ভাড়া বাড়িয়েছে।
এটিএবির তথ্য অনুযায়ী গত ৬ বছরে বিমান প্রায় ৭০ শতাংশ ভাড়া বাড়িয়েছে। স্বাভাবিক সময়ে বিভিন্ন এয়ারলাইন্সে ঢাকা থেকে সৌদি আরবে যাওয়া ও আসার ভাড়া ৮০ হাজার টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১ লাখ টাকা। গত বছরের চেয়ে এ বছর বিমান ভাড়া বেড়েছে প্রায় ৬০ হাজার টাকা।
হজের বিমান ভাড়া কমিয়ে পুনর্নির্ধারণ করতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানিয়েছে অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ (আটাব)। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি আটাব বিমান ভাড়াসহ প্যাকেজ মূল্য পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে লিখিত আবেদন করে।
হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন জানান, এ বছর বিমান ভাড়া, মক্কা-মদিনার বাড়ি ভাড়া ও পরিষেবা খরচ বেড়েছে। এর সঙ্গে ডলার ও সৌদি মুদ্রা রিয়ালের বিনিময় হার বৃদ্ধি পাওয়ায় সার্বিকভাবে হজ পালনের খরচ বেড়েছে।
আটাবের মহাসচিব আবদুস সালাম আরেফ সময়ের আলোকে বলেন, হজের খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় নিবন্ধনের জন্য আশানুরূপ সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। খরচ বেড়ে যাওয়ায় অনেকেই এ বছর হজে যেতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন। নতুনরাও আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। বারবার সময় বাড়িয়ে ২৩ লাখের মধ্যে ৮ লাখ প্রাক-নিবন্ধনকারীকে নিবন্ধন করার কথা বলা হয়েছে। সবাইকে নিবন্ধনের ‍সুযোগ দিলেও এবার হজের কোটার ৫০ ভাগ পূরণের সম্ভাবনা দেখছেন না তিনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে হজ অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. মতিউল ইসলাম সময়ের আলোকে জানান, অনেকের হয়তো সমস্যা আছে, সে জন্য নিবন্ধন করতে সময় নিচ্ছেন। প্রয়োজনে সময় আরও বাড়ানো হবে। তবে কোটা পূরণ হয়ে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। তিনি বলেন, চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ২১ বা ২২ মে হজ ফ্লাইট শুরু হবে। প্রথম দিনই একাধিক ফ্লাইট পরিচালনা করার টার্গেট রয়েছে।
হজযাত্রীদের খরচ সর্বোচ্চ ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা নির্ধারণের দাবি জানিয়ে ইসলামি মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম পরিষদের শহিদুল ইসলাম কবির বলেন, এ বছর সরকার যেভাবে হজযাত্রীদের খরচ নির্ধারণ করেছে তাতে ধর্মপ্রাণ মানুষের ইচ্ছা ও প্রাক-নিবন্ধন করা থাকলেও তাদের পক্ষে হজে যাওয়া অসম্ভব হয়ে পড়েছে। প্রাক-নিবন্ধন করেও অতিরিক্ত খরচ নির্ধারণ করার কারণে হজে যেতে পারবেন না বলে ইচ্ছুকরা এখন মনোকষ্টে ভুগছেন।
তিনি বলেন, আমাদের পাশ্ববর্তী দেশ ভারতের হজযাত্রীদের খরচ যেখানে ৪ লাখ টাকা আর ডলারের উচ্চমূল্যে সংকটে থাকার পরও পাকিস্তানের হজযাত্রীদের খরচ ৪ লাখ ১০ হাজার টাকা হলেও বাংলাদেশের হজযাত্রীদের খরচ ৬ লাখ ৮৩ হাজার টাকা মেনে নেওয়া যায় না। বাংলাদেশে হজের খরচ সর্বোচ্চ ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা নির্ধারণের দাবি জানান তিনি।

পাঠকের মতামত:

SMS Alert

ধর্ম এর সর্বশেষ খবর

ধর্ম - এর সব খবর