নীলফামারী সংবাদদাতা : দুমুঠো ভাতের আশায় মানুষের কাছে হাত পেতে যিনি জীবন নির্বাহ করতেন, যার কোন আত্মীয়-স্বজন ছিল না, সবাই যাকে ‘পাগল’ বলে অবিহিত করতেন; অবশেষে তিনি তার পরিবার ফিরে পেলেন।

আরডিআরএস বাংলাদেশের এক কর্মকর্তার সহযোগিতায় পাগল আনুরা বেগম তার পরিবারের সান্নিধ্যে আসেন।

১০ মাস পূর্বে ঠাকুরগাঁও জেলার বালিয়াডাঙ্গি উপজেলার ধনতলা গ্রামের মো. সিটালুর স্ত্রী আনুরা বেগম (৪৮) পাগল হয়ে যান। একদিন হঠাৎ তিনি নিখোঁজ হন। স্বামী, এক ছেলে ও দুই মেয়েসহ আত্মীয়-স্বজন অনেক খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে ধরেই নিয়েছিলেন তাকে আর পাওয়া যাবে না।

গেল বছর অক্টোবর মাসের একদিন আনুরা বেগম আরডিআরএস বাংলাদেশ ডোমার শাখার প্রতিভা প্রজেক্টের টেকনিক্যাল অফিসার মো. মুসলিম উদ্দিনের কাছে তার আঞ্চলিক ভাষায় ভিক্ষা চান। ওই কর্মকর্তারও আঞ্চলিক ভাষা একই হওয়ায় তিনি আনুরাকে জিজ্ঞাসা করেন, তোমার বাড়ি কোথায়? আনুরা বলেন বালিয়াডাঙ্গি। প্রশ্ন করেন, কে কে আছে? উত্তরে বলেন, স্বামী, ছেলে ও মেয়ে। তাদের নাম জানতে চাইলে আনুরা কিছুই বলতে পারেন না।

মুসলিম উদ্দিন যখন বলেন তারও বাড়ি বালিয়াডাঙ্গি। তখন আনুরা বেগম তার কাছে জেদ ধরেন স্বামী, ছেলে ও মেয়ের কাছে ফিরে যাবেন। এরপর থেকে আরডিআরএসের ওই কর্মকর্তা আনুরার পরিবারের খোঁজ শুরু করেন।

অবশেষে ২২ জানুয়ারি বুধবার রাতে ধনতলা ফেডারেশনের চেয়ারম্যান যতীন্দ্রনাথ সিংহের সহযোগিতায় আনুরার পরিবারের খোঁজ মেলে। আর শুক্রবার সকাল হতেই আনুরা বেগমের ছেলে আজাহারুল ইসলাম (২২) ডোমার আরডিআরএসের ওই কর্মকর্তার কাছে আসেন। তারা ডোমার থানার একটি পরিত্যক্ত কক্ষে যান। সেখানে গিয়ে আজাহারুল ইসলাম তার মা আনুরাকে দেখতে পান। মা-ছেলে একে-অপরেকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকেন। এ সময় সেখানে উপস্থিত মানুষের চোখেও জল এসে যায়।

আজাহারুল মাকে নিয়ে ফিরে আসেন বালিয়াডাঙ্গির ধনতলা নিজ গ্রামে।

তিনি জানান, আমার মাকে যারা খাবার দিয়েছেন, দেখাশুনা করেছেন, আমি ও আমার পরিবার তাদের কাছে ঋণী। ১০ মাস পর মাকে পেয়ে আমি খুবই আনন্দিত।

আরডিআরএসের কর্মকর্তা মুসলিম উদ্দিন জানান, আমি নিজ দায়িত্ব থেকেই এ কাজ করেছি। আমার সহযোগিতায় এক পাগল তার পরিবারের কাছে ফিরে যেতে পেরেছে এ জন্য আমি নিজেই গর্ববোধ করছি।

তিনি আরও জানান, আনুরা বেগম নিখোঁজের পর চলে আসেন ডোমারে। পরিবারের কারও কথা মনে না থাকলেও পেটের দায়ে তিনি দিনের বেলায় ভিক্ষা করতেন আর রাতের বেলায় ডোমার থানাসংলগ্ন এক পরিত্যক্ত কক্ষে ঘুমাতেন। ভিক্ষা করে যে টাকা ও খাবার পেতেন তা দিয়ে নিজে খেতেন এবং আশপাশের নিরীহ লোকদের খাওয়াতেন। এতে খুব অল্প সময়ের মধ্যে ওই এলাকায় সবার নজরে পড়েন তিনি। তার ব্যবহারে সবাই সন্তুষ্ট হয়ে তাকে খাবার দিতেন।

বাড়ি কোথায় জানতে চাইলে তিনি কিছুই বলতে পারতেন না। এরপর আস্তে আস্তে তার কিছু কিছু কথা মনে পড়ে। আবার তিনি ভুলে যেতেন।

(দ্য রিপোর্ট/এমএএম/এমএআর/এনআই/জানুয়ারি ২৪, ২০১৪)