দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: আর্থিক বছর শেষ হওয়া কোম্পানিগুলো অল্প কিছুদিনের মধ্যে লভ্যাংশ ঘোষণা করবে এমন ইস্যুকে কেন্দ্র করে পুঁজিবাজারে চাঙ্গাভাব বিরাজ করছে বেশ কিছুদিন ধরে। ক্রমাগত বাড়ছে টাকার অংকে দৈনিক লেনদেনের পরিমাণ এবং মূল্য সূচক। তবে দীর্ঘ রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে ব্যবসা বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় প্রতিষ্ঠানগুলো বিনিয়োগকারীদের কতটুকু আশ্বস্ত করতে পারবে তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞরা। পাশাপাশি বাজারে একটানা ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে বলেও মনে করছেন তারা।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) দৈনিক গড় লেনদেন হয়েছে সাড়ে ৪০০ কোটি টাকা। এরপর থেকে ক্রমাগত বাড়তে থাকে মূল্য সূচক ও দৈনিক লেনদেনের পরিমাণ। মাত্র ১০ কার্যদিবসের ব্যবধানে দৈনিক লেনদেন ৮৩৩ কোটি টাকায় পৌঁছেছে।

গত ৮ জানুয়ারি ডিএসইতে লেনদেন হয় ৫৩৯ কোটি ৭০ লাখ টাকা, ৯ জানুয়ারি ৫১৭ কোটি ৫৮ লাখ টাকা, ১২ জানুয়ারি ৬১৯ কোটি ৫৪ লাখ টাকা, ১৩ জানুয়ারি ৬৫০ কোটি ৬৭ লাখ, ১৫ জানুয়ারি ৬৯৩ কোটি ১ লাখ, ১৬ জানুয়ারি ৬৪৩ কোটি ৫১ লাখ, ১৯ জানুয়ারি ৭০৮ কোটি ৭ লাখ, ২০ জানুয়ারি ৬১০ কোটি ৮৭ লাখ, ২১ জানুয়ারি ৭১০ কোটি ৮৯ লাখ, ২২ জানুয়ারি ৮৩৪ কোটি ৮৮ লাখ এবং ২৩ জানুয়ারি লেনদেন হয়েছে ৮৩৩ কোটি ৬০ লাখ টাকার শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ইউনিট।

মূল্য সংশোধন না হলে দৈনিক লেনদেনে ক্রমাগত উন্নতি অবশ্যই চিন্তার কারণ। রাজনৈতিক অস্থিরতা কমে যাওয়ায় বাজারে কিছু অলস অর্থ প্রবেশ করছে। যে কারণে বিনিয়োগকারীরা নতুন করে পুঁজিবাজারমুখী হচ্ছেন। তবে বিনিয়োগের পূর্বে তিনটি বিষয়ে মনোযোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ আবু আহমেদ। তিনি সাবধানতার সঙ্গে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পাশাপাশি গুজবে কান না দেওয়া এবং ভালো মৌলভিত্তির শেয়ারে বিনিয়োগের পরামর্শ দিয়েছেন।

আমাদের দেশের অধিকাংশ বিনিয়োগকারী বুদ্ধিদীপ্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না বলে মনে করছেন এ বিশেষজ্ঞ। তাই তিনি নীতিনির্ধারক সংস্থা বিশেষ করে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এবং উভয় স্টক এক্সচেঞ্জকে বিনিয়োগকারীদের পুঁজির নিরাপত্তা বিধানে সক্রিয় ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়েছেন।

অপরদিকে দীর্ঘদিন ধরে বাজার অবমূল্যায়িত হওয়ার কারণে বর্তমানে বিনিয়োগকারীরা কিছুটা মুনাফা তুলে নেওয়ার চেষ্টা করছেন। রাজনৈতিক অস্থিরতা কমে যাওয়ায় অনেকে বাজারমুখী হচ্ছেন বলে মনে করছেন বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান এবং সাবেক তত্ববধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম।

তিনি দ্য রিপোর্টকে বলেন, প্রতিষ্ঠানগুলো ভালো মুনাফা দেবে এমনটা আশা করা কঠিন। কারণ, দীর্ঘ রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে ব্যবসা বাণিজ্যে তেমন উন্নতি হয়নি। আর জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে ব্যাংকগুলো ভালো ফলাফল করতে না পারায় বছর শেষে ভালো মুনাফার আশা করাটা খুব বেশি যৌক্তিক হবে না।

তিনি আরও বলেন, ব্যবসা বাণিজ্য বাধাগ্রস্ত হওয়ায় অনেক অলস অর্থ পুঁজিবাজারে প্রবেশ করেছে। অবমূল্যায়িত শেয়ার থেকে মুনাফা তুলে নেওয়ার প্রত্যাশায় অনেক নতুন করে বাজারমুখী হয়েছেন। এসব কারণে দৈনিক লেনদেন বাড়ছে।

তবে বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে দুর্বল মৌলভিত্তির শেয়ারগুলোর যাতে অতিমূল্যায়িত না হয় সেজন্য বিএসইসি এবং উভয় স্টক এক্সচেঞ্জকে সক্রিয় ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়েছেন মির্জ্জা আজিজ।

এ বিষয়ে কয়েকজন বিনিয়োগকারীর সঙ্গে আলোচনা করলে তারা জানান, কোম্পানিগুলোর বোর্ড সভার দিন অনেকে শেয়ার ছেড়ে বেরিয়ে যাবেন। কারণ, কী পরিমাণ লভ্যাংশ আসতে পারে হিসেব নিকেশ করলে তা বোঝা যায়। তাই বোর্ড সভার তারিখ ঘোষণার আগ পর্যন্ত অনেকে শেয়ার দর বাড়িয়ে নিচ্ছেন কৃত্রিমভাবে। এ সুযোগে অনেকে লোকসানী শেয়ার থেকে মুনাফা তুলে নেওয়ার চেষ্টাও করছেন। এসব কারণে বাজার ক্রমাগত ঊর্ধ্বমুখী অবস্থায় রয়েছে।

(দ্য রিপোর্ট/ডব্লিউএন/জানুয়ারি ২৫, ২০১৪)