thereport24.com
ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল 24, ৬ বৈশাখ ১৪৩১,  ১০ শাওয়াল 1445

বিশ্বজিৎ খুনের বিচার স্বস্তিদায়ক

২০১৩ ডিসেম্বর ১৯ ০০:০১:৫১

গত বছর ৯ ডিসেম্বর বিরোধী দলের ডাকা হরতাল চলাকালে পুরান ঢাকার ভিক্টোরিয়া পার্ক এলাকায় হরতালবিরোধীদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে নৃশংসভাবে খুন হন দর্জি শ্রমিক বিশ্বজিৎ দাস। সেই নৃশংসতার সচিত্র খবরে দেশব্যাপী ব্যাপক আলোড়ন ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। প্রথমদিকে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীরসহ সরকারের দায়িত্বশীল অনেক নেতা বিশ্বজিৎ হত্যার ঘটনায় ছাত্রলীগ জড়িত নয় বলে দাবি করেন। কিন্তু ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার ভিডিও ফুটেজে ধারণ থাকায় দ্রুতই পরিষ্কার হতে থাকে বিশ্বজিৎ হত্যার সঙ্গে জড়িতদের পরিচয়-পরিচিতি। তাতে দেখা যায়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতা ও ক্যাডাররা এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।

শেষতক সরকারপক্ষ জনমতের চাপে ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতার ও আইন আমলে নিতে বাধ্য হয়। এছাড়া অভিযুক্তদের ছাত্রলীগের সব পদ থেকে বহিষ্কারও করা হয়। এ অবস্থায় পুলিশ চাপমুক্তভাবেই মামলা তদন্তের সুযোগ পেয়ে প্রকৃত আসামিদের বিরুদ্ধে দ্রুত চার্জশিট দাখিল করে। সরকার হত্যাকাণ্ডের গুরুত্ব বিবেচনা করে এটিকে চাঞ্চল্যকর মামলা হিসেবে দ্রুতবিচার বিশেষ আদালতে পাঠায়।

প্রয়োজনীয় স্বাক্ষ্য-প্রমাণে আদালত বিচার সম্পন্ন করে। ঘটনার এক বছর নয় দিন পর ১৮ ডিসেম্বর বুধবার এই লোমহর্ষক নৃশংস খুনের দায়ে অভিযুক্তদের মধ্যে ৮ জনকে ফাঁসি ও অন্য ১৩ জনকে যাবজ্জীবন সাজা দেন ঢাকা দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনাল-৪ এর বিচারক এবিএম নিজামুল হক। এই রায়ের প্রতিক্রিয়ায় নিহত বিশ্বজিতের পরিবার এবং সরকারপক্ষ সন্তোষ প্রকাশ করেছে। মাত্র এক বছরের মধ্যে এমন একটি খুনের ঘটনার তদন্ত ও বিচার সম্পন্ন হওয়ায় সাধারণ মানুষও কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরে পেয়েছে।

আমাদের বিশ্বাস বিশ্বজিৎ হত্যার সেই নৃশংস দৃশ্য যারা দেখেছেন তারা প্রত্যেকেই এই রায়ে প্রশাসন ও বিচার ব্যবস্থার প্রতি তাদের আস্থা ফিরে পাবেন। পাশাপাশি এই রায়টি সারাদেশে যারা ক্ষমতার আড়ালে থেকে প্রতিনিয়ত এ রকম নৃশংস ঘটনা ঘটিয়ে চলেছে তাদের জন্য একটি সতর্ক বার্তা দেবে।

আমরা জানি সংবাদকর্মীদের দৃষ্টির আড়ালে বিশ্বজিৎ খুনের মতো নৃশংস অনেক ঘটনাই বাংলাদেশের আনাচে কানাচে ঘটে চলেছে। কিন্তু জনমত সৃষ্টির মতো প্রচার না পাওয়ায় সেই সব ঘটনা থেকে যাচ্ছে প্রকৃত তদন্ত ও বিচারের বাইরে। রাজনৈতিক ও সামাজিক শক্তির জোরে অনেক দোষী আইন ও আদালতের ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য এই সব ঘটনাকেও প্রভাবমুক্ত তদন্তের আওতায় এনে বিচার করা দরকার। আমরা মনে করি এক্ষেত্রে বিশ্বজিৎ হত্যাকাণ্ডের বিচারটি অনুপ্রেরণা ও উদাহরণ হিসেবে কাজ করবে।

পাঠকের মতামত:

SMS Alert