thereport24.com
ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল 24, ১২ বৈশাখ ১৪৩১,  ১৬ শাওয়াল 1445

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খুতবা

২০১৩ ডিসেম্বর ১৩ ০৫:৪৫:৪৮
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খুতবা

এ কে এম মহিউদ্দীন

কৈফিয়তনামা : প্রাচীন আরবী সাহিত্যের ইতিহাসে খুতবা সাহিত্য একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সেখানে একটা বিরাট অংশ জুড়ে রয়েছে এ নিয়ে এন্তার আলোচনা। আলী ইবন আবি তালিব (রাঃ)-এর বক্তৃতার [খুতবা] সংকলন বিদ্বৎসমাজে ব্যাপক প্রচারিত। বিপুল পাঠক তার সেই নাহজুল বালাগ-এ মুগ্ধ। তবে আমরা তাত্ত্বিক দিক থেকে খুতবার ব্যাপক অর্থের দিকে না নজর দিয়ে আমাদের বর্তমান আলোচনা নির্ধারণ করেছি একটা গণ্ডির মধ্যে। এই গণ্ডিটা রাসূল (সাঃ)-এর খুতবাকে কেন্দ্র করেই।

লক্ষ্য করবার বিষয় হচ্ছে, আমাদের দেশের মসজিদগুলোতে যখন খুতবা প্রদান করেন ইমাম সাহেব, সে-দিকে কারুরই ভ্রূক্ষেপ থাকে না। এ নিয়ে কবি নজরুলের ব্যঙ্গ বিদ্রূপ করে লেখা কবিতার চরণ রয়েছে। সে কথা স্মরণ করে অনেকেই ভাবেন খুতবা আসলে এমনই। আমাদের নবী (সাঃ) কেমন করে খুতবা দিতেন? এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে এই সংক্ষিপ্ত আলোচনা।

আব্দুল কাইয়ূম নদভী তার ‌খুতবাতে নববী গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন- খুতবা ওয়াজ ও তাকিরেরই নাম। খুতবার আভিধানিক অর্থ ওয়াজ ও নসিহত। খুতবার মধ্যে ওয়াজ করা সুন্নাত। রাসূল (সাঃ) তাঁর খুতবায় ওয়াজ নসিহত করতেন এবং ইসলামের হুকুম-আহকাম ও রীতিনীতি শিক্ষা দিতেন। যেমন আবূ দাউদে বর্ণিত হয়েছে- রাসূল (সাঃ) তাঁর খুতবায় কুরআনের আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করতেন এবং সকলকে নসিহত [উপদেশ] করতেন। সহীহ মুসলিমে উল্লেখ করা হয়েছে, রাসূল (সাঃ) তাঁর খুতবায় কুরআন পাঠ করতেন এবং নসীহত করতেন। অপর এক রিওয়ায়াতে আছে, তিনি খুতবাতে ওয়াজ করতেন। হজরত জাবির ইবন সামুরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সাঃ) দাঁড়িয়ে খুতবা পড়তেন, দুই খুতবার মাঝখানে বসতেন, কুরআন পাঠ করতেন এবং নসীহত করতেন।

একদল রাবী এই হাদিসটি বর্ণনা করেছেন। ইমাম শাওকানী এই হাদিসের ব্যাখ্যায় লিখেছেন : খুতবার মধ্যে কুরআন পাঠ ও ওয়াজ মাশরু দলীল হিসাবে গ্রহণ করেছেন। ইমাম শাফিয়ীর মতে খুতবার মধ্যে ওয়াজ ও কুরআন তিলাওয়াত করা ওয়াজিব। এ থেকে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে- নবী (সাঃ) খুতবার মধ্যে ওয়াজ করতেন। এটা হাদিস দ্বারাই প্রমাণিত হয়েছে। প্রকান্তরে দেখা যাচ্ছে উল্লিখিত আয়াত, হাদিস ও ইমামদের উক্তির মমার্থ খুতবা-ওয়াজেরই নাম। শ্রোতার ব্যবহৃত ভাষায় এটি উপস্থাপন করতে হবে। অন্যথা এর উদ্দেশ্য ব্যাহত হবে।

রাসূলের (সাঃ) খুতবার কারণে একটি বর্বর জাতি কেমন আমূল পাল্টে গেল তা ইতিহাসের স্বর্ণাক্ষরে লেখা রয়েছে। যে সমাজে বহমান ছিল বিবিধ পাপাচার, যেমন- ব্যভিচার, নির্লজ্জতা, মদ্যপান, জুয়া, সুদ, হত্যা, ডাকাতি রাহাজানি, জুলুম, অত্যাচার, অশান্তি, বিশৃঙ্খলা, দুরাচার। মোদ্দা কথা এমন কোনো জঘন্য বিষয় ছিল না- যা তাদের দ্বারা সম্পাদন হতো না। এমন একটা জাতিকে ফেরালেন সম্ভাবনার দিকে, ফেরালেন সভ্যতার দিকে। আর তার প্রাথমিক কাজটিই শুরু হয়েছিল মাধুর্যময় খুতবার দ্বারা। এটা অস্বীকারের সুযোগ নেই।

রাসূলের (সাঃ) খুতবা প্রদান পদ্ধতি ও অবস্থা : মহনবী (সাঃ) কখনও জমিনে আবার কখনও মিম্বারে দাঁড়িয়ে, অথবা উটের পিঠে বসে খুতবা দান করতেন। খুতবা দানের সময় তাঁর চেহারা মুবারক প্রভাজ্জ্বল ও কণ্ঠ তেজোদীপ্ত হয়ে উঠত। মনে হতো, যেন একজন জেনারেল তার সেনাবাহিনীর উদ্দেশ্যে বক্তৃতা দিচ্ছেন। তিনি শুরুতে কলেমায়ে শাহাদৎ পড়তেন অর্থাৎ বলতেন, আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই, তিনি এক, তার কোনো শরীক নেই এবং মুহাম্মদ (সাঃ) তাঁর বান্দা ও রাসূল। আর খুতবার সমাপ্তিতে বলতেন, আমি আল্লাহ্‌র কাছে ক্ষমা চাচ্ছি এবং তাওবা করছি। তিনি জুমআ ও ঈদ উপলক্ষ্যে অবশ্যই খুতবা দিতেন। এ ছাড়া যখনই প্রয়োজন দেখা দিত, তখনি খুতবা দিতেন। ওই সমস্ত খুতবার মধ্যে তিনি সাময়িক প্রয়োজনাদী ও মঙ্গলজনক কাজকর্মের কথা উল্লেখ করতেন [হাফিজ ইবনুল কাইয়িম : যাদুল মা'আদ, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৪৯] তবে স্মর্তব্য, রাসূলের (সাঃ)-এর খুতবা প্রধানত সংক্ষিপ্ত হতো। তিনি বলতেন, দূরদর্শিতা এর মধ্যেই যে, খুতবা সংক্ষিপ্ত ও নামাজ দীর্ঘ হবে। [তিবরানী, ৩য় খণ্ড]

মহানবী (সাঃ)-এর খুতবা জুমআ ও ঈদে গৎবাঁধা ছিল না, বরঞ্চ যখন যে কথার প্রয়োজন হতো, তিনি তাঁর ভাষণে তাই বলতেন। তাঁর খুতবায় কুরআনের কিছু আয়াত অবশ্যই থাকত। খুতবা দানকালে তাঁর পবিত্র চেহারা লাল হয়ে উঠত এবং প্রায় ক্ষেত্রেই তাঁর চোখযুগল নিবদ্ধ থাকত আকাশের দিকে। কখনও কখনও তাঁর হাতে থাকত লাঠি, আবার কখনও ধনুক। ভাষণ দানকালে তিনি মাঝে মধ্যে কখনও কখনও ধনুকের উপর ভর দিতেন। [যাদুল মা'আদ, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৪৯]

রাসূলের(সাঃ) খুতবার প্রভাব : রাসূলের (সাঃ) খুতবা দ্বারা শ্রোতারা প্রভাবিত এতই হতো যে, তা শুনে সব চাইতে পাষাণ হৃদয় ব্যক্তিও গলে পানি হয় যেত। একদা তিনি একটি খুতবা প্রদান করেন। তাতে তিনি সুরা‌ ‌আন-নাজম' তিলাওয়াত করেন। রাবীর বর্ণনানুযায়ী তা শুনে শুধু মুসলমানরা নয়, কাফিররা পর্যন্ত সিজদাবনত হয়ে পড়ে। রাসূল (সাঃ) যখন আখিরাত সম্পর্কে কোনো ভাষণ দিতেন, তখন যেন তিনি জান্নাত ও জাহান্নামের দৃশ্যাদি শ্রোতাদের ঠিক চোখের সামনে তুলে ধরতেন।

প্রিয় পাঠক, এপর্যন্তই আজ আপনাদের কাছে সনির্বন্ধ নিবেদন। পরবর্তীকালে দৃষ্টান্তস্বরূপ পেশকরা হবে রাসূলের (সাঃ) আলোকজ্জ্বল আলোচিত ভাষণগুলি যা তিনি প্রদান করেছেন মক্কী ও মাদানী জীবনে।ফি আমানিল্লাহ।

লেখক : সাংবাদিক ও প্রাবন্ধিক

পাঠকের মতামত:

SMS Alert

ধর্ম এর সর্বশেষ খবর

ধর্ম - এর সব খবর