thereport24.com
ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল 24, ৫ বৈশাখ ১৪৩১,  ৯ শাওয়াল 1445

গ্রাহকের ভোগান্তি টেলিটকের অপ্রতুল নেটওয়ার্ক

২০১৩ সেপ্টেম্বর ২৩ ১২:০৯:২২
গ্রাহকের ভোগান্তি টেলিটকের অপ্রতুল নেটওয়ার্ক
শফিকুল ইসলাম লেনিন : রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় রাষ্ট্রায়ত্ত মোবাইল অপারেটর প্রতিষ্ঠান টেলিটকের নেটওয়ার্ক অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে বাণিজ্যিক এলাকা মতিঝিল, দিলকুশা, বনানী ও গুলশানের প্রায় বেশিরভাগ বহুতল ভবন প্রায়ই নেটওয়ার্কশূন্য হয়ে পড়ে। থ্রিজি সেবা দিতে অগ্রাধিকার পাওয়া এই প্রতিষ্ঠানের থ্রিজি ছাড়াও সাধারণ টুজি নেটওয়ার্কও অনেক সময় পাওয়া যায় না। মতিঝিল ও দিলকুশায় এই সমস্যা একেবারেই প্রকট হয়ে দেখা দিয়েছে। বিটিএসের ক্ষমতার চেয়ে গ্রাহক বেশি হওয়ায় প্রায়ই দেখা দেয় নেটওয়ার্ক সমস্যা। আর অহরহ ঘটে কলড্রপের ঘটনা। এলাকার বিভিন্ন ভবনে প্রবেশের পর বিচ্ছিন্ন হচ্ছে টেলিটকের নেটওয়ার্ক। এসব কারণে ওই এলাকাগুলোতে যাওয়া টেলিটক গ্রাহকরা হয়ে পড়েন যোগাযোগশূন্য।

গ্রাহকদের অভিযোগ, দিলকুশা এলাকার বেশির ভাগ ভবনে প্রবেশ করলেই টেলিটকের নেটওয়ার্ক এরর দেখায়। তখন ফোন করাও যায় না, আসেও না। কেউ ফোন করলে অপর প্রান্তে শুনতে পান, এ মুহূর্তে সংযোগ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না বা আপনার ডায়ালকৃত নম্বরটি বন্ধ আছে অথবা নেটওয়ার্ক বিজি। এরপর যদি পাওয়াও যায়, কথা বলা শেষ হওয়ার আগেই লাইন কেটে যায় বা কোনো কথাই বোঝা যায় না। আর যেসব গ্রাহক ওইসব এলাকায় বিভিন্ন ভবনে সকাল ৯টা থেকে বিকাল পর্যন্ত অফিস করেন তাদের সঙ্গে সবার টেলিযোগাযোগ ওই সময় পর্যন্ত বন্ধ থাকে। এ অবস্থায় বিরক্ত হয়ে অনেকেই অন্য অপারেটরে চলে যাচ্ছেন। দীর্ঘদিনের এ সমস্যার বিষয়ে একাধিকবার টেলিটকের কাস্টমার কেয়ারে অভিযোগ জানালেও কোনো প্রতিকার পাওয়া যায়নি। এ ব্যাপারে জানতে যোগাযোগ করা হলে টেলিটকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুজিবর রহমান বর্তমানকে বলেন, প্রতিষ্ঠানটির সেবার মান বাড়ানোর জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। মতিঝিলের দিলকুশাসহ যেসব এলাকায় নেটওয়ার্ক সমস্যার অভিযোগ উঠেছে সেইসব এলাকায় যত দ্রুত সম্ভব নেটওয়ার্ক অপটিমাইজ করা হবে। রবিবার থেকে ওই সব এলাকায় আমাদের টিম কাজ করবে। যেসব এলাকায় কারিগরি সমস্যা রয়েছে তা খুঁজে বের করবে তারা। গ্রাহকদের এ ভোগান্তি রোধে যত দ্রুত সম্ভব ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান মুজিবর রহমান। টেলিটকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, ‘মতিঝিল এলকায় আমাদের পর্যাপ্ত বিটিএস বা টাওয়ার না থাকায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। আগে যেসব বিটিএস বসানো হয়েছিল সেগুলো দিয়েই কাজ চলছে। অথচ এখন ওই এলাকায় অনেক বহুতল ভবনের গড়ে উঠেছে। পাশাপাশি গ্রাহক সংখ্যাও বাড়াচ্ছে। ফলে দেখা দিয়েছে নেটওয়ার্ক সমস্যা। দিলকুশায় একটি প্রতিষ্ঠানে কর্মকর্তা টেলিটকের একজন গ্রাহক আনোয়ারুল করিম রাজু বর্তমানকে বলেন, দেশীয় টেলিফোন ব্যবহার করার জন্য শুরু থেকেই টেলিটকের মোবাইল ব্যবহার করছি। দিলকুশার অফিসে যোগদানের পর থেকেই আমার ফোনে কেউ যোগাযোগ করতে পারছেন না, সবাই বলে ফোন বন্ধ কেন। তিনি বলেন, আমার মোবাইলে থ্রিজি সেবার জন্য টেলিটককে নির্দিষ্ট ফি দেই; এরপরও যদি টেলিফোন করতে অফিস ছেড়ে বাইরে রাস্তায় যেতে হয় তবে খুবই দুঃখজনক। এ প্রসঙ্গে টেলিটকের সিস্টেম অ্যান্ড প্লানিংয়ের মহাব্যবস্থাপক ওসমান গনি বলেন, ‘মতিঝিল, দৈনিক বাংলা এবং পল্টন এলাকায় আমাদের ৮ থেকে ১০টির মতো বিটিএস রয়েছে। এরপরও যেহেতু অভিযোগ উঠেছে সেখানে আমরা কাজ শুরু করব। যেখানে নেটওয়ার্ক সমস্যা দেখা যাবে সেখানেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব। নেটওয়ার্ক অপটিমাইজের পাশাপাশি প্রয়োজনে নতুন করে বিটিএস বসানোর ব্যবস্থা করা হবে।’ বিটিআরসির জুলাই মাসের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে মোবাইল ফোনের গ্রাহক সংখ্যা ১০ কোটি ৬৯ লাখ ৩৪ হাজার। এর মধ্যে একমাত্র সরকারি মোবাইল ফোন অপারেটর টেলিটকের গ্রাহক সংখ্যা ১৯ লাখ ১৬ হাজার। সংশ্লিষ্টদের মতে, সরকারের নানা সুবিধা পাওয়া সত্ত্বেও অপারেটরটির গ্রাহক সংখ্যা কোনোভাবেই বাড়াতে পারছে না। দেশে গত ৮ সেপ্টেম্বর তৃতীয় প্রজন্মের মোবাইল ফোন প্রযুক্তির (থ্রিজি) তরঙ্গ নিলাম অনুষ্ঠিত হলেও সরকারি এই অপারেটরটি গত ১৪ অক্টোবর থেকে পরীক্ষামূলকভাবে চালু করেছে থ্রিজি সেবা। থ্রিজি সেবায় টেলিটক সাশ্রয়ী মূল্যে ২৫৬ কেবিপিএস থেকে শুরু করে ৪ এমবিপিএস পর্যন্ত দ্রতগতির মোবাইল ইন্টারনেট সেবা দিয়েও গ্রাহক টানতে পারছে না। আর এটা হচ্ছে কেবল প্রতিষ্ঠানটির সেবার মান যুগোপযোগী না হওয়ায়। এদিকে আগামী মাসে বেসরকারি চার মোবাইল অপারেটরের স্বল্প পরিসরে থ্রিজি সেবা চালু করলে বর্তমান সেবার মানে ছিটকে পড়বে টেলিটক। তাই প্রতিষ্ঠানটির নেটওয়ার্কের দিকে মনোযোগ দেয়া জরুরি বলেও মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। দেশীয় মোবাইল অপারেটর টেলিটকের টুজি (দ্বিতীয় প্রজন্ম) ও থ্রিজির (তৃতীয় প্রজন্ম) মোবাইল নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ প্রকল্পের জন্য চীনের এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে প্রায় ২১ কোটি ১০ লাখ ডলারের চুক্তি করে টেলিটক। প্রকল্প বাস্তবায়নে আরও প্রায় চারশ কোটি টাকা সরবরাহ করার কথা দেশীয় এই অপারেটরটির। কিন্তু এ অর্থ সরবরাহের জন্য বেশ কয়েকটি ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ করে ব্যর্থ হয় প্রতিষ্ঠানটি। পরে তারা ব্যাংক এশিয়া থেকে ১৭৫ কোটি টাকা ঋণের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়। ইতিমধ্যে এ প্রকল্পের আওতায় যন্ত্রপাতি আমদানি শুরু করেছে টেলিটক। পাশাপাশি থ্রিজির জোন নোডবি এবং টুজির জন্য বিটিএস স্থাপন করে নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ করছে।

পাঠকের মতামত:

SMS Alert

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এর সর্বশেষ খবর

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি - এর সব খবর