thereport24.com
ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল 24, ৫ বৈশাখ ১৪৩১,  ৯ শাওয়াল 1445

আদেশের আগেই স্থগিতের নোটিশ

ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে জানাতে বলেছেন আদালত

২০১৪ এপ্রিল ০২ ২০:০০:৩১
ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে জানাতে বলেছেন আদালত

দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার নবনির্বাচিত চেয়ারম্যানের শপথ স্থগিতের বিষয়ে হাইকোর্ট থেকে আদেশ দেওয়ার আগেই আইনজীবীর প্যাডে স্থগিতের নোটিশ পাঠানোয় শপথগ্রহণ স্থগিত করা হয়।

বিষয়টি আদালতের নজরে আনলে তা তদন্ত করে কী ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়, তা জানাতে বলেন হাইকোর্টের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী।

সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ থেকে আদেশ হয়েছে বলে রানা কাওসার নামে এক মহিলা আইনজীবী তার প্যাডে এ সংক্রান্ত ‘ভুয়া’ আদেশ লিখে কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার নবনির্বাচিত চেয়ারম্যানের শপথ স্থগিত করান। তবে ওই আইনজীবী বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।

ওই আইনজীবী প্রেরিত স্থগিত নোটিশে বলা হয়েছে, ‘সুপ্রিমকোর্টের রায়ের পূর্ণ অনুলিপি প্রকাশের আগে আইনজীবীর লিখিত সনদ রায়ের সমকক্ষ বলে বিবেচিত হয়।’

রানা কাওসারের ওই নোটিশের পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার আদালত তাকে তলব করেন। দুপুরের বিরতির পর বিচারপতি সামলা মাসুদ চৌধুরী ও বিচারপতি মো. হাবিবুল গণির সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে হাজির হয়ে তিনি ওই সনদের দায়িত্ব অস্বীকার করেন।

হাইকোর্টের অন্য কোনো বেঞ্চ থেকেও এ ধরনের কোনো আদেশ হয়নি বলে আদালতকে জানান রিটকারীর আইনজীবী নুরুল ইসলাম সুজন। এ সময় সুপ্রিমকোর্টের সিনিয়র আইনজীবী আব্দুল বাসেত মজুমদার উপস্থিত ছিলেন। তবে আদেশের পরে সাবেক আইনমন্ত্রী আব্দুল মতিন খসরু এমপি আদালতে উপস্থিত হন। আইনজীবী রানা কাওসার অ্যাডভোকেট আব্দুল মতিন খসরুর জুনিয়র।

রানা কাওসারের প্যাডে পাঠানো সনদে মঙ্গলবার কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলা থেকে নবনির্বাচিত বিএনপি সমর্থিত উপজেলা চেয়ারম্যান এটিএম মিজানুর রহমানের শপথ স্থগিত রাখা হয়।

ওই আইনজীবী প্রেরিত স্থগিত নোটিশে বলা হয়েছে, ‘হাইকোর্টের বিচারকরা আদালতে মৌখিক আদেশ/রায় দেন। লিখিত আদেশ বের না হওয়া পর্যন্ত আইনজীবীদের সনদই রায়ের অনুলিপির সমান হিসেবে বিবেচিত হয়।’

উল্লেখ্য, উচ্চ আদালতের একটি রায়ের ফলেই আইনজীবী সনদ এই ‌মর্যাদা পেয়েছে। কিন্তু আইনজীবী রানা কায়সারের নিজস্ব প্যাডে এই আদেশের কপি তাহলে কে দিল, সবার মনে এখন এ প্রশ্ন!

আদালতের শুনানির সময় ওই আদালতের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের আদালতে রিটটি শুনানি জন্য আছে। এই অবস্থায় আদেশ হয়ে গেছে বলে, সনদ চলে গেছে। এটা মারাত্মক অভিযোগ। বিষয়টি সুপ্রিমকোর্টের সকল আইনজীবীর সম্মানের প্রশ্ন। যদি রানা কাওসার এটি করে থাকেন, তাহলে তিনি মারাত্মক ভুল করেছেন। আবার যদি তার নামে অন্য কেউ দিয়ে থাকেন, তাহলে বিষয়টি আরও মারাত্মক।’

আদালতে মিজানুর রহমানের পক্ষের অপর আইনজীবী ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, এ বিষয়ে মোট তিনটি রিট হয়েছে। প্রথম দুটিতেও তিনি (রানা কাওসার) সনদ দিয়েছেন। একই ধরনের প্যাডে তৃতীয় সনদটি দেওয়া হয়েছে।

খোকন আদালতের উদ্দেশে বলেন, ‘এ বিষয়ে আমরা আপনাদের নিকট আদেশ চাই।’

তিনি বলেন, ‘যদি প্রতারণার সঙ্গে ওই আইনজীবী জড়িত থাকার প্রমাণ মেলে, তাহলে তার বিরুদ্ধে আমরা বার কাউন্সিলের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নিতে পারি।’

আদালত এ সময় বলেন, ‘ঠিক আছে, আপনারা তদন্ত করে কী ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন তা জানাবেন।’

এ বিষয়ে আদালতে রানা কাওসার বলেন, ‘আগের দুটি সনদে আমি বলেছি, রিট হয়েছে। হাইকোর্ট খোলার পরে শুনানি করব। কিন্তু আদেশ হওয়ার আগে আদেশ হয়েছে বলে আমি বলি নাই।’

তখন আদালত ব্যারিস্টার মাহাবুব উদ্দিন খোকনকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘ঠিক আছে, আপনারা বার কাউন্সিলের পক্ষ থেকে কী করা যায় দেখেন। আমাদেরও জানান।’

পরে আদালত বুড়িচং উপজেলার ৬ কেন্দ্রের পুনর্ভোটগ্রহণ করার জন্য পরাজিত প্রার্থী সাজ্জাদ হোসেনের দায়ের করা রিটটি খারিজ করে দেন।

আদেশের পর ওই রিটের বিবাদীপক্ষের আইনজীবী ও বার কাউন্সিলের সদস্য মাহবুব উদ্দিন খোকন জানান, ওই আইনজীবীর বিরুদ্ধে নবনির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান অভিযোগ করলে আমরা বার কাউন্সিল বিষয়টি তদন্ত করে মূল ঘটনা বের করব এবং ব্যবস্থা নিতে পারব।

এর আগে, গত ২৩ মার্চ বুড়িচং উপজেলা নির্বাচন হয়। এতে বেসরকারিভাবে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী মিজানুর রহমান চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ২০০৯ সালের উপজেলা নির্বাচনে জয়ী আওয়ামী লীগ সমর্থিত উপজেলা চেয়ারম্যান সাজ্জাদ হোসেন নির্বাচনে পরাজিত হন। তিনি ছয় কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত রয়েছে দাবি করে নির্বাচন কমিশনে আবেদন করেন। কিন্তু মিজানুর রহমানকে বিজয়ী ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করা হয়। পরে সাজ্জাদ হোসেন হাইকোর্টে রিট করেন।

এর আগে, বুধবার সকালে বিষয়টি আদালতে উপস্থাপন করেন আইনজীবী ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন। আবেদনপত্র হিসেবে ওই আদালতের কার্যতালিকায় আসা একটি রিটে বিবাদীপক্ষের আইনজীবী হিসেবে ওকালতনামা দিতে গিয়ে তিনি বিষয়টি আদালতের নজরে আনেন।

এ সময় খোকন বুধবার একটি জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত ‘হঠাৎ ফ্যাক্স, বিএনপি সমর্থিত চেয়ারম্যানের শপথ বাতিল’ শিরোনামের একটি প্রতিবেদন আদালতের নজরে আনেন।

আদালতে মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, ‘আজ রিটটি এই আদালতে শুনানির জন্য আছে। কিন্তু গতকালই ওই রিটে আদালত আদেশ দিয়ে দিয়েছে বলে একজন আইনজীবী তার প্যাডে ভুয়া আদেশ পাঠান।’

পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রানা কাওসার নামে ওই আইনজীবীর সনদের কারণে মঙ্গলবার বুড়িচং উপজেলা চেয়ারম্যানের শপথ বন্ধ হয়ে যায়। সাজ্জাদ হোসেনের রিটে আদালত বিজয়ী ঘোষিত প্রার্থীকে শপথ না দিতে নির্দেশ দিয়েছে বলে সনদে উল্লেখ করা হয়।

(দ্য রিপোর্ট/এসএ/এমএআর/এমএআর/সা/এপ্রিল ০২, ২০১৪

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর