thereport24.com
ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ 24, ১৪ চৈত্র ১৪৩০,  ১৮ রমজান 1445

একাদশের কাঁধে চেপে দশম সংসদ নির্বাচন করতে চায় সরকার

২০১৩ ডিসেম্বর ১৭ ১৯:৫৮:১১
একাদশের কাঁধে চেপে দশম সংসদ নির্বাচন করতে চায় সরকার

আসন্ন ৫ জানুয়ারির ভোট নিয়ে সমাঝোতা নয়, একাদশ জাতীয় নির্বাচন নিয়ে বিরোধী দলের সঙ্গে সমাঝোতা করতে চায় ক্ষমতাসীন দল। সরকারদলীয় দুই শীর্ষ নেতার এমন বক্তব্যের সমালোচনা করে সুশীল সমাজ ও বিরোধী দল বলছে, ক্ষমতাসীন দলের এমন পদক্ষেপ হাস্যকর, অবাস্তব এবং পুরোটায় ভাওতাবাজি।

‘দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিরোধী দলের অংশগ্রহণের আর সুযোগ নেই, একাদশ নির্বাচন নিয়ে বিরোধী দলের সঙ্গে সমঝোতা হতে পারে’। আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় দুই নেতার এমন বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করেছে বিএনপি। একই সঙ্গে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা বলছেন এমন বক্তব্য গ্রহণযোগ্য নয়।

রাজধানীতে মঙ্গলবার সকালে পৃথক দুটি অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং দলের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত নির্বাচন ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে এমন বক্তব্য দেন।

তাদের এমন বক্তব্যে ‘সমঝোতা’র সুর থাকলেও তা গ্রহণ করছে না প্রধান বিরোধী দল বিএনপি।

উল্লেখ্য, মঙ্গলবার রাজধানীর সেতু ভবনে এক চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘সংবিধান অনুযায়ী দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিরোধী দলের অংশগ্রহণ আর সম্ভব নয়। সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে বিরোধী দলের সঙ্গে একটি সমঝোতায় পৌঁছানো সম্ভব।’

এ সময় তিনি বিএনপির সঙ্গে এই বিষয়ে আলোচনার সম্ভাবনাও ব্যক্ত করেন।

একই দিন রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে নৌকা সমর্থক গোষ্ঠী আয়োজিত এক আলোচনা সভায় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, ‘দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ওভার, আলোচনা হতে পারে একাদশ নিয়ে।’

আওয়ামী লীগের শীর্ষ স্থানীয় এই দুই নেতার বক্তব্যে সরকারের ‘নমনীয়তা’ ও ‘সমঝোতার’ আভাস মিললেও তা প্রত্যাখ্যান করেছে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি।

সরকারের পক্ষ থেকে এমন বক্তব্য অবাস্তব ও ভাওতাবাজি বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস প্রেসিডেন্ট অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন।

আওয়ামী লীগের এই দুই নেতার বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় খন্দকার মাহবুব দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘ওবায়দুল কাদের ও সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের এমন বক্তব্য হাস্যকর, অবাস্তব এবং পুরোটায় ভাওতাবাজি। আর তাদের এমন প্রস্তাব বিএনপি কখনোই সমর্থন করবে না। আলোচনা ও সমঝোতা হতে হলে দশম জাতীয় নির্বাচনেই হতে হবে। আর সরকার যদি বিএনপির দাবি মেনে না নেয় তাহলে আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করা হবে।’

প্রবীণ এই আইনজীবী বলেন, ‘একাদশ জাতীয় নির্বাচন তো দূরের কথা, ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বিএনপি মেনে নিবে না এবং হতে দিবে না। সরকারকে ৫ জানুয়ারির আগে পদত্যাগ করে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে। কোনোভাবেই আওয়ামী লীগকে একতরফাভাবে দশম জাতীয় নির্বাচন করতে দেয়া হবে না।’

খন্দকার মাহবুব বলেন, ‘সরকারের এই দুই নেতা বিভ্রান্তি ছড়াতে এমন বক্তব্য দিয়েছে। বিএনপির সঙ্গে এ ধরনের আলোচনাই হয়নি এবং হওয়ার সম্ভাবনাও নেই। বিএনপি যে আন্দোলন কর্মসূচি দিয়েছে তা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে চলতে থাকবে।’

৫ জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচন শেষ করতে সংবিধানের বাধ্যবাধকতা রয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সংবিধান অনুযায়ী কিছুই সম্ভব নয়, আবার সবই সম্ভব। এরশাদ ও আয়ুব খান তো বলেছিলেন কিছু সম্ভব নয়। পরে তো তা সম্ভব হয়েছে। এবারও সম্ভব হবে। আওয়ামী লীগ যদি ভাবে ১৯৯৬ সালের নির্বাচনের মতো একটি স্বল্পমেয়াদী সরকার গঠন করে তারপর একাদশ নির্বাচন আয়োজন করা হবে তাহলে তারা ভুল করছে। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে যে সরকার গঠন করা হয়েছিলো তাদের উদ্দেশ্য ছিলো তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংবিধানে যুক্ত করা। সেই নির্বাচন আর এই নির্বাচন এক নয়। আওয়ামী চাইলে দশম নির্বাচনই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে করা সম্ভব।’

সরকারের এমন বক্তব্যে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘সরকার একতরফাভাবে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের যে চেষ্টা করছে তা-ই তো ন্যায্য হচ্ছে না। এই নির্বাচনই তো গ্রহণযোগ্য নয়। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন তো অনেক দূরের ব্যাপার। সরকারের এমন বক্তব্য অগণতান্ত্রিক একটি নির্বাচনকে জনগণের ওপর চাপিয়ে দেয়ার ব্যর্থ চেষ্টা।’

মান্না বলেন, ‘যদি বিএনপি আওয়ামী লীগের এমন প্রস্তাব গ্রহণ করে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে বৈধতা দেয় তাহলে তা বিএনপির একান্ত নিজেদের ব্যাপার। অর্ধেকেরও বেশি ভোটারকে বাইরে রেখে যে নির্বাচন করা হচ্ছে তা বৈধ না। দশম নির্বাচনকে বৈধতা দিতেই সরকারের এমন বক্তব্য।’

মাহমুদুর রহমান মান্না আরও বলেন, ‘সমঝোতা হলে দশম নির্বাচনেই হতে পারে। এখানে সংবিধানের দোহায় দেয়ার উপায় নেই। সংবিধান কি ঐশী বাণী যে তা মানতেই হবে। এখনো সময় আছে সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে ৫ জানুয়ারির নির্বাচন পিছিয়ে নতুন নির্বাচনের আয়োজন করার।’

এ ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্র বিজ্ঞানের শিক্ষক অধ্যাপক ড. নুরুল আমিন বেপারী দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘ওবায়দুল কাদের এবং সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের বক্তব্যে আশান্বিত হওয়ার কিছু নেই। তাদের বক্তব্য সমঝোতার জন্য কোনো সুখবরও না এবং কোনো সুবাতাসও বয়ে আনবে না।’

তিনি বলেন, ‘এই দুই নেতা যা কিছু বলুক না কেনো, দশম জাতীয় নির্বাচন এই দুই নেতার হাতে তো নেই, আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতার হাতেও নেই। আওয়ামী লীগ যা করছে, যা বলছে তা ভারতের নির্দেশনা অনুযায়ীই করছে। তা না হলে সুজাতা সিং এ ধরনের কথা বলার সুযোগ কীভাবে পেল। ভারত এবং আওয়ামী লীগ নিশ্চিত সব দলের অংশগ্রহণে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগের পরাজয় হবে। সুজাতা সিং এরশাদকে বললেন, বাংলাদেশে নাকি জামায়াত-শিবির ক্ষমতায় চলে আসতে পারে। এখন কথা হলো একাদশ জাতীয় নির্বাচনে যদি সমঝোতা হয়, তখন জামায়াত-শিবির ক্ষমতায় আসবে না?’

নুরুল আমীন বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচন ও দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ায় তারা এমন বক্তব্য দিচ্ছেন।’

এদিকে আওয়ামী লীগের এই দুই নেতার বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘একাদশ জাতীয় নির্বাচনে একটা সমঝোতা হবে এমন আশার বাণী শুনিয়ে দশম জাতীয় নির্বাচনকে জনগণের ওপর চাপিয়ে দিতে চায় সরকার।’

ইফতেখার বলেন, ‘যেখানে জনগণের ভোটদানের মৌলিক অধিকার খর্ব করে ১৫৪জন প্রার্থীকে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত করলো, সেখানে গণতন্ত্র আছে বলে মনে হয় না। কোনো প্রকার ভোট গ্রহণ ছাড়াই সরকার গঠনের সক্ষমতা অর্জন করে ফেলেছে সরকার। যা অসাংবিধানিক ও অগণতান্ত্রিক। জনগণের অংশগ্রহণ ছাড়া একটি পরিপূর্ণ সংসদ গঠন হতে পারে না। হয়তো সরকার চাচ্ছে যেনতেন ভাবে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন শেষ করে একটি সরকার গঠন করবে। পরবর্তীতে সেই সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই একাদশ জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করবে। এমনটি না করে দশম জাতীয় নির্বাচনেই সমঝোতা করা সম্ভব। এখনো সময় আছে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানে পৌঁছানোর।’

(দ্য রিপোর্ট/এইচআর/এইচএসএম/সাদি/ডিসেম্বর ১৭, ২০১৩)

পাঠকের মতামত:

SMS Alert

বিশেষ সংবাদ এর সর্বশেষ খবর

বিশেষ সংবাদ - এর সব খবর