thereport24.com
ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল 24, ১২ বৈশাখ ১৪৩১,  ১৬ শাওয়াল 1445

রাজনৈতিক অস্থিরতা

প্রতিবেদন প্রকাশ স্থগিত করলো বিশ্বব্যাংক

২০১৩ নভেম্বর ৩০ ০০:১২:২৫
প্রতিবেদন প্রকাশ স্থগিত করলো বিশ্বব্যাংক

জোসনা জামান, দ্য রিপোর্ট : বর্তমান রাজনৈতিক অস্থিরতায় উদ্বিগ্ন দাতারা। এর অংশ হিসেবে প্রতিবেদন প্রকাশ স্থগিত করলো বিশ্বব্যাংক। প্রতিবেদনে বাংলাদেশের জন্য সুখবর ছিল।

শনিবার (৩০ নভেম্বর) ঢাকা কার্যালয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে এডুকেশন সেক্টর রিভিউ (২০১৩) এর ‘অভিগম্যতা ও সমতা’ বিষয়ক পলিসি নোট সংক্রান্ত রিপোর্টটি প্রকাশের যাবতীয় প্রস্তুতি শেষ করেছিল সংস্থাটি। কান্ট্রি ডিরেক্টর ইউহানেন্স জাটের উপস্থিতিতে প্রতিবেদনটি প্রকাশের কথা ছিল।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে বিএনপি জেটোর অবরোধ কমসূচি এবং এর ফলে পরিস্থিতি আরও অস্থিতিশীল হয়ে ওঠায় শেষ পর্যন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ স্থগিত করে সংস্থাটি। এটি কবে নাগাদ প্রকাশ হবে সেটিও জানাতে পারেননি বিশ্বব্যাংকের কর্মকর্তারা।

এ বিষয়ে ঢাকায় নিযুক্ত বিশ্বব্যাংকের যোগাযোগ কর্মকর্তা মেহেরিন এ মাহবুব সরাসরি ‘রাজনৈতিক’ কারণে স্থগিত হয়েছে এমন কথা না বললেও দ্য রিপোর্টকে জানান, ‘মানুষের দৃষ্টি এখন চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির দিকে। তাই এখন আমাদের প্রতিবেদন প্রকাশ তেমন গুরুত্ববহন করে না।’

প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাংক বলেছে, শিক্ষাখাতে ব্যাপক অগ্রগতি অর্জন করেছে বাংলাদেশ। শিক্ষার প্রায় সব ক্ষেত্রেই (প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক, বিশ্ববিদ্যালয়, কারিগরি শিক্ষা) অভিগম্যতা ও সমতা অর্জনে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। পাশাপাশি এ অর্জন ধরে রাখতে কিছু পরামর্শও দিয়েছে সংস্থাটি।

এ বিষয়ে মেহরিন এ মাহবুব বলেন, ‘অনেক বিষয়ে হতাশার মধ্যে বাংলাদেশের মানুষের জন্য এটি একটি সুখবর। কেননা এ অর্জন একদিনে আসেনি। দীর্ঘদিন ধরে পরিকল্পিতভাবে সরকারি অর্থ বিনিয়োগের ফলেই এটি হয়েছ্। এ অর্জন রক্ষা করতে এবং এর সুফল ঘরে তুলতে শিক্ষাখাতে আরও কার্যকর বিনিয়োগ দরকার।’

বিশ্বব্যাংক তাদের প্রতিবেদনে বলছে, বাংলাদেশ অবিচলভাবে শিক্ষায় অভিগম্যতা বাড়িয়েছে, যার ফলে প্রাথমিক স্কুলে মোট ভর্তির হার গত দশ বছরে ৯১ শতাংশ থেকে বেড়ে ১০১ শতাংশ হয়েছে। ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণীতে ভর্তির হার ৫২ থেকে ৬২ শতাংশ হয়েছে। একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণীতে ভর্তির হার ৩৩ থেকে ৪৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির হার ৭ থেকে ১০ শতাংশ হয়েছে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে উপবৃত্তি। কেননা উপবৃত্তি প্রদানের মাধ্যমে অধিক সংখ্যায় নিম্ন আয়ভুক্ত পরিবারের শিশু ও মেয়েদের ভর্তির ব্যবস্থা করে বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষায় প্রায় সর্বজনীন অভিগম্যতা অর্জন করে ফেলেছে।

মূল্যায়ন প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষায় বাংলাদেশ নারী-পুরুষ সমতাও অর্জন করেছে। এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি মেয়ে মাধ্যমিক স্কুলে পড়াশোনা করতে পারে। মাধ্যমিক পর্যায়ে এখন ছেলের চেয়ে মেয়ের সংখ্যা বেশি। মেয়েদের ক্ষেত্রে নিট ভর্তির হার ৪৪ থেকে বেড়ে ৫৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। আর ছেলেদের ক্ষেত্রে এ হার ৩২ থেকে ৪৫ শতাংশ হয়েছে। আগের চেয়ে বেশি শিক্ষার্থী এখন স্কুলে টিকে থাকছে। গত ৩০ বছরে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করার সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে। শিক্ষার্থীরা গড়ে যে কয়টি শ্রেণী অতিক্রম করতে পারে তার সংখ্যাও বেড়েছে। এমনকি দরিদ্রদের ৫৭ শতাংশ ও সাধারণ পরিবারের শিশুদের ৮৩ শতাংশ প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগামী দশ বছরে কর্মক্ষম নাগরিকের সংখ্যা বাড়বে এবং অন্যের উপর নির্ভরশীল মানুষের সংখ্যা কমবে। এ প্রেক্ষাপটে মাথাপিছু মোট জাতীয় আয় ও দ্রুত বেড়ে ওঠা প্রবৃদ্ধিসহ সামনে এগুনোর এক দারুন সুযোগ পাচ্ছে দেশটি। এই সুযোগকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে উন্নীত করে অর্থনৈতিক উন্নয়নের পরবর্তী ধাপে উন্নীত করতে হলে দেশটিকে ভাবতে হবে কি করে শিক্ষায় বিনিয়োগ অর্থবহভাবে বাড়িয়ে বিশ্ববাজারে জোর প্রতিযোগীতায় নামা যায়।

বিশ্বব্যাংকের মূল্যায়নে দেখা যায়, প্রতি ১০ জন প্রাথমিক শিক্ষার্থীর মধ্যে মোটামুটি সাত থেকে আটজন পঞ্চম শ্রেণী পর‌্যন্ত যেতে পারে। এর মধ্যে মাত্র তিন থেকে চারজন কোনো শ্রেণীতে পুনরাবৃত্তি না করে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণীর গন্ডি পেরিয়ে যেতে পারে।

ব্যয়ের বিষয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়েছে, জাতীয় বাজেটের ১৪ থেকে ১৬ শতাংশ ধারাবাহিকভাবে শিক্ষাখাতে ব্যয় করে। যা পার্শ্ববর্তী উন্নয়নশীল দেশের তুলনায় তুলনামূলকভাবে কম। অর্থনৈতিক উন্নয়নের সমপর্যায়ের দেশগুলো গড়ে জাতীয় বাজেটের ১৮ দশমিক ৭০ শতাংশ শিক্ষাখাতে বরাদ্দ করছে। তবে বরাদ্দ দেওয়া অর্থের ব্যবহারের অদক্ষতার কারণে পুনরাবৃত্তি ও ঝরে পড়ার উঁচু হার বজায় রয়েছে।

বাংলাদেশের শিক্ষাক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে সংস্থাটি মনে করছে, স্কুলের বাইরে থাকা শিশুদের শিক্ষার ব্যবস্থা করা। বিশেষ করে বস্তিবাসী শিশুদের শিক্ষার ব্যবস্থা করা। দারিদ্র্যের কারণে এখনও ৫০ লাখের বেশি শিশু স্কুলের বাইরে থেকে গেছে। এদের একটি বড় অংশ শহরের বস্তিতে অথবা প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে বাস করে। যেসব শিশুর পরিবার সদ্য বস্তিতে উঠেছে তাদের মধ্যে ঝরে পড়ার ঝুঁকি আরও বেশি। প্রাক-প্রাথমিক স্তরে শিশুদের ভর্তির হার বাড়ছে। তবুও এর হার ২৩ শতাংশ। এই স্তরে প্রারম্ভিক শিশু-বিকাশ কার্যক্রম সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের শিখনের অসমতা দূর করার একটি পদ্ধতি হলেও এ কার্যক্রম এখনও দেশজুড়ে প্রসার হয়নি। উচ্চ শিক্ষায় নারীদের অংশগ্রহণও কাঙ্খিত মাত্রায় বাড়েনি। দরিদ্র ও অ-দরিদ্রদের মধ্যে ভর্তির হারে এটি ৩১ শতাংশ ফারাক রয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শিক্ষার্থীদের আরও বেশি সময় স্কুলে ধরে রাখার উপর জোর দিতে হবে। তাই লাগসই প্রণোদনা সৃষ্টি করতে ও যোগাতে পারলে শিক্ষার্থীদের মাধ্যমিক শিক্ষা সমাপনে উদ্বুদ্ধ করবে। উচ্চ শিক্ষাকে সুলভ করে তোলার উপায় বের করতে পারলে তা আরও নাগালের মধ্যে আসবে। আরও বেশি করে বৃত্তি, ছাত্র সহায়তা ও স্বল্প সুদে ঋণ দেওয়া সম্ভব হলে উচ্চ শিক্ষায় ভর্তির হার বাড়বে।

বিশ্বব্যাংক বলছে, বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই তুমুল গতিতে দুস্তর পথ অতিক্রম করেছে এবং শিক্ষায় অভিগম্যতা ও সমতা অর্জনে অনেক দূর এগিয়েছে। দেশটি যদি শিক্ষার্থীদের আগে স্কুলে টেনে আনার এবং আরও বেশি সময় ধরে রাখার সৃজনশীল উপায় উদ্ভাবন করতো তাহলে অর্থনৈতিকভাবে আরও বেশি সুসংহত হতো।

প্রতিবেদনে শুধু শিক্ষা নয়, এর পাশাপাশি শ্রমশক্তির বিষয়েও বলা হয়েছে। বিশ্বব্যাংক বলছে, বাংলাদেশের শ্রমশক্তি প্রায় পাঁচ কোটি ৬৭ লাখ কর্মী নিয়ে গঠিত। এ শ্রম শক্তির মধ্যে পাঁচ কোটি ৪৪ লাখ ৩২ হাজার শিক্ষা প্রাথমিকের গন্ডি পার হয়নি। আর মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত মাত্র ২২ লাখ ৬৮ হাজার কর্মী। এদের কেউ কেউ জেএসসি, এসএসসি, এইচএসসি, কারিগরি শিক্ষা, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায় শেষ করে শ্রমশক্তিতে যুক্ত হয়ে উৎপাদনে নিয়োজিত। মোট শক্তির মধ্যে সেবা খাতে রয়েছে ৩৫ দশমিক ১ শতাংশ, শিল্পে ১৭ দশমিক ৪ ও কৃষি খাতে ৪৭ দশমিক ৫ শতাংশ।

প্রতিবেদনে দেখা গেছে, পুরুষ শ্রমশক্তির ৪০ দশমিক ৬০ শতাংশের কোন ধরনের শিক্ষা নেই। আর প্রাথমিক শিক্ষা ২৩ দশমিক ১ শতাংশ, কারিগরি দশমিক ২ শতাংশ, ব্যাচেলর ২ দশমিক ৬ শতাংশ ও মাস্টার্স পাস ১ দশমিক ৯ শতাংশ। আর শিক্ষার দিক বিবেচনায় নারী শ্রমশক্তির অবস্থা আরও খারাপ পর্যায়ে রয়েছে। ৪১ দশমিক ৩ শতাংশের কোন ধরনের শিক্ষা নেই। কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত দশমিক ১ শতাংশ। স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে যথাক্রমে ১ দশমিক ২ ও দশমিক ৮ শতাংশ।

(দ্য রিপোর্ট/জেজে/এমএআর/নভেম্বর ২৯, ২০১৩)

পাঠকের মতামত:

SMS Alert

অর্থ ও বাণিজ্য এর সর্বশেষ খবর

অর্থ ও বাণিজ্য - এর সব খবর