thereport24.com
ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল 24, ৭ বৈশাখ ১৪৩১,  ১১ শাওয়াল 1445

সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের প্রতিবেদন   

বাজেট ব্যবস্থাপনা ও বাস্তবায়নে দেশ এগিয়েছে

২০১৩ নভেম্বর ২৮ ১৬:৪৮:৪২
বাজেট ব্যবস্থাপনা ও বাস্তবায়নে দেশ এগিয়েছে

জোসনা জামান, দ্য রিপোর্ট : গত চার বছরে বাজেট ব্যবস্থাপনা ও বাস্তবায়নে ব্যাপক অগ্রগতি অর্জন করেছে বাংলাদেশ। বিশেষ করে অনেকগুলো ক্ষেত্রে ইতোমধ্যে ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা লক্ষ্যের কাছাকাছি পূরণ হয়েছে। এমনই তথ্য দিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন।

সাম্প্রতিক এক মূল্যায়ন প্রতিবেদন তৈরি করেছে সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি)। এতে বলা হয়েছে, ২০১১-১২ অর্থবছর ছাড়া অন্যান্য অর্থবছরে প্রকৃত রাজস্ব আয়, ব্যয় ও বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির বরাদ্দ ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পার সঙ্গে মিলে গেছে।

এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য ড. শামসূল আলম দ্য রিপোর্টকে বলেন, একটি দেশের জনগণকে সর্বোচ্চ সেবা প্রদানের লক্ষ্যে সরকারি অর্থ ব্যবস্থাপনার বিষয়ে বাজেট দিকনির্দেশনা দেয়। বাজেট জাতীয় উন্নয়নের মাইলফলক হিসেবেও প্রতিফলিত হয়। সম্পদের সীমাবদ্ধতা থাকায় সরকারকে প্রয়োজনীয় গুরুত্ব অনুযায়ী অগ্রাধিকার নির্ধারণ করতে হয়। একইভাবে সে অনুযায়ী সরকারও তার রাজস্ব সংগ্রহ ও খাতভিত্তিক ব্যয়ের পরিকল্পনা গ্রহণ করে যা জাতীয় বাজেটে প্রতিফলিত হয়ে থাকে।

২০০৫-০৬ অর্থবছরকে ভিত্তিবছর ধরে এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। এতে গুরুত্বপূর্ণ সূচকগুলোতে অনেক দূর এগিয়েছে বাংলাদেশ।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মোট রাজস্ব আয় ও অনুদানের ক্ষেত্রে অনেকদূর এগিয়েছে দেশ। ২০০৫-০৬ অর্থবছরে এ খাতে আয় ছিল জিডিপির ১১ দশমিক ৩৪ শতাংশ, সেটি বেড়ে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে এসে দাঁড়িয়েছে ১৪ দশমিক ৬৫ শতাংশে। পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ভিত্তিবছরের তুলনায় বর্তমান সরকারের সময়ে প্রতিবছরই এর পরিমাণ বেড়েছে। যেমন ২০১১-১২ অর্থবছরে হয়েছে ১২ দশমিক ৯৩ শতাংশ এবং ২০১২-১৩ অর্থবছরে হয়েছে ১৩ দশমিক ৯৬ শতাংশ। পাশাপাশি শুধু মোট রাজস্ব আয়, কর রাজস্ব, এনবিআর কর, এনবিআর বহির্ভূত কর, কর ব্যতীত রাজস্ব সকল ক্ষেত্রেই অগ্রগতি হয়েছে।

বাজেটের মোট ব্যয়ের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, এক্ষেত্রে অনেকদূর এগিয়েছে সরকার। কেননা ২০০৫-০৬ অর্থবছরে মোট ব্যয় ছিল ১৪ দশমিক ৬৯ শতাংশ, সেখানে চলতি অর্থবছরে এসে হয়েছে ১৮ দশমিক ৭২ শতাংশ। পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, গত চার বছরে ক্রমান্বয়ে ব্যয় বেড়েছে। যেমন, ২০১১-১২ অর্থবছরে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬ দশমিক ৬৬ শতাংশে, ২০১২-১৩ অর্থবছরে হয়েছিল ১৮ দশমিক ২৪ শতাংশ।

অনুন্নয়ন ব্যয়ের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, এক্ষেত্রে ব্যয় কমাতে সক্ষম হয়েছে সরকার। ভিত্তিবছরে এ হার ছিল ১৩ দশমিক ৫৪ শতাংশ। সেটি কমে চলতি অর্থবছরে হয়েছে ১১ দশমিক ৪৭ শতাংশ।

উন্নয়ন ব্যয়ের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, সরকারের মেয়াদে উন্নয়ন ব্যয় ব্যাপকহারে বেড়েছে। ২০০৫-০৬ অর্থবছরে উন্নয়ন ব্যয় ছিল জিডিপির ৫ দশমিক ৩৬ শতাংশ। সেটি বেড়ে চলতি অর্থবছরে হয়েছে ৬ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ। ২০১১-১২ অর্থবছরে উন্নয়ন ব্যয় কিছুটা কমে গিয়ে দাঁড়িয়েছিল ৪ দশমিক ৪৫ শতাংশে। পরবর্তীতে ২০১২-১৩ অর্থবছরে তা বাড়তে শুরু করে। এ সময় বেড়ে হয়েছিল ৫ দশমিক ৫৬ শতাংশ।

বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, ২০০৫-০৬ অর্থবছরে এডিপি ছিল জিডিপির ৫ দশমিক ১৭ শতাংশ, সেটি বেড়ে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ৫৪ শতাংশে।

বাজেট ঘাটতির (অনুদানসহ) ক্ষেত্রে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এক্ষেত্রে ঘাটতির পরিমাণ বেড়েছে। ২০০৫-০৬ অর্থবছরে বাজেট ঘাটতি ছিল ৩ দশমিক ৮৯ শতাংশ, সেটি বেড়ে চলতি অর্থবছরে দাঁড়িয়েছে ৪ দশমিক ৬৩ শতাংশে।

বাজেট ঘাটতি বেড়ে যাওয়ার কারণ প্রসঙ্গে সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য ড. শামসূল আলম বলেন, বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই উন্নয়ন ব্যয় বাড়ছে। এটি বাড়লে স্বাভাবিকভাবেই ঘাটতি বাজেট করতে হয়।

বাজেটে মোট অর্থায়নের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, গত কয়েক বছরে বাজেটে অর্থায়ন বেড়েছে। ২০০৫-০৬ অর্থবছরে এটি ছিল জিডিপির ৩ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ, সেটি বেড়ে ২০১১-১২ অর্থবছরে হয়েছে ৩ দশমিক ৭৪ শতাংশ, ২০১২-১৩ অর্থবছরে বেড়ে হয়েছে ৪ দশমিক ২৮ শতাংশ এবং চলতি অর্থবছরে আগের বছরের তুলনায় কিছুটা কমে হয়েছে ৪ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ।

বৈদেশিক ঋণের (নীট) ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, ক্রমান্বয়ে বাজেটে বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এক্ষেত্রে ২০০৫-০৬ অর্থবছরে ছিল মোট বাজেটের শূন্য দশমিক ৮৬ শতাংশ, সেটি বেড়ে চলতি অর্থবছরে দাঁড়িয়েছে ১ দশমিক ২১ শতাংশ। অন্যদিকে, মোট বৈদেশিক ঋণের পরিমাণও বেড়েছে। ২০০৫-০৬ অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিল ১ দশমিক ৬৫ শতাংশ, সেখানে চলতি অর্থবছরে হয়েছে ২ শতাংশ। পাশাপাশি বেড়েছে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের পরিমাণও।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার মেয়াদ শেষে (২০১৫ সালের মধ্যে) রাজস্ব জিডিপির অনুপাত প্রক্ষেপণ করা হয়েছে ১৪ দশমিক ৬ শতাংশ। কিন্তু ইতোমধ্যেই ২০১২-১৩ অর্থবছরে তা হয়েছে ১৩ দশমিক ৫ শতাংশ। এক্ষেত্রে ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার লক্ষ্য অর্জনের পথে রয়েছে।

অন্যদিকে, ২০১১-১২ অর্থবছর হতে রাজস্বের গড় বৃদ্ধি হয়েছে ২১ শতাংশের বেশি, যা ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার লক্ষ্য পূরণ করেছে।

বাজেট ঘাটতি ধারাবাহিকভাবে ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার প্রক্ষেপণের মধ্যেই রয়েছে, অর্থাৎ জিডিপির ৫ শতাংশ। এক্ষেত্রে দেখা যায়, ভারতে বাজেট ঘাটতি ৯ শতাংশ, সেখানে বাংলাদেশে এখনো বাজেট ঘাটতি ৫ শতাংশের নিচে।

বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ বেড়েই চলছে এবং অভ্যন্তরীণ ঋণ হ্রাসের প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এর ফলে বেসরকারি খাতের বিনিযোগে ইতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।

বাজেটে ২০০৫-০৬ অর্থবছরে খাতভিত্তিক উন্নয়ন বাজেট বরাদ্দের ক্ষেত্রে প্রথম গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন খাতকে। কিন্তু এখন এ ধারা পরিবর্তন হয়েছে। বর্তমানে বাজেটে বরাদ্দের ক্ষেত্রে এক নাম্বার গুরুত্ব পাচ্ছে পরিবহন ও যোগাযোগ খাত।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, ছয়টি সমতুল্য দেশের মধ্যে বাংলাদেশের রাজস্ব-জিডিপি অনুপাত সবচেয়ে কম। ২০১৩ সালে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও শ্রীলংকার রাজস্ব-জিডিপি অনুপাত ১৩ শতাংশে পৌঁছে। এর মানে বাংলাদেশ পাকিস্তান ও শ্রীলংকার কাছাকাছি পৌঁছেছে। তবে অপেক্ষাকৃত দরিদ্র নেপালেরও রাজস্ব-জিডিপি অনুপাত বাংলাদেশের তুলনায় বেশি।

(দ্য রিপোর্ট/জেজি/এসবি/এমএআর/নভেম্বর ২৮, ২০১৩)

পাঠকের মতামত:

SMS Alert

অর্থ ও বাণিজ্য এর সর্বশেষ খবর

অর্থ ও বাণিজ্য - এর সব খবর