thereport24.com
ঢাকা, শুক্রবার, ২৯ মার্চ 24, ১৫ চৈত্র ১৪৩০,  ১৯ রমজান 1445

রানা প্লাজায় আটকা পোশাক শিল্পের কান্না

২০১৩ ডিসেম্বর ২৮ ২১:৫৮:৩৯
রানা প্লাজায় আটকা পোশাক শিল্পের কান্না

রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির কান্না থামছে না। এ ট্র্যাজেডি ২০১৩ সালের পুরোটা সময় বিব্রত করেছে পোশাক মালিক ও ক্রেতাদের। বছরজুড়ে কাঁদিয়েছে নিহত পোশাক শ্রমিকদের আত্মীয়-স্বজনদের। এখনো অনেকেই বোবা কান্না নিয়ে ঘুরে ফিরছেন নিখোঁজ আত্মীয়-স্বজনদের সন্ধানে। ক্ষতিপূরণের আশায় অনেকেই ঘুরছেন সংশ্লিষ্টদের দ্বারে দ্বারে। শ্রমিকদের সস্তা জীবন নিয়ে ‘ছিনিমিনি খেলা’র জন্য মালিকরাও সমালোচিত হয়েছেন বছরজুড়ে। কমপ্লায়েন্ট না হওয়ায় ব্যবসা হারিয়েছেন অনেক উদ্যোক্তা। যেন পোশাক শিল্পের সব কান্না আটকে আছে সাভারের অভিশপ্ত ভবন রানা প্লাজায়।

রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় বাংলাদেশে ৪০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টিকারী গুরুত্বপূর্ণ গার্মেন্ট খাতে নিম্নমানের কর্মপরিবেশের বিষয়টি দেশে নয়, বিদেশেও বড় প্রশ্ন হিসেবে দেখা দেয়। ইউরোপ ও আমেরিকার বাজারে শীর্ষস্থানীয় সব ক্রেতারা পোশাক তৈরির কারখানাগুলোর কর্মপরিবেশ উন্নতির জন্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে আলোচনা শুরু করে। ওয়ালমার্ট, গ্যাপ ও এইচঅ্যান্ডএমসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে গঠিত বায়ারদের একটি গ্রুপ পোশাক শ্রমিকদের নিরাপত্তায় আরও উন্নতমান নিশ্চিত করার জন্য চাপ দেয় বাংলাদেশকে। তারপরেও সার্বিকভাবে তেমন অগ্রগতি হয়নি এ খাতে।

রানা প্লাজা ধসের পরেও আগুনের ঘটনায় বিচ্ছিন্ন কিছু গার্মেন্ট কারখানায় আরও কিছু মানুষের প্রাণ গেছে। এতে পোশাক শিল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে বেশ চিন্তিত হয়ে পড়েন উদ্যোক্তারা।

২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর সাভারের নিশ্চিন্তপুরে তাজরিন ফ্যাশনসে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ১১২ জন শ্রমিক জীবন্ত দগ্ধ হয়ে মারা যান। এতে মারাত্মক ইমেজ সংকটে পড়ে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প। বায়াররা বাংলাদেশের শ্রমিকদের নিরাপত্তার প্রশ্ন তুলে বাংলাদেশ থেকে অর্ডার কমিয়ে দেয়। এ ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই ২০১৩ সালে ২৪ এপ্রিল সাভারের রানা প্লাজা ধসে সহস্রাধিক শ্রমিক মারা যাওয়ায় চরম বিপর্যয়ের মধ্যে পড়ে পোশাক শিল্প। রানা প্লাজা ধসের পর পোশাক শ্রমিকদের নিরাপত্তা ও নিশ্চিয়তা নিয়ে বাড়তে থাকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চাপ। সেই সঙ্গে যোগ হয় শ্রমিকদের বেতন-ভাতা বাড়ানোর আন্দোলন ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিরোধীদলীয় রাজনৈতিক জোটের হরতাল ও অবরোধের মতো কর্মসূচি। এসব ঘটনায় ২০১৩ সালে তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের ব্যবসা হারানোর কান্নাও ছিল চোখে পড়ার মতো। শ্রম অসন্তোষের কারণে অনেকেই ব্যবসা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য সরকারের কাছে নিরাপদ এক্সিট প্লান চাচ্ছেন।

সর্বশেষ স্ট্যান্ডার্ড গার্মেন্ট কারখানার মতো অতি উচ্চমানের একটি কমপ্লায়েন্ট কারখানা জ্বালিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটে। এর মাধ্যমে ২৮ বছরে সুপরিকল্পিতভাবে তিলে তিলে গড়ে তোলা প্রতিষ্ঠানটি সম্পূর্ণরূপে শেষ হয়ে যায়।

এ কারখানায় ছিল না কোনো শ্রম অসন্তোষ। বাংলাদেশের গার্মেন্ট খাতে এ প্রতিষ্ঠানটি ছিল ‘রোল মডেল’। এ রকম অবস্থায় দুর্বৃত্তরা যখন এক রাতে তা জ্বালিয়ে পুড়িয়ে নিঃশেষ করে দেয়। তখন উদ্যোক্তাদের কান্না থামানোর আর কোনো উপায় ছিল না কারো কাছে। তাইতো সেদিন নিজের কান্না ধরে রাখতে পারেননি স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন।

তিনি নিজেও কেঁদেছিলেন শ্রমিকদেরও কাঁদিয়েছিলেন। তার কান্নায় ঐক্যবদ্ধ হয়েছিলেন তৈরি পোশাক শিল্পসহ দেশের সব শিল্প উদ্যোক্তারা। শিল্পকারখানা ধ্বংস, জ্বালাও-পোড়াও আর রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের বিরুদ্ধে পোশাক মালিকরা গত ৭ ডিসেম্বর রাজপথে নেমে এসেছিলেন মানববন্ধন কর্মসূচি নিয়ে। পরবর্তী সময়ে তাদের আন্দোলনে শামিল হয় দেশের শীর্স্থানীয় বাণিজ্য সংগঠন এফবিসিসিআই। তারা ১৫ ডিসেম্বর দেশব্যাপী সাদা পতাকার প্রতিবাদ বন্ধন করেন।

এ সব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৩ বছরটি কেমন গেছে সে বিষয়ে জানতে চাইলে এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইএবি) সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী বলেন, ‘২০১৩ সালটি তৈরি পোশাক শিল্প মালিক ও শ্রমিকদের জন্য কান্নার বছর। নানা ঘাত-প্রতিঘাত আর দুর্ঘটনার মধ্যে পার হয়েছে এ বছরটি। তাজরীন ফ্যাশনসের পর রানা প্লাজা ধস, শ্রমিক আন্দোলন, মোহাম্মদপুরের স্মার্ট গার্মেন্ট, স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপ, মণ্ডল গ্রুপ, পলমল গ্রুপের আসওয়াদ টেক্সটাইল, আমান টেক্সটাইলসহ বেশ কিছু গার্মেন্ট কারখানা দুর্বৃত্তরা জ্বালিয়ে দেয়। এতে অনেক উদ্যোক্তা নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন।’

(দ্য রিপোর্ট/এআই/এনডিএস/এইচএসএম/ডিসেম্বর ২৮,২০১৩)

পাঠকের মতামত:

SMS Alert

ফিরে দেখা ২০১৩ এর সর্বশেষ খবর

ফিরে দেখা ২০১৩ - এর সব খবর