thereport24.com
ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল 24, ১২ বৈশাখ ১৪৩১,  ১৬ শাওয়াল 1445

ঢাকার সঙ্গে সব জেলার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন

২০১৩ ডিসেম্বর ২৯ ০৪:৩৪:০৪
ঢাকার সঙ্গে সব জেলার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন

দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : প্রধান বিরোধী জোটের ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে রাজধানীকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। ঢাকার সঙ্গে সব জেলার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। ঢাকার বাইরে থেকে রাজধানীমুখী কোনো পরিবহন আসতে দেওয়া হচ্ছে না। বাতিল করা হয়েছে ঢাকামুখী অধিকাংশ ট্রেনের যাত্রা। সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে ভিড়তে দেয়া হয়নি কোনো লঞ্চ। ঢাকা মহানগরের সঙ্গে জেলার অন্যান্য উপজেলারও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ মানুষ।

নাশকতার আশঙ্কায় ঢাকার বিভিন্ন পয়েন্টে অতিরিক্ত পুলিশ, র‌্যাব মোতায়েন করা হয়েছে। পাশাপাশি চেকপোস্ট বসিয়ে যানবাহন, যাত্রী ও পথচারীদের তল্লাশি করা হচ্ছে। এ ছাড়া বিজিবি ও সেনাবাহিনীর টহলে রয়েছে।

এদিকে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে ঢাকার অন্যান্য উপজেলা বিশেষ করে সাভার, ধামরাই, কেরানীগঞ্জ এবং পাশ্ববর্তী জেলা নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, গাজীপুর ও মানিকগঞ্জ থেকে ঢাকামুখী মানুষকে। এ সব এলাকা থেকে প্রয়োজনীয় কাজে ঢাকায় আসা যাত্রীদের বাস থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে রাজধানীর প্রবেশ পথে। আর এসব যাত্রীদের মধ্যে সন্দেহভাজনদের আটকের মতোও ঘটনা ঘটেছে।

যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রাজধানী :

বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ কর্মসূচিকে ‘রুখতে’ রাজধানীমুখী সকল যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সরকার সমর্থিত সংগঠন মটরচালক লীগের আহ্বানে ২৮ ও ২৯ ডিসেম্বর দুই দিনব্যাপী হরতালের প্রথম দিনে ঢাকার সঙ্গে সারাদেশের যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে।

দ্য রিপোর্টের বিভিন্ন জেলা প্রতিনিধিদের দেয়া তথ্য থেকে জানা যায়, শুক্রবার রাতে খুলনা থেকে ঢাকামুখি কোনো বাস ও ট্রেন ছেড়ে আসেনি। তবে বাস চলাচল বন্ধের কারণ হিসেবে পরস্পরবিরোধী বক্তব্য দিয়েছে বাস মালিক ও স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন। উভয়েই রুট বন্ধের কারণ হিসেবে পরস্পরের নির্দেশের কথা বলেছেন।

এদিকে একই দিন থেকে বন্ধ হয়ে গেছে পটুয়াখালী থেকে ঢাকামুখী সকল বাস ও লঞ্চ চলাচল। স্থানীয় বাস ও লঞ্চ কর্মকর্তারা জানান, মালিকদের নির্দেশে চলাচল বন্ধ রয়েছে।

যশোর ও ঝিনাইদহ জেলা থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ি শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকেই ঢাকামুখী সকল বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। বন্ধ রয়েছে টিকিট বিক্রি। বাতিল করা হয়েছে অগ্রিম টিকিট। বাস মালিকদের নির্দেশেই চলাচল বন্ধ রয়েছে বলে জানিয়েছেন পরিবহন শ্রমিকেরা। একই ধরণের তথ্য পাওয়া যায় রাজশাহী, পিরোজপুর, কুমিল্লা, নোয়াখালী, রংপুর, সিলেটসহ অন্যান্য জেলাগুলো থেকে।

এদিকে বাইরের জেলাগুলো থেকে কোনো বাস, লঞ্চ ও ট্রেন রাজধানীতে প্রবেশ করতে না দেওয়ায় ঢাকা থেকে দেশের বিভিন্ন জেলায় গন্তব্যরত যাত্রীদের পড়তে হয়েছে চরম ভোগান্তিতে। এসব যাত্রীরা আগে ভাগেই বাস টার্মিনাল, লঞ্চ ঘাট ও রেল স্টেশনে গিয়ে পৌছালেও ছেড়ে যায়নি কোনো বাহন। ফলে অনেককেই যাওয়া হয়নি নিজ গন্তব্যে।

রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন বিভাগীয় জেলা শহরের উদ্দেশে কোনো বাস ছেড়ে যায়নি। আবার শুক্রবার বিকেলের পর থেকে দেশের অন্যান্য জেলা থেকে ঢাকা অভিমুখে কোনো যাত্রীবাহী বাস আসছে না। ফলে ঢাকার সঙ্গে সকল জেলা-উপজেলার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।

গাবতলী টার্মিনালের ঈগল পরিবহনের টিকেট বিক্রেতা আলী নেওয়াজ দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘শুক্রবার রাত পর্যন্ত গাবতলী থেকে গাড়ি ছেড়ে গেছে। কিন্তু সকাল খেকে আমরা গাড়ি বের করছি না। কারণ রাজনৈতিক পরিস্থিতি খারাপ রয়েছে। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন জেলাতে হরতাল কর্মসূচি চলছে। এর মধ্যে গাড়ি ছাড়া আমরা নিরাপদ মনে করছি না। আর পর্যাপ্ত যাত্রী না নিয়ে বাস ছাড়লে তো আমাদের ক্ষতি। কবে থেকে যান চলাচল স্বাভাবিক হবে তাও সঠিকভাবে বলতে পারছি না।’

এদিকে সারাদেশের সাথে ঢাকার রেল যোগাযোগ কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। শনিবার সকাল ৮টার পর থেকে কোন ট্রেন রাজাধানীতে প্রবেশ করেনি। তবে এর আগে চট্রগ্রাম, সিলেট, ময়মনসিংহ থেকে কয়েকটি ট্রেন ঢাকায় আসলেও খুলনা, রাজশাহী, রংপুর থেকে কোন ট্রেন ঢাকায় প্রবেশ করেনি।

রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার থেকে রাজশাহী, খুলনা ও রংপুর থেকে কোন ট্রেন রাজধানীতে প্রবেশ করেনি।

কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার কামরুজ্জামান দ্য রিপোর্টকে বলেন, শনিবার সকাল আটটার আগে কিছু ট্রেন আসলেও এর পর কোন ট্রেন আসেনি। রংপুর , রাজশাহী ও খুলনা অঞ্চল থেকে গত শুক্রবার রাত থেকে কোন ট্রেন ঢাকায় প্রবেশ করেনি।

রাজধানীর পথে পথে চেকপোস্ট :

চেক পোস্টের নগরীতে পরিণত হয়েছে রাজধানী ঢাকা । রাজধানী ঢাকার প্রতিটি প্রবেশ মুখে বসানো হয়েছে র‌্যাব ও পুলিশের কয়েক দফা চেক পোস্ট।

রাজধানীর ভিতরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, পোস্তাগোলায় বুড়িগঙ্গা নদীর উপর নির্মিত বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু, বাবুবাজার ব্রীজ, যাত্রাবাড়ীসহ শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে বসানো হয়েছে পুলিশ চেক পোস্ট।

ঢাকার বাইরে থেকে কোনো প্রকার যাত্রীবাহী বাস প্রবেশ করতে দেখা যায়নি। তবে বেশকিছু সিএনজি এবং মালবাহী ট্রাক আসতে দেখা গেছে।

ঢাকামুখী প্রতিটি যানবাহনে আগত যাত্রীদেরকে গাড়ি থেকে নামিয়ে তল্লাসি করছে পুলিশ সদস্যরা। বাদ যাচ্ছে না প্রাইভেট গাড়ি, মোটর সাইকেল, কিংবা অ্যাম্বুলেন্সও। যাত্রীদের কাছে থাকা ব্যাগ খুলে প্রতিটি জিনিসপত্র বের করে দেখা হচ্ছে। এমনকি খাবার নেওয়ার জন্য টিফিন বাটির প্রত্যেকটা অংশ খুলে চেক করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পোস্তাগোলা চেকপোস্টে দায়িত্বরত পুলিশের উপ-পরিদর্শক শ্রী কৃষ্ণ দাস বৈরাগী দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘আমরা নাশকতা ঠেকাতে প্রতিটি গাড়ি চেক করছি। আর সন্দেহভাজন মনে হলে গাড়িসহ যাত্রীদেরকে ঢাকায় ঢুকতে না দিয়ে ফেরত যাওয়ার নির্দেশ দিচ্ছি।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ডিসি আমাদেরকে যেভাবে নির্দেশ দিয়েছেন আমরা সেভাবেই কাজ করছি। কোন গাড়ি প্রবেশ করতে দিচ্ছি না।

ভোগান্তিতে সাধারণ মানুষ, অসহায় নিম্নবিত্তরা :

রাজনৈতিক অস্থিরতা ও বিভিন্ন কর্মসূচিতে অতিষ্ঠ সাধারণ মানুষ। এমনই একজন গাবতলী টার্মিনালের ফল ব্যবসায়ী চাঁন মিয়া। তার সঙ্গে কথা বলা হলে তিনি দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘সকাল সাড়ে ৬টায় দোকান খুলেছি। এখনও একজন ক্রেতা আসেনি। আর আসবে কি করে, সব বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। অন্যদিন এ সময় হাজার টাকা বেচা-বিক্রি হয়। কিন্তু সকাল থেকে এখনও বওনি করতে পারিনি। এভাবে চলতে থাকলে না খেয়ে মরা লাগবে।’

পল্টন এলাকায় ফুটপাতে বসানো বইয়ের দোকানি আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে কথা বলা হলে তিনি জানান, সন্ধ্যার পরপরই পুলিশ এসে তাদেরকে দোকান বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে। কয়েকটি দোকান পুলিশ জোর করে বন্ধ করে দিয়ে যায় বলেও আনোয়ার জানায়।

পল্টন, বিজয়নগর, মতিঝিল, দৈনিক বাংলামোড় ও গুলিস্থান এলাকাগুলো ঘুরে দেখা যায়, এই সকল এলাকার কোনো ফুটপাতের দোকান খোলা নেই। এমন কী এই সকল এলাকায় কোনো লোকজনের যাতায়াত নেই। মনে হচ্ছে এ যেন জন-মানবহীন এক ভূতুড়ে শহর। অথচ এই রাস্তাগুলো অন্যান্য রাতে অনেক মানুষের আনাগোনা দেখা যায়। চলতে থাকে অনেকের কেনাকাটা।

তল্লাশি আটক :

রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে এ পর্যন্ত ৩৫৫ জনকে আটক করেছে যৌথবাহনী। আটককৃতদের মধ্যে ২০ জন তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী রয়েছে। এছাড়া ১৭০ জনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় মামলা রয়েছে। আটককৃতদের মধ্যে কেউ নিরপরাধ আছে কি না তা যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে বলেও জানায় ডিএমপি।

জানা গেছে, যৌথবাহিনীর অভিযানে অনেক নিরপরাধ লোক হয়রানির শিকার হচ্ছে। বিভিন্ন এলাকায় যৌথবাহিনীর অভিযানের সময় দুর্ব্যবহার করছে। এছাড়া বাসায় মালামাল ভাঙচুর করছে বলেও জানা গেছে।

এ সম্পর্কে সেনপাড়ার স্থানীয় বাসিন্দা হারুন অর রশিদ জানান, মিরপুর এলাকার অভিযানে অনেক নিরপরাধ মানুষকে আটক করেছে যৌথবাহিনী। গভীর রাতে বিভিন্ন বাসায় ভাঙচুর করেছে বলেও তিনি জানান।

তেজগাঁও বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার বিল্পব কুমার সরকার বলেন, যৌথবাহিনীর অভিযানে সন্দেহভাজনদেরই আটক করা হচ্ছে। তবে যারা নিরপরাধ আছে তাদের যাচাই-বাছাই শেষে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে।

(দ্য রিপোর্ট/ এইচআর/এমডি/ ডিসেম্বর ২৯, ২০১৩)

পাঠকের মতামত:

SMS Alert

মার্চ ফর ডেমোক্রেসি এর সর্বশেষ খবর

মার্চ ফর ডেমোক্রেসি - এর সব খবর