দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেফতার জামায়াতের জ্যেষ্ঠ নায়েবে আমির একেএম ইউসুফের বিরুদ্ধে তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়েছে।

চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে গঠিত তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এ সোমবার তদন্ত কর্মকর্তা মো. হেলাল উদ্দিন শেষ সাক্ষী হিসেবে তার সাক্ষ্য প্রদান করেন। এরপর আগামী বুধবার পর্যন্ত মামলার কার্যক্রম মুলতবি করেন ট্রাইবুনাল।

সাক্ষ্য প্রদানকালে তদন্ত কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘বাংলা একাডেমি এবং পিআইবি থেকে ১৯৭১ সালের পূর্বের ও পরবর্তী সময়ের বিভিন্ন পত্রিকা পর্যালোচনা করি। প্রয়োজনীয় নথিপত্র জব্দ করি। আসামি একেএম ইউসুফের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা সংক্রান্ত ওই সব বিভিন্ন নথিপত্র পর্যালোচনা করি।’

তদন্তের বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘তদন্তকালে গত ২০১২ সালের ১৩ ডিসেম্বর বাংলা একাডেমি থেকে ১৬টি পত্রিকা, ১৭ ডিসেম্বর ১৪টি পত্রিকা ও ২০ ডিসেম্বর ১৬৪টি পত্রিকা জব্দ করে সংশ্লিষ্ট অংশ স্ক্যান করে মূল পত্রিকাগুলো জিম্মায় প্রদান করি।’

‘এ ছাড়া তদন্তকালে গত বছরের ৩ মার্চ পিআইবি’র লাইব্রেরি থেকে দুইটি পত্রিকা জব্দ করে সংশ্লিষ্ট অংশের স্ক্যান কপি সংগ্রহ করে মূল পত্রিকাগুলো জিম্মায় প্রদান করা হয়। ২০১৩ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি তদন্ত সংস্থার লাইব্রেরি থেকে জেলা প্রশাসক বাগেরহাট থেকে প্রাপ্ত তথ্য ফটোকপি সংগ্রহ এবং মূলকপি এসআই আনিসুর রহমানের জিম্মায় প্রদান করেন’ বলেন তিনি।

হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘তদন্ত সংস্থার লাইব্রেরিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রাপ্ত রাজাকার অর্ডিনেন্স, দ্য ঢাকা গেজেট, লিস্ট অব এমএন এ’স নবম খণ্ড পৃষ্ঠা-২৪৩, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের লাইব্রেরি থেকে অধ্যাপক আবু সাইদের লেখা যুদ্ধাপরাধ প্রেক্ষিত বাংলাদেশ বইয়ের ১২৮-১৩২ পৃষ্ঠা সিজ, সাহিত্য বিলাশ ৩৮/৪ বাংলা বাজার ঢাকা থেকে স্বরচিত সরকারের লেখা ‘একাত্তরের বাগেরহাট’ বইটি জব্দ করি। এটিএন বাংলা টেলিভিশন চ্যানেলে প্রচারিত প্রামাণ্য চিত্র ‘একাত্তরের ঘাতকেরা’ নামক ডিভিডি পত্রের মাধ্যমে সংগ্রহ করি।’

ইউসুফের বিরুদ্ধে গত ২০১২ সালের ৫ অক্টোবর থেকে গত বছরের ২১ এপ্রিল পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে ঘটনাস্থলে হাজির হয়ে মামলা সংক্রান্ত বিভিন্ন সাক্ষীদের জিজ্ঞাসাবাদ করে তাদের জবানবন্দি লিপিবদ্ধ ও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন বলে আদালতে জানান তিনি।

সাক্ষ্য পেশ শেষে মো. হেলাল উদ্দিনের আংশিক জেরা করেন ইউসুফের আইনজীবী মিজানুল ইসলাম। এ সময় প্রসিকিউটর সৈয়দ হায়দার আলী উপস্থিত ছিলেন।

গত বছরের ৬ সেপ্টেম্বর প্রসিকিউটর রেজাউর রহমান একেএম ইউসুফের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন করেন। ওই দিন থেকে তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। তার বিরুদ্ধে মোট ২৭ জন সাক্ষী তাদের সাক্ষ্য আদালতে পেশ করেছেন।

এর আগে গত ১ আগস্ট ইউসুফের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ গঠন করেন ট্রাইব্যুনাল। একাত্তরে হত্যা, গণহত্যা, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটসহ চার ধরনের ১৩টি অভিযোগে তাকে অভিযুক্ত করা হয়।

গত ১২ মে প্রসিকিউশনের দাখিল করা আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নিয়ে ইউসুফের বিরুদ্ধেগ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে ট্রাইব্যুনাল। ওই দিনই ধানমন্ডির বাসা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

(দ্য রিপোর্ট/এসএ/এনডিএস/জানুয়ারি ২৭, ২০১৪)