thereport24.com
ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল 24, ৬ বৈশাখ ১৪৩১,  ১০ শাওয়াল 1445

ম্যান্ডেলাকে বিদায় জানাল বিশ্ব

২০১৩ ডিসেম্বর ১০ ২৩:৪৯:০০
ম্যান্ডেলাকে বিদায় জানাল বিশ্ব

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক : ম্যান্ডেলা নেই তবে রেখে গেছেন তার আদর্শ। আর সেই আদর্শের প্রথম নিদর্শন দেখা গেল তার স্মরাণুনুষ্ঠানে। যেখানে রাজনৈতিক আর জাতিগত বিভেদ ভুলে একত্রিত হয়েছেন সকলেই।

মঙ্গলবার জোহান্সবার্গের সকার সিটি স্টেডিয়ামে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বরাক ওবামা থেকে শুরু করে কিউবার প্রেসিডেন্ট রাউল কাস্ত্রো পর্যন্ত সকল বিশ্বনেতাই একসঙ্গে শেষ শ্রদ্ধা জানালেন মহামানব ন্যালসন ম্যান্ডেলাকে।

এ সময় প্রায় অর্ধশতাব্দী ধরে চলমান মারাত্মক শত্রুতার মধ্যেও অনুষ্ঠানে ওবামা ও রাউল কাস্ত্রো অভূতপূর্ব ইতিবাচক অঙ্গভঙ্গিতে হাত মিলিয়ে বিশ্বের কাছে যেন ম্যান্ডেলার শান্তির বার্তাই তুলে ধরলেন।

অনুষ্ঠানের বক্তৃতায় ম্যান্ডেলাকে ‘মহান নেতা’ (জাইয়ান্ট লিডার) হিসেবে উল্লেখ করেন বরাক ওবামা। তিনি বলেন, ‘ইতিহাসে মহান নেতা হওয়া এবং একটি জাতিকে ন্যায় বিচারের পথে এনে দেওয়া যে কত কঠিন কাজ, তা যে কারো পক্ষে বর্ণনা করা কঠিন।’

তিনি বলেন, ‘ম্যান্ডেলা বুঝতে পেরেছিলেন বিশ্ব হচ্ছে কর্মশক্তি ও কল্পনার স্থান। আর এ ধারনা থেকেই ম্যান্ডেলা শুধু কয়েদিদেরই মুক্ত করেননি, পাশাপাশি মুক্ত করেছেন জেলারদেরকেও।’

ওবামা বলেন, ‘আমরা আর কখনো ম্যান্ডেলার মতো আরেকজনকে দেখবো না। যেখানে আমি সবসময়ই মাদিবার (ম্যান্ডোলার ডাক নাম) মতো একজন হতে চাই। তিনি আমাকে একজন অধিকতর ভালো মানুষ হওয়ার প্রেরণা যোগান।’

ওবামা ম্যান্ডেলাকে মহাত্মা গান্ধী, মার্টিন লুথার কিং ও আব্রাহাম লিংকনের সঙ্গে তুলনা করে বলেন, ‘সংগ্রাম, বিচক্ষণতা, অধ্যবসায় ও বিশ্বাসের মধ্যে দিয়ে ইতিহাসের পাতায় জায়গা করে নিয়েছেন ম্যান্ডেলা।’

ওবামা বৈষম্য, দরিদ্র, আর জাতিভেদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করার মাধ্যমে ম্যান্ডেলার উত্তরাধিকারকে ধরে রাখার জন্য বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, ‘দক্ষিণ আফ্রিকা আমাদের দেখিয়ে দিয়েছে যে, আমরা বদলাতে পারি।’

এ সময় ওবামা ম্যান্ডেলাকে বিংশ শতাব্দির সর্বশেষ ‘মহান মুক্তিদাতা’ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, তিনিও চিন্তা করছেন একজন মানুষ ও প্রেসিডেন্ট হিসেবে ম্যান্ডেলার শিক্ষাকে কীভাবে নিজের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা যায়।

ম্যান্ডেলার স্মরণানুষ্ঠানে বক্তব্য দানের জন্য যে সব নেতাকে নির্বাচন করা হয়েছিল তার প্রত্যেকটিই ঔপনেবেশিক শাসনের অধীনে ছিল।

এ অনুষ্ঠানে যুক্তরাজ্য অথবা কমনওয়েলথের পক্ষ থেকে কোনো বক্তা ছিলেন না। অনুষ্ঠানে বক্তাদের তালিকার মাধ্যমে পশ্চিমা বিশ্ব প্রভাবমুক্ত দক্ষিণ আফ্রিকার রাজনৈতিক প্রবণতা প্রকাশ পেয়েছে বলেও জানিয়েছে আল জাজিরা।

তবে অনুষ্ঠানটিতে যোগ দিতে পারেননি ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট শিমন প্যারেজ ও প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। তারা স্বাস্থ্যগত সমস্যার অজুহাত দেখিয়ে অনুষ্ঠানে যোগদানের অপরাগতা জানান। জাতি বিদ্ধেষ বিরোধী এ নেতাকে ফিলিস্তিনি জনগণ তাদের আন্দোলনের বিশ্বস্ত সাথী হিসেবে বিবেচনা করার কারণে ইসরায়েলের নেতারা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

জোহান্সবার্গে মঙ্গলবারের স্মরণানুষ্ঠানে আরো যোগ দিয়েছেন অন্তত ৯০টি দেশের রাষ্ট্রপ্রধান।

ইউএস প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও তার স্ত্রী মিশেল ওবামা ছাড়াও সাবেক ইউএস প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন, জিমি কার্টার, সাবেক ইউএস প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ ও তার স্ত্রী লরা বুশ, জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন, ফরাসি প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া ওলাদ, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন, সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী, গর্ডন ব্রাউন, টনি ব্লেয়ার ও জন মেজর, ইরানের প্রেনিডেন্ট হাসান রুহানি, বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদসহ অনেকেই এরই মধ্যে অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন।

এছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়ন কমিশনের প্রেসিডেন্ট জোসে ম্যানুয়েল বারোসো, জার্মান প্রেসিডেন্ট জোচিম গ্যঁক, ডাচ রাজা উইলেম আলেক্সান্ডার, স্পেনের যুবরাজ ক্রাউন প্রিন্স ফিলিপ, ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট দিলমা রৌসেফ, কিউবার প্রেসিডেন্ট রাউল ক্যাস্ট্রো, ফিলিস্তিনের নেতা মাহমুদ আব্বাস, জিম্বাবুয়ের প্রেসিডেন্ট রবার্ট মুগাবে, ভারতের প্রেসিডেন্ট প্রণব মুখার্জিসহ আরো অনেকেই রয়েছেন সেখানে।

বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের কর্মী ও ইংরেজ সঙ্গীতশিল্পী পিটার গাব্রিয়েল, আইরিশ সঙ্গীত শিল্পী পল ডেভিড হিউজন (বোনো), নওমি ক্যাম্পবেল ও অপেরাহ উইনফ্রেসহ অনেক অভিনেতা-অভিনেত্রীর এ স্মরণানুষ্ঠানে যোগ দেন।

(দ্য রিপোর্ট/এআইএম/এসকে/ডিসেম্বর ১০, ২০১৩)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

SMS Alert

বিশ্ব এর সর্বশেষ খবর

বিশ্ব - এর সব খবর