thereport24.com
ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল 24, ১২ বৈশাখ ১৪৩১,  ১৭ শাওয়াল 1445

সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনায় মঙ্গল শোভাযাত্রা

২০১৪ এপ্রিল ১৪ ০৯:১৮:২৩ ২০১৪ এপ্রিল ১৪ ১২:১০:০০
সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনায় মঙ্গল শোভাযাত্রা

দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : ‘জাগ্রত করো উদ্যত করো নির্ভয় করো হে’ স্লোগানের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হল ১৪২১ বাংলা নববর্ষের মঙ্গল শোভাযাত্রা। সোমবার সকাল ৯টা ১৭ মিনিটে শোভাযাত্রাটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ থেকে শুরু হয়।

শোভাযাত্রাটি শাহবাগ ও রূপসী বাংলা মোড় ঘুরে টিএসসি হয়ে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আবার চারুকলা অনুষদে এসে শেষ হয়। শোভাযাত্রায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নেন।

শোভাযাত্রা উপলক্ষে সোমবার সকাল থেকেই দোয়েল চত্বর, টিএসসি, শাহবাগ ও এর আশপাশের এলাকায় মানুষ জড়ো হতে থাকেন। ৯টা বাজতেই পুরো এলাকা লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়। লাল-সাদা পোশাকে উচ্ছল নারীদের মাথায় শোভিত নানান রঙের ফুল। তরুণদের ভেপুর শব্দে আনন্দের উষ্ণতা ছড়িয়ে পড়ে পুরো এলাকায়। তপ্ত রোদে ঘামছিলেন সবাই, হাতে হাতে ছিল বর্ণিল পাখা।

সর্বজনীন এ শোভাযাত্রার নানান শিল্প-কাঠামোয় এবার প্রাধান্য পেয়েছে সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধময় বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি। সঙ্গে ছিল বাঙালির শেকড়সংলগ্ন লোকজ সংস্কৃতির নানান আবহ। এবারের শোভাযাত্রার সর্বাগ্রে ছিল সুখ-সমৃদ্ধির বার্তাবহ মা ও শিশু শীর্ষক শিল্প-কাঠামোটি। ১৭ ফুট উচ্চতার এই শিল্পকর্মে মায়ের এক হাতের বন্ধনে বুকে জড়িয়ে আছে তার শিশু আর অপর হাতে আছে একটি কলসি।

পবিত্রতা ও সরলতার প্রতীক হিসেবে উপস্থাপিত হয়েছে হরিণ শাবকের কাঠামো। সমৃদ্ধির বার্তা নিয়ে বিশাল একটি মা মাছের পাশে দেখা যায় সন্তানতুল্য দুটি ছোট মাছকে। একই রকম অর্থ নিয়ে বড় আকারের একটি বিড়ালের মুখে ঝুলে আছে চিংড়ি মাছ। লোকজ গল্প কিংবা রূপকথার আবহ নিয়ে উদ্ভাসিত হয়ে বাঘের পিঠে চড়ে বসা গাজী। গাঢ় হলুদ রংয়ের ভেতর ডোরাকাটা কালো রং দিয়ে সাজানো বাঘটি। আর গাজীর পোশাকে আছে নীল, সাদা, হলুদ ও লাল রংয়ের আবহ।

লোকজ সংস্কৃতির নির্যাস নিয়ে কাঠের ফ্রেমের উপর উপস্থাপিত হয়েছে বিশালাকারের একটি শখের হাঁড়ি। এবারের শোভাযাত্রায় সরাসরি রয়েল বেঙ্গল টাইগারের দেখা না মিললেও ঐতিহ্যের স্মারক হিসেবে দৃশ্যমান হয় বড় আকারের দুটি বাঘের মুখোশ। আবহমান গ্রাম-বাংলার রূপকল্প তুলে ধরতে শোভাযাত্রায় ছিল একটি বড় আকৃতির হাঁস। সৌন্দর্যের প্রতীক হিসেবে দেখা যায় নয়ন জুড়ানো রঙের সম্ভারে গড়া পাখা মেলা ময়ূর। এ সবের সঙ্গে লোকজ সংস্কৃতির আরেক স্মারক লক্ষ্মীপেঁচা। এ ছাড়া মুখোশের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা রাজা-রানী, উজির-নাজির, বাঘ, পেঁচা, টেপা পুতুলসহ নানা আকৃতি ও বর্ণের প্ল্যাকার্ড ছিল।

তরুণরা ধুতি ও লুঙ্গি পরে ঢোল বাজিয়ে, কেউ একতারা হাতে কেউবা হুঁকা, লাঙ্গল, কাঁচি নিয়ে গ্রাম-বাংলার কৃষক সেজে নেচে-গেয়ে মাতিয়ে রাখেন শোভাযাত্রা।

শোভাযাত্রায় নিরাপত্তা ছিল চোখে পড়ার মতো। পুলিশ, র‌্যাবের সঙ্গে ছিল সোয়াত। হেলিকপ্টারেও ছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর টহল। সাদা পোশাকে গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরাও তৎপর ছিলেন।

মোহাম্মদপুর থেকে শোভাযাত্রায় আসা ব্যবসায়ী শহিদুল আলম তুষার বলেন, এ উৎসবটিতেই কেবল ধর্ম-বর্ণের বিভেদ নেই। তাই প্রতিবছরই মঙ্গল শোভাযাত্রায় আসি।

বাড্ডা থেকে আসা সেলিম হোসেন চারুকলা অনুষদের সামনে কাঁধে শিশুপুত্রকে নিয়ে হাঁটছিলেন, সঙ্গে তার স্ত্রী। তিনি বলেন, সবার মতো আমারও সুন্দর আগামীর প্রত্যাশা। নববর্ষের অসাম্প্রদায়িক চেতনায় উজ্জীবিত করতে সন্তানকেও নিয়ে এসেছি।

বাঙালির বর্ষবরণের আনন্দ আয়োজনে মিশে আছে মঙ্গল শোভাযাত্রার নাম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে প্রতিবছরই সকালে পয়লা বৈশাখে এই মঙ্গল শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে ১৯৮৯ সাল থেকে শুরু হয়েছিল মঙ্গল শোভাযাত্রা। শুরুতে চারুকলার শোভাযাত্রাটির নাম মঙ্গল শোভাযাত্রা ছিল না। তখন এর নাম ছিল বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা। ১৯৯৬ সাল থেকে চারুকলার এই আনন্দ শোভাযাত্রা মঙ্গল শোভাযাত্রা হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।

বর্ষবরণ উপলক্ষে আনন্দ শোভাযাত্রা চারুকলায় ১৯৮৯ সালে শুরু হলেও এর ইতিহাস আরও কয়েক বছরের পুরনো। ১৯৮৫ বা ১৯৮৬ সালে চারুপীঠ নামের একটি প্রতিষ্ঠান যশোরে প্রথমবারের মতো নববর্ষ উপলক্ষে আনন্দ শোভযাত্রার আয়োজন করে। যশোরের সেই শোভাযাত্রায় ছিল পাপেট, বাঘের প্রতিকৃতি, পুরানো বাদ্যসহ আরও অনেক শিল্পকর্ম। শুরুর বছরেই যশোরে সেই শোভাযাত্রা আলোড়ন সৃষ্টি করে।

যশোরের সেই শোভাযাত্রার উদ্যোক্তাদের একজন মাহবুব জামাল শামীম মাস্টার্স ডিগ্রি নিতে পরে ঢাকার চারুকলায় চলে আসেন। পরবর্তী সময়ে যশোরের সেই শোভাযাত্রার আদলেই ঢাকার চারুকলা থেকে শুরু হয় বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা।

(দ্য রিপোর্ট/আরএমএম/এইচএসএম/এসবি/এজেড/এপ্রিল ১৪, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর