দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : ‘সরকার ও ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণই বর্তমান সরকারের ভবিষ্যৎ কর্মসূচির প্রধান লক্ষ্য’ বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এরই অংশ হিসেবে বাজেট বিকেন্দ্রীকরণের কথাও জানান তিনি।

তিনি বলেন, আগামী বাজেটে সাতটি বিভাগীয় শহরের সাতটি জেলা ‘জেলা বাজেটের’ আওতায় আনা হবে। ওই বাজেট তারাই বাস্তবায়ন করবে। এটা কীভাবে করা যায় সেই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

সচিবালয়ে বুধবার দুপুরে ‘ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরাম অব বাংলাদেশ’ (আইবিএফবি) এর সঙ্গে এক সৌজন্য বৈঠকে তিনি এ সব কথা জানান। সংগঠনের সভাপতি হাফিজুর রহমান খান এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘এটা অবধারিত সত্য যে, সিদ্ধান্তটি নিচু স্তরে নিতে পারলে সেটা যথাযথ হয় এবং এর বাস্তবায়নও সহজ হয়।’

এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, আমাদের জেলাগুলোর আয়তন ও জনসংখ্যার দিক থেকে অন্য দেশের তুলনায় অনেকগুণ বড়। সে দিক থেকে দেশের ৬৪ জেলায় ৬৪টি সরকার হওয়া দরকার।

‘জনসংখ্যার অধিক ঘনত্ব পরিবেশের জন্য ভয়ঙ্কর ক্ষতিকর’ মন্তব্য করে অর্থমন্ত্রী বলেন, এর ফলে জমির পরিমাণ কমে যাচ্ছে এবং পানি সম্পদের ওপর চাপ বাড়ছে।

সাক্ষাতে আইবিএফবি নেতারা মহাজোট সরকারের গত পাঁচ বছরে দেশের অর্থনীতি ও বাজেটের আকার বাড়ানোর জন্য অর্থমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান। পাশাপাশি রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য উদ্যোগ নেওয়া এবং সঙ্কট মোকাবেলায় সরকারের পক্ষ থেকে ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা প্রদান অব্যাহত রাখারও আহ্বান জানান তারা।

এ ছাড়া ব্যাংকিং খাতে সুদের হার কমানো, রাজস্ব বাড়াতে কর আদায়ে স্বচ্ছতা আনা, সিদ্ধান্ত গ্রহণে স্বচ্ছতা ও দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া এবং বেসরকারি পাওয়ার প্ল্যান্টের জন্য কর সুবিধা প্রদানের সুপারিশ করেন।

ব্যবসায়ীদের এ সব বক্তব্যের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা বেশ সৌভাগ্যবান যে, গত পাঁচ বছরে বিশ্ব অর্থনৈতিক যে অবস্থা ছিল এর মধ্যেও মোটামুটিভাবে আমাদের অবস্থান ধরে রাখতে পেরেছি।’

এ জন্য দেশের কৃষক, শ্রমিক ও উদ্যোক্তাদের ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এটা সম্ভব হয়েছে আমাদের জনগণের জন্য। আমাদের অর্থনীতির ৮০ শতাংশই হচ্ছে বেসরকারি খাতে। এই ৮০ শতাংশ যদি সাড়া না দেয়, তা হলে দেশের অর্থনীতি কোনো অবস্থাতেই ভালো থাকতে পারে না। তবে সব খাতেই গ্রুপ-ট্রুপ থাকে, হলমার্ক-টলমার্ক একটু-আধটু থাকে।’

সাক্ষাতে আইবিএফবি নেতারা ব্যাংক ঋণের বিপরীতে ১৮ থেকে ২০ শতাংশ হারে সুদ দিতে হয় উল্লেখ করে এই হার কমিয়ে আনার দাবি জানান।

তারা বলেন, ব্যাংকগুলো বলে যে, সঞ্চয়পত্র ও বন্ডের সুদের হার বেশি বলে তারা সুদের হার কমাতে পারছেন না। এ পরিপ্রেক্ষিতে সঞ্চয়পত্র ও বন্ড তুলে দিয়ে বা এর মাধ্যমে টাকা না তুলে সরকারকে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার প্রস্তাব দেন তারা।

ব্যবসায়ীদের এ প্রস্তাব নাকচ করে দিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, এটা ঠিক হবে না। সঞ্চয়পত্র ও বন্ড দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ। আর ব্যাংক ঋণের সুদের হার কমিয়ে আনার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে অনেকবার বৈঠক হয়েছে, কিন্তু এর সলিউশন পাওয়া মুশকিল। অন্যদিকে সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমিয়ে দেখা গেছে যে, কেউই তা কেনে না।’

রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রসঙ্গে একজন ব্যবসায়ী নেতা তার ব্যক্তিগত অভিমত ব্যক্ত করতে গিয়ে অর্থমন্ত্রীর উদ্দেশে বলেন, ‘দেশের একজন কৃতি সন্তান হিসেবে আপনি দেশের জন্য অনেক কিছু করেছেন, অনেক দিয়েছেন। এবার একটি স্থিতিশীল রাজনীতি আপনার শেষ সময়ে যদি দিতে পারেন, জাতি আপনাকে হাজার বছর মনে রাখবে।’

এর জবাবে মুহিত বলেন, ‘এটা আমার এরিয়া নয়।’

ওই ব্যবসায়ী নেতা বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আপনাকে যথেষ্ট ...’

মুহিত বলেন, ‘সেটা ঠিক আছে। ... কিন্তু পরিবেশের কারণে আগের তুলনায় রাজনীতির চরিত্র এখন বদলে গেছে।’

(দ্য রিপোর্ট/এসআর/এমএআর/সা/২৯ জানুয়ারি, ২০১৪)