thereport24.com
ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল 24, ৫ বৈশাখ ১৪৩১,  ৯ শাওয়াল 1445

আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত হলেও বিনিয়োগকারীদের প্রাপ্তি নেই

২০১৩ ডিসেম্বর ২৭ ২১:৪১:৩৯
আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত হলেও বিনিয়োগকারীদের প্রাপ্তি নেই

নূরুজ্জামান তানিম, দ্য রিপোর্ট: আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে উন্নীত হওয়ার মধ্যে দিয়ে দেশের পুঁজিবাজারে শেষ হচ্ছে আরেকটি বছর। ২০১৩ সালে দুই স্টক এক্সচেঞ্জের ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন ছিল শেয়ারবাজারে আরো একটি ঘটনা।

২০১০-১১ সালের ধসের পর বছরজুড়ে (২০১৩) পুঁজিবাজারের উন্নয়নে নেওয়া হয়েছে বেশ কিছু পদক্ষেপ। তবে বিনিয়োগকারীদের প্রাপ্তিতে তেমন কিছুই যোগ হয়নি।

আগের বছরের তুলনায় ২০১৩ সালের শেষের দিকে পুঁজিবাজারের গতি কিছুটা স্বাভাবিক হলেও প্রত্যাশা পূরণ হয়নি বলে মনে করছেন বিনিয়োগকারী ও বাজার সংশ্লিষ্টরা।

পুঁজিবাজারে স্থিতিশীলতা আনতে সরকার, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ও উভয় স্টক এক্সচেঞ্জের আন্তরিকতার ঘাটতি লক্ষ্য করা যায়নি। বাজার ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে বিভিন্ন আইন পরিবর্তন, সংশোধন বা সংযোজন করা হয়েছে। তবে বছরজুড়ে গৃহীত উদ্যোগগুলোর প্রতিফলন এখনও বাজারে লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। তবে দীর্ঘ মেয়াদে সুফল পাওয়া যাবে বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।

এ বিষয়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সহ-সভাপতি মিজানুর রহমান খান দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘সার্বিক দিক বিবেচনা করলে এক বছরে (২০১৩) পুঁজিবাজারের ব্যাপক উন্নয়ন হলেও বিনিয়োগকারীরা লাভবান হননি। গুটি কয়েক দুর্বল মৌলভিত্তির কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করে অল্প সংখ্যক বিনিয়োগকারী লাভবান হয়েছে। সার্বিকভাবে এখনও লোকসান গুনছেন অধিকাংশ বিনিয়োগকারী। তবে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় বর্তমানে বাজার পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক।’

তিনি আরও বলেন, ‘এক বছরের উল্লেখযোগ্য ঘটনার মধ্যে- স্টক এক্সচেঞ্জের ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন ও বছরের শেষের দিকে আইওএসসিওর মানদণ্ডে বিএসইসি ‘এ’ ক্যাটাগরিতে উন্নীত হয়েছে। এ স্বীকৃতি আন্তর্জাতিক অঙ্গণে দেশের পুঁজিবাজারের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে।’

মিজানুর রহমান খান বলেন, ‘এক বছরে পুঁজিবাজারে স্থিতিশীলতা আনতে সরকার ও বিএসইসির পক্ষ থেকে সময়োপযোগী অনেক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। যার প্রতিফলন এখন না দেখা গেলেও ভবিষ্যতে এর ফল ভোগ করবেন বিনিয়োগকারীরা। তবে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি বড় বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরে আসেনি। এ ছাড়া প্রণোদনা প্যাকেজের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা এখনও বাস্তবায়ন হয়নি। আশা করা যায় বিনিয়োগকারীরা শিগগিরই পুনঃঅর্থায়ন তহবিলের সুবিধা পাবেন। এতে বাজারের উপর বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ ফিরবে।’

এদিকে, এক বছরের বাজার পরিস্থিতি নিয়ে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সৈয়দ সাজিদ হোসেন দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘এক বছরে দেশের অর্থনীতির সব সূচক ভালো ছিল। যার পরিপ্রেক্ষিতে পুঁজিবাজার স্বাভাবিক আচরণ করেছে। তবে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে সব খাতেই নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। সে হিসেবে পুঁজিবাজারেও কিছুটা প্রভাব পড়েছে। সব মিলিয়ে আগের যেকোনো বছরের তুলনায় গত এক বছর পুঁজিবাজার স্বাভাবিক ছিল।’

তিনি আরও বলেন, ‘‘স্টক এক্সচেঞ্জ দুটি ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে যা চলতি বছরের আলোচিত ঘটনা। আর বছরের শেষের দিকে আইওএসসিওর মানদণ্ডে বিএসইসি ‘বি’ থেকে ‘এ’ ক্যাটাগরিতে উন্নীত হয়েছে। যা ঐতিহাসিক অর্জন।”

২০১৩ বছরে পুঁজিবাজারে ঘটে যাওয়া উল্লেখযোগ্য ঘটনা

বিএসইসির আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি : বছরের শেষের দিকে ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন অব সিকিউরিটিজ কমিশনসের (আইওএসসিও) মানদণ্ডের ভিত্তিতে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ‘বি’ থেকে ‘এ’ ক্যাটাগরিতে উন্নীত হয়েছে। ২০ ডিসেম্বর স্পেনের মাদ্রিদে অবস্থিত আইওএসসিওর প্রধান কার্যালয় থেকে ক্যাটাগরি পরিবর্তনের বিষয়টি বিএসইসিকে নিশ্চিত করা হয়। এটা দেশের শেয়ারবাজারের জন্য আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। এর ফলে এখন থেকে আন্তর্জাতিক এনফোর্সমেন্টের বৃহত্তর সহযোগিতা পাবে বিএসইসি। পাশাপাশি বাংলাদেশের প্রতিনিধি আইওএসসিও এর বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন ও নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন। এ ছাড়া আইওএসসিওর নীতি নির্ধারক হিসেবেও বিএসইসি অবদান রাখতে পারবে।

স্টক এক্সচেঞ্জের ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন : ২০১৩ সালে পুঁজিবাজারের সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা হল ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন বা স্টক এক্সচেঞ্জের ব্যবস্থাপনা ও মালিকানা পৃথকীকরণ। ২১ নভেম্বর ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশনের সনদ পায় উভয় স্টক একচেঞ্জ। আইন অনুযায়ী ওই দিন থেকে পূর্ণাঙ্গ ডিমিউচ্যুয়ালাইজড হয়েছে দুই স্টক এক্সচেঞ্জ। এখন পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে স্টক এক্সচেঞ্জ দুটিকে। যা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

বিএসইসি ভবনের ভিত্তি উদ্বোধন : ২৪ নভেম্বর পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির নিজস্ব ভবনের ভিত্তি প্রস্তর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রাজধানীর আগারগাঁওয়ের শেরে-ই-বাংলা নগরে ১১তলা (বেইজমেন্টসহ) বিশিষ্ট এ ভবন নির্মাণের কাজ চলছে।

২১ কোম্পানি মিউচ্যুয়াল ফান্ডের তালিকাভুক্তি : ২০১৩ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির অনুমোদন পায় মোট ১৯টি কোম্পানি ও ২টি মিউচ্যুয়াল ফান্ড। অনুমোদন পাওয়া কোম্পানিগুলো হলো- মতিন স্পিনিং মিলস, এমারেল্ড অয়েল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, এএফসি এগ্রো বায়োটেক, মোজাফফর হোসাইন স্পিনিং মিলস, অ্যাপোলো ইস্পাত কমপ্লেক্স, প্যারামাউন্ট টেক্সটাইল, বাংলাদেশ বিল্ডিং সিস্টেমস, ফারইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট, সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যালস, ফ্যামিলিটেক্স বিডি, বেঙ্গল উইন্ডসোর থার্মোপ্লাস্টিক, ওরিয়ন ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, গ্লোবাল হেভী কেমিক্যাল, গোল্ডেন হারভেষ্ট, প্রিমিয়ার সিমেন্ট, আরগন ডেনিমস, সামিট পূর্বাঞ্চল পাওয়ার, সানলাইফ ইন্স্যুরেন্স এবং হা-ওয়েল টেক্সটাইল। এ ছাড়া মিউচ্যুয়াল ফান্ড দু’টি হল- এক্সিম ব্যাংক ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ড ও আইসিবি এএমসিএল সোনালী ব্যাংক লিমিটেড ফার্স্ট মিউচ্যুয়াল ফান্ড।

তবে শেয়ারবাজার থেকে অনেক কোম্পানির অতিরিক্ত অর্থ নেওয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে। এই ১৯টি কোম্পানির মধ্যে ১৬টি কোম্পানি বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে ১ হাজার ৯২ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছে। এর মধ্যে কোম্পানিগুলো প্রিমিয়াম নিয়েছে ৬৩৪ কোটি টাকা। এ ছাড়া আরও ৩টি কোম্পানি অর্থ সংগ্রহের অপেক্ষায় রয়েছে।

৭টি কোম্পানির রাইট ইস্যু : এক বছরে সাতটি কোম্পানি রাইট শেয়ার ছাড়ার মাধ্যমে পুনরায় মূলধন সংগ্রহের অনুমোদন পেয়েছে। এর মধ্যে ফিনিক্স ফাইন্যান্স বাজারে ৯২ লাখ ৪ হাজার ১৩৯টি রাইট শেয়ার ছেড়ে ৯ কোটি ২০ লাখ ৪১ হাজার ৩৯০ টাকা, পূরবী জেনারেল ইন্স্যুরেন্স ১ কোটি ৮৩ লাখ ৬৭ হাজার ৮০০টি শেয়ার ছেড়ে ১৮ কোটি ৩৬ লাখ ৭৮ হাজার টাকা, ফ্যাস ফাইন্যান্স ৫ কোটি ৪২ লাখ ৪৭ হাজার ৫৯৯টি শেয়ার ছেড়ে ৫৪ কোটি ২৪ লাখ ৭৫ হাজার ৯৯০ টাকা, ন্যাশনাল হাউজিং ফাইন্যান্স ৩ কোটি ৪৩ লাখ ২০ হাজার শেয়ার ছেড়ে ৩৪ কোটি ৩২ লাখ টাকা সংগ্রহ করেছে।

এ ছাড়া বিডি ফাইন্যান্স ৩ কোটি ৯০ লাখ ৮ হাজার ৫১৫টি রাইট শেয়ার ছেড়ে ৩৯ কোটি ৮৫ হাজার ১৫০ টাকা, আরামিট সিমেন্ট রাইট শেয়ারের মাধ্যমে ২৫ কোটি ৪১ লাখ টাকা মূলধন সংগ্রহ করবে। কোম্পানিটি মোট এক কোটি ৬৯ লাখ ৪০ হাজার সাধারণ শেয়ারের বিপরীতে ১:১ অনুপাতে (১টি সাধারণ শেয়ারের বিপরীতে ১টি) রাইট শেয়ার ছাড়বে। রূপালী লাইফ ১ কোটি ২০ লাখ ৮ হাজার ৩০৪টি শেয়ারের বিপরীতে ১:১ অনুপাতে রাইট শেয়ার ছাড়বে। ফেস ভ্যালু ১০ টাকার সঙ্গে ২০ টাকা প্রিমিয়ামসহ প্রতিটি রাইট শেয়ারের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৩০ টাকা। সে হিসেবে রাইট শেয়ারের মাধ্যমে কোম্পানিটি ৩৬ কোটি ২ লাখ ৪৯ হাজার ১২০ টাকা সংগ্রহ করবে।

ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য প্রণোদনা : সরকারের নির্দেশে শেয়ারবাজারে পুনঃঅর্থায়নের ঋণ সুবিধা বাবদ তিন কিস্তিতে ৯০০ কোটি টাকা দেওয়ার ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ সরকার। গত ২৬ আগস্ট পুনঃঅর্থায়ন তহবিলের প্রথম কিস্তির ৩০০ কোটি টাকা ছাড় করে বাংলাদেশ ব্যাংক। তহবিলের বাকি ৬০০ কোটি টাকা পরবর্তীকালে সমান দুই কিস্তিতে ছাড় করা হবে। সম্প্রতি ৪টি মার্চেন্ট ব্যাংক এবং ৩টি স্টক ব্রোকারের জন্য ৬৫ কোটি টাকা অনুমোদন দিয়েছে তহবিল তদারকি কমিটি।

১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত পুনঃঅর্থায়ন তহবিলের অর্থ সংগ্রহের জন্য ৩১টি মার্চেন্ট ব্যাংক থেকে ৭ হাজার ৩৮০ জন বিনিয়োগকারী আবেদন করেছেন। এর আগে ২২ আগস্ট অর্থ ছাড়ের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক, বিএসইসি ও আইসিবির মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

সিএসইতে নতুন লেনদেন নিষ্পত্তির সময়সীমা চালু : বিনিয়োগকারীদের সুবিধার্থে চলতি বছরের ৩ নভেম্বর চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) নতুন লেনদেন নিষ্পত্তির সময়সীমা (টি-২) চালু করা হয়। এর ফলে সিএসইতে লেনদেন নিষ্পত্তির কার্যক্রম ৪ দিনের পরিবর্তে ৩ দিনে সম্পন্ন হচ্ছে।

ডিএসইতে নতুন সূচক : দীর্ঘদিন ধরে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ভুল সূচকের প্রচলন ছিল। বিনিয়োগকারী ও সংশ্লিষ্টদের দাবির মুখে চলতি বছরের ২৭ জানুয়ারি ডিজিইএন বা সাধারণ সূচক সংশোধন করে ডিএসইএক্স বা ব্রড ইনডেক্স নাম রাখা হয়। এ ছাড়া ডিএস-৩০ নামে নতুন আরও একটি সূচক চালু করা হয়।

ডিএসইর বাংলা ওয়েব সাইট : বিনিয়োগকারীদের সুবিধার্থে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ওয়েবসাইটে বাংলা ভার্সন চালু করে ডিএসই। এতে বিনিয়োগকারীরা সহজেই ওয়েবসাইটে প্রকাশিত বিভিন্ন কোম্পানির সংবাদ পড়তে পারছেন।

বছর জুড়ে সূচকের উত্থান-পতন লেনদেন : বছর জুড়ে দেশের উভয় শেয়ারবাজারে সূচকের উত্থান-পতন থাকলেও, আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ডিএসই ও সিএসইর সূচক বেড়েছে। ২০১৩ সালের ২৭ জানুয়ারি ডিএসইএক্স সূচক ছিল ৪ হাজার ৫৫ পয়েন্ট। সর্বশেষ গত ২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত তা দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ২৮৮ পয়েন্টে। অর্থাৎ আলোচ্য সময়ে ডিএসইর সূচক বেড়েছে ২৩৩ পয়েন্ট। বছরের শুরুতে ডিএস-৩০ সূচক ছিল ১ হাজার ৪৬০ পয়েন্ট। সর্বশেষ গত ২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৪৮০ পয়েন্টে। অর্থাৎ আলোচ্য সময়ে সূচক বেড়েছে ২০ পয়েন্ট।

বছরের শুরুতে সিএসইর সিএসসিএস সূচক ছিল ৮ হাজার ১৩২ পয়েন্ট। সর্বশেষ ২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ৪৩৫ পয়েন্টে। অর্থাৎ আলোচ্য সময়ে সূচক বেড়েছে ৩০৩ পয়েন্ট।

চলতি বছরের শুরুতে ডিএসইর দৈনিক গড় লেনদেন ২০০ কোটি টাকার ঘরে থাকলেও সর্বশেষ তা ৪০০ কোটি টাকার ঘরে রয়েছে।

১ এপ্রিল ডিএসইসির ব্রড ইনডেক্স সর্বনিম্ন ৩৪৫৮ পয়েন্টে এবং ২০ নভেম্বর সর্বোচ্চ ৪৪৩৯ পয়েন্টে অবস্থান করে।

অমনিবাস অ্যাকাউন্ট বিলুপ্তি : ভুতুড়ে খ্যাত অমনিবাস অ্যাকাউন্ট বিলুপ্ত করেছে বিএসইসি। পুঁজিবাজারে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে অমনিবাসের নন-ডিসক্রিশনারি অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে সেগুলোকে পৃথক বিওতে রূপান্তর করা হয়েছে। বিএসইসির বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে অর্থাৎ চলতি বছরের ৩১ মার্চের মধ্যে নন-ডিসক্রিশনারি অ্যাকাউন্ট পৃথক বিওতে রূপান্তর করা হয়। ভয়াবহ ধসের পর পুঁজিবাজার কারসাজির রহ্স্য উদঘাটনে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের সুপারিশ অনুযায়ী নন-ডিসক্রিশনারি অ্যাকাউন্ট বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

সঞ্চিতি সংরক্ষণের বিশেষ সুবিধার সময় বৃদ্ধি : শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ থেকে সম্ভাব্য ক্ষতির বিপরীতে স্টক ব্রোকার/ ডিলার ও মার্চেন্ট ব্যাংকের সঞ্চিতি (প্রভিশন) সংরক্ষণের বিশেষ সুযোগের (২০ শতাংশ) সময় আরও এক বছর বাড়িয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। আগামী ৩১ ডিসেম্বর ২০১৪ পর্যন্ত ব্রোকার/ ডিলার ও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো পুনর্মূল্যায়নজনিত অনাদায়কৃত ক্ষতির বিপরীতে (আন-রিয়েলাইজড লস) শতভাগের পরিবর্তে ২০ শতাংশ সঞ্চিতি সংরক্ষণের বিশেষ সুবিধা ভোগ করতে পারবে।

রিসার্স অ্যানালাইসিস বিধিমালা : শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ-সংক্রান্ত রিসার্চ অ্যানালাইসিস বিধিমালা, ২০১৩ চূড়ান্ত হয়েছে। নীতিমালা অনুসারে পাঁচ ধরনের প্রতিষ্ঠান গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করতে পারবে। এগুলো হলো- স্টক ডিলার বা ব্রোকার, মার্চেন্ট ব্যাংক, সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান, বিনিয়োগ উপদেষ্টা অথবা কোনো রিসার্চ ফার্মের নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তি।

গত ২৪ জুলাই নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির ৪৮৭তম নিয়মিত সভায় এ অনুমোদন দেওয়া হয়। এ নীতিমালা প্রকাশের ফলে বাংলাদেশের শেয়ারবাজার ও নির্দিষ্ট কোম্পানি প্রসঙ্গে গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করতে পারবেন রিসার্চ অ্যানালিস্টরা। এতে বিভিন্ন শেয়ার ক্রয়-বিক্রয়ের সুপারিশও করতে পারবেন তারা।

মিউচ্যুয়ালফান্ড বিধিমালা সংশোধন : পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত সব মিউচ্যুয়াল ফান্ড নগদ লভ্যাংশের পাশাপাশি বোনাস ইউনিট দিতে পারবে। মিউচ্যুয়াল ফান্ড বিধিমালা সংশোধনের মাধ্যমে এ সুযোগ দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। গত ২৪ জুলাই কমিশনের ৪৮৭তম নিয়মিত সভায় সিকিউরিটিজ ও এক্সচেঞ্জ কমিশন (মিউচ্যুয়াল ফান্ড) বিধিমালা ২০০১’র বিধি ৬৬ এর সংশোধনী অনুমোদন দেওয়া হয়।

রাইট ইস্যু বিধিমালা সংশোধন : পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত যেকোনো কোম্পানির রাইট শেয়ার ইস্যুর ক্ষেত্রে করপোরেট গর্ভনেন্স গাইডলাইনস (সিজিজি) যথাযথভাবে পরিপালন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এক্ষেত্রে কোনো কোম্পানি নির্ধারিত গাইডলাইনস পরিপালন না করলে রাইট শেয়ার ইস্যুর অনুমোদন পাবে না।

মেম্বার মার্জিন লিমিট : ডিএসই সদস্যদের প্রতি লেনদেন দিবসের মেম্বার মার্জিনের ফ্রি লিমিট ৫ কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে ১০ কোটি টাকা করা হয়েছে। গত ৯ জানুয়ারি বিএসইসির ৪৬৪তম নিয়মিত কমিশন সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর ফলে ডিএসই’র সদস্যদের প্রতি কার্যদিবসে ১০ কোটি টাকার নিচে লেনদেনের জন্য অগ্রিম অর্থ জমা দিতে হবে না। তবে ১০ কোটি টাকার বেশি লেনদেন হলে লেনদেনকৃত অর্থের ৪০ শতাংশ অর্থ ডিএসইতে জমা দিতে হবে।

(দ্য রিপোর্ট/এনটি/এইচকে/আইজেকে/রাসেল/ডিসেম্বর ২৭, ২০১৩)

পাঠকের মতামত:

SMS Alert

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর