thereport24.com
ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল 24, ১২ বৈশাখ ১৪৩১,  ১৬ শাওয়াল 1445

প্রধানমন্ত্রী আপনাকে বলছি ...

২০১৩ অক্টোবর ২৪ ১৯:১৬:৩৭
প্রধানমন্ত্রী আপনাকে বলছি ...

মতিনুজ্জামান মিটু : মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদে বিভিন্ন সময়ে আপনি বলেছিলেন, ২৪ অক্টোবর হবে নবম জাতীয় সংসদের শেষ দিন। সাংবিধানিকভাবেও ২৫ অক্টোবর থেকে ৯০ দিনের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু বাস্তবে এর কিছুই ঘটেনি। সংসদ অধিবেশনের মেয়াদ বাড়ান হয়েছে ৭ নভেম্বর পর্যন্ত। নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে দুই জোটের কোন ফর্মুলাই পোক্ত হয়নি। অনির্দিষ্টকালের জন্য নিষিদ্ধ হয়েছে সকল ধরনের সভা-সমাবেশ। একে জরুরি অবস্থার পথে প্রথম ধাপ বলে মনে করছেন অনেকে।

এই পরিস্থিতিতে অনিশ্চিত ভয়ার্ত জনগণের পক্ষ থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনাকে কিছু কথা বলতে চাই। একটি ‘অনির্বাচিত সরকার’র অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে দুই তৃতীয়াংশেরও বেশি আসন নিয়ে আপনি ক্ষমতায় এসেছিলেন। ক্ষমতাসীন হয়ে আপনি বলতে শুরু করেন, “ দেশে আর কখনোই অনির্বাচিত সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে না।”

আপনি নিয়মিতই বলছেন, ১/১১’র তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকেই নাকি আপনার এই নবতর উপলব্ধি। অথচ ওই সময়ের সরকারকে স্বাগত জানাতে সেদিন আপনি শপথ অনুষ্ঠানে হাজির হয়েছিলেন। নির্বাচনে জিতেও এসেছেন ওই সরকারের অধীনে। কিন্তু পরে এ ধরনের সরকার ব্যবস্থার প্রতি আস্থা হারালেন কেন? যে ব্যবস্থা পত্তনের জন্য এক সময় দেশের এক প্রান্ত থেকে আর এক প্রান্তে ছুটে বেড়িয়েছেন, বিনিদ্র রজনী কাটিয়েছেন, কেন সেই ব্যবস্থা আজ অসহ্য মনে হচ্ছে ?

কোনো দ্বিধা ছাড়া মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনাকে বলতে চাই, আপনি ক্ষমতা হারানোর ভয়েই তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাদ দিয়েছেন। যে কাজটি একদা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ও বেগম খালেদা জিয়াও চেয়েছিলেন। পঞ্চদশ সংশোধনীর আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের প্রথা একদিন জাতি আপনার আহবানেই ছিনিয়ে এনেছিল।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনার নিশ্চয়ই স্মরণ আছে পৃথিবীর কোনো গণতান্ত্রিক দেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রথা ছিল না। বাংলাদেশের অনুকরণে এখন কয়েকটি দেশে এ ধরনের ব্যবস্থা শুরু হচ্ছে। তবে তা গণতন্ত্রের কুলীন কোন দেশে নয়। দুই প্রধান দলের পরস্পরের প্রতি প্রচণ্ড অবিশ্বাস থেকে একদিন এই দেশে দলনিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের প্রয়োজন দেখা দিয়েছিল।

একটু পেছনে ফিরে যাই। আশির দশকে আমি তখন ১০ দলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের শরিক একটি সংগঠনের প্রতিনিধিত্ব করছিলাম। ১৯৮৩ সালে আপনার আজকের মিত্র এইচএম এরশাদ দেশের প্রায় সবদলকে সঙ্গে নিয়ে দলনিরপেক্ষ সরকার ব্যবস্থা গঠনের চেষ্টা করেছিল। গণতন্ত্রকে কবর দিয়ে হলেও নানা অপকৌশলের আশ্রয় নিয়ে আপনার আজকের মিত্র ৯ বছর ক্ষমতা টিকেছিলেন। আর এসময় তিনিও ভোটের মত একটা কিছু করেছিলেন।

এবার আরও পেছনে ফিরতে চাই। ৩০ লাখ শহীদের রক্তে ভেজা দেশে নির্বাচন নিয়ে অবিশ্বাস স্বাধীনতার প্রথম থেকেই ছিল। কথা উঠে ১৯৭৩ সালে অনুষ্ঠিত দেশের প্রথম নির্বাচন নিয়ে । এর ফল নিয়ে দেশের তো বটেই বিদেশের মানুষও সন্তুষ্ট ছিলেন না।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনার ভক্তরা বলে থাকেন, আপনি গণতন্ত্রের পূজারী। নিজের বাবার মতো আপনিও মনে করেন, আপনি ছাড়া দেশের আর কেউ দেশকে প্রকৃত অর্থে ভালবাসে না। আপনি না থাকলে এই অভাগা দেশের কি হবে এ নিয়ে আপনার ভাবনার অন্ত নেই!

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি নিশ্চয়ই জানেন একটা সরকারের সফলতা নির্ভর করে নির্বাচনী অঙ্গিকার বাস্তবায়নের পাশাপশি মেয়াদ শেষে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্পন্নের ওপর। সারা দেশের সঙ্গে বিশ্ববাসীও চায় বাংলাদেশে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন হোক।এতে সবদল ও ব্যক্তি আনন্দে অংশগ্রহণ করুক।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি এখন কী করবেন, কোন পথে হাঁটবেন সেটা একান্তই আপনার ব্যাপার। তবে এটা বলব-দেশের মানুষকে নিশ্চয় কোনো খারাপ অবস্থার মধ্যে ফেলবেন না। তেমন কিছু হলে তার দায়ও এড়াতে পারবেন না। আপনার প্রতি শুভ কামনা রইল।

লেখক: সাংবাদিক

পাঠকের মতামত:

SMS Alert

মুক্তমত এর সর্বশেষ খবর

মুক্তমত - এর সব খবর