thereport24.com
ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল 24, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১,  ১৭ শাওয়াল 1445

এক নজরে বাজেটে যা থাকতে পারে

২০২৩ জুন ০১ ১২:১২:২৮
এক নজরে বাজেটে যা থাকতে পারে

দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক:২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব বৃহস্পতিবার (১ জুন) বেলা তিনটায় পেশ করবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। দেশের ইতিহাসের ৫২তম বাজেটের আকার হতে পারে ৭ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা। এবারের বাজেট বক্তব্যের শিরোনাম- ‘উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় দেড় দশক পেরিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশের অভিমুখে’। এতে স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট অর্থনীতি, স্মার্ট সরকার ও স্মার্ট সমাজ করার কথা তুলে ধরবেন তিনি।

এবারের বাজেটের অন্যতম আলোচিত বিষয় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত পূরণ। গত বছর বাংলাদেশ সামষ্টিক অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় আইএমএফের কাছে ঋণের আবেদন করলে এ বছরের শুরুর দিকে তারা ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ অনুমোদন করে। কিন্তু আইএমএফ সাড়ে তিন বছরের জন্য মোট ৩৮টি শর্ত দিয়েছে, যার অর্ধেকের কম আগামী অর্থবছরের মধ্যে বাস্তবায়ন করতে হবে। এর মধ্যে আইএমএফের চাওয়ার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে রাজস্ব আয় বৃদ্ধি ও প্রয়োজনীয় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংরক্ষণ।

এ ছাড়া রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে পাঁচ লাখ কোটি টাকা এবারের বাজেটে। এর মধ্যে এনবিআরের লক্ষ্যমাত্রা ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। ঘাটতি আড়াই লাখ কোটি টাকার বেশি। মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপির) প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৭ দশমিক ৫ শতাংশ আর মূল্যস্ফীতির বার্ষিক হারের লক্ষ্য থাকছে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ।

একনজরে দেখে নেওয়া যাক, আগামী অর্থবছরের বাজেটে আরও যা যা থাকতে পারে—

করমুক্ত আয়সীমা বৃদ্ধি

২০২২-২৩ অর্থবছর থেকে ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদের করমুক্ত আয়সীমা কিছুটা বাড়তে পারে। বর্তমানে বার্ষিক আয়ের প্রথম তিন লাখ টাকা পর্যন্ত কর দিতে হয় না। এটি বাড়িয়ে ৩ লাখ ২০ হাজার টাকা থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা পর্যন্ত করা হতে পারে। উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের প্রকৃত আয় কমছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ৮ দশমিক ৯ শতাংশ। এতে মানুষের প্রকৃত আয় কমেছে। মানুষকে স্বস্তি দিতে তাই এবার করমুক্ত আয়সীমা কিছুটা বাড়ানো হতে পারে।

প্লট, ফ্ল্যাট, গাড়িতে খরচ বৃদ্ধি

ফ্ল্যাট-প্লট নিবন্ধন করার সময় ক্রেতাকে নানান ধরনের কর দিতে হয়। যেমন- গেইন ট্যাক্স, ভ্যাট, স্ট্যাম্প মাশুল, নিবন্ধন মাশুল, স্থানীয় সরকার কর। ১০ থেকে সাড়ে ১২ শতাংশ কর দিতে হয়। এই করহার বাড়ানো হতে পারে। সব মিলিয়ে কর ভার হতে পারে ১৫ শতাংশ। যেমন- এক কোটি টাকার ফ্ল্যাট কিনলে আড়াই থেকে পাঁচ লাখ টাকা খরচ বাড়তে পারে।

গাড়িওয়ালাদের জন্য আগামী বাজেট দুঃসংবাদ বয়ে আনতে পারে। কেউ যদি দ্বিতীয় গাড়ি কেনেন, তাহলে কার্বন করের মতো বাড়তি কর দিতে হতে পারে। গাড়ির সিসিভেদে বাড়তি করের পরিমাণ হতে পারে ২০ হাজার থেকে ৩ লাখ টাকা। গাড়ির ফিটনেস সনদ নেওয়ার সময় এই কর দিতে হয়।

ভ্রমণ কর বৃদ্ধি

আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে জল, স্থল ও আকাশ— তিন পথেই ভ্রমণ কর বৃদ্ধির প্রস্তাব দিচ্ছে সরকার। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ৫০ শতাংশ হারে বাড়বে ভ্রমণ কর। প্রস্তাব অনুমোদিত হলে মানুষের ভ্রমণব্যয় বাড়বে।

সর্বজনীন পেনশনের ঘোষণা

বর্তমান মেয়াদের শেষ বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল পরীক্ষামূলকভাবে সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি চালুর ঘোষণা দেবেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, প্রবাসী, বেসরকারি প্রাতিষ্ঠানিক চাকরিজীবী, শ্রমিকশ্রেণি, অপ্রাতিষ্ঠানিক ব্যক্তি, সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিভুক্ত জনগোষ্ঠী ও শিক্ষার্থী— তাদের জন্য আলাদা ছয় ধরনের কর্মসূচি করার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে অর্থ বিভাগ।

সামাজিক ভাতা বৃদ্ধি

সামাজিক সুরক্ষা খাতে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে বরাদ্দ কিছুটা বাড়ছে। সঙ্গে কিছু কিছু কর্মসূচির ভাতাও বাড়ছে। কোথাও বাড়ছে জনপ্রতি ৫০ টাকা, কোথাও-বা ১০০ টাকা। এটুকু ভাতা সরকার বাড়াচ্ছে আবার সাত বছর পর। ভাতা কিছুটা বৃদ্ধির পাশাপাশি উপকারভোগীর সংখ্যা বাড়বে। ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে সামাজিক সুরক্ষা খাতে বরাদ্দ ছিল ১ লাখ ১৩ হাজার ৫৭৬ কোটি টাকা। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এবার এ খাতে বরাদ্দ হতে পারে ১ লাখ ২৬ হাজার ২০০ কোটি টাকা।

খাদ্যনিরাপত্তায় বরাদ্দ বাড়বে

খাদ্যনিরাপত্তা ও কর্মসৃজন কর্মসূচির আওতায় টিআর, জিআর, ভিডব্লিউবি, ওএমএস, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি, ভিজিএফ ইত্যাদি ১১টি শ্রেণিতে ১৫ হাজার ৪০৮ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে চলতি অর্থবছরে। আগামী অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ দুই হাজার কোটি টাকা বাড়তে পারে। এসব কর্মসূচির মাধ্যমে সরকার সাধারণ মানুষের কাছে কম দামে চাল ও আটা বিক্রি করে। আবার কাজের সুযোগ তৈরি করতে গ্রামে বিভিন্ন প্রকল্প নেওয়া হয়।

বাজেটে শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির জন্য বরাদ্দ ১০০ কোটি টাকা বাড়তে পারে। বর্তমানে এ খাতে বরাদ্দ ৪ হাজার ৪১৭ কোটি টাকা। তবে শিক্ষাবৃত্তির হার বাড়বে না।

দাম বাড়তে পারে, কমতে পারে

দেশীয় কোম্পানির মুঠোফোন উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট বসানোর প্রস্তাব করা হতে পারে। যেসব প্রতিষ্ঠান যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ নিজেরাই বানাবে এবং মুঠোফোন উৎপাদন করবে, সেসব কোম্পানির ওপর ৩ শতাংশ হারে ভ্যাট বসতে পারে। কমপক্ষে দুটি যন্ত্রাংশ নিজেরা বানিয়ে মুঠোফোন বানালে বিদ্যমান ভ্যাট ৩ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫ শতাংশ এবং যারা সব যন্ত্রাংশ আমদানি করে শুধু দেশে সংযোজন করে, সেসব প্রতিষ্ঠানের ওপর সাড়ে ৭ শতাংশ ভ্যাট বসতে পারে। এখন ৫ শতাংশ হারে ভ্যাট বসে। ফলে স্থানীয় বাজারে স্মার্টফোনের দাম বাড়তে পারে।

অন্যদিকে কিছু পণ্যের উৎপাদন পর্যায়ে ভ্যাট বসিয়ে এবং ভ্যাট বাড়িয়ে দেওয়া হতে পারে। যেমন কলমের ওপর ৫ শতাংশ ভ্যাট বসানোর প্রস্তাব করা হতে পারে। এ ছাড়া টিস্যু, ন্যাপকিন, প্লাস্টিকের টেবিলওয়্যার, কিচেনওয়্যারসহ গৃহস্থালির পণ্যের উৎপাদন পর্যায়ে ৫ শতাংশ ভ্যাট বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হতে পারে। আমদানি করা ফ্যানে সম্পূরক শুল্কহার বাড়তে পারে।

এ ছাড়া সব ধরনের সিগারেটের মূল্যস্তর ও শুল্ক— দুটি বাড়ানোর প্রস্তাব করা হতে পারে। অন্যদিকে যেসব সিগারেট কোম্পানি টার্নওভার কর দেয়, তাদের করহার ১ শতাংশ বাড়িয়ে ৩ শতাংশ করা হতে পারে।

স্থানীয় শিল্প সুরক্ষায় বাইসাইকেলের যন্ত্রাংশ আমদানিতে ১৫ শতাংশ বসতে পারে। এ ছাড়া বিদেশ থেকে সফটওয়্যার আমদানি করলেও ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক বসানো হতে পারে। এর ফলে স্থানীয় বাজারে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।

পাঠকের মতামত:

SMS Alert

অর্থ ও বাণিজ্য এর সর্বশেষ খবর

অর্থ ও বাণিজ্য - এর সব খবর