ওমর ফারুক, সাভার : দূরপাল্লার শ্যামলী পরিবহনের মালিকানার দ্বন্দ্বে মালিকপক্ষের বিরুদ্ধে ওই পরিবহনেরই এক শ্রমিককে নৃশংসভাবে হত্যা করে লাশ গুমের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় শ্যামলী পরিবহনের শ্রমিক ও এলাকাবাসীরা উত্তেজিত হয়ে মালিকদের একটি সিএনজি পাম্পসহ বেশ কিছু গাড়িতে ভাংচুর চালিয়েছে। একই সাথে হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে শনিবার ছয়জনকে আটক করেছে সাভার মডেল থানা পুলিশ।

নিহত শ্রমিক শ্যামলী পরিবহনের ইঞ্জিন মিস্ত্রি আসিফ সরদার রতন (৪৫)। তিনি পাবনা জেলার সদর থানার হেমায়েতপুর গ্রামের মৃত কালু সরদারের ছেলে।

আটকরা হলেন, মো. আজিম আলী শেখ (২৬), নুকুল ঘোষ (৩৮), খায়রুল ইসলাম (৩০), মো. কাশেম (৩৮), লুৎফর রহমান (৩২) ও গোপাল কুমার (৩০)।

নিহত রতনের ভাই বাবুল মিয়া দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, গণেশ চন্দ্র ঘোষ ও তার ভাই রমেশ চন্দ্র ঘোষের মধ্যে শ্যামলী পরিবহনের ৪০০ বাসের মালিকানা নিয়ে দ্বন্দ্বের জের ধরেই তার ভাইকে হত্যা করা হয়েছে। চলতি মাসের ৩ জানুয়ারি সন্ধ্যায় সাভারের বলিয়ারপুর এলাকার এনআর সিএনজি স্টেশন থেকে তার ভাইকে অপহরণ করে নিয়ে যায় গণেশ চন্দ্র ঘোষের শ্যালক স্বষ্টি ঘোষ ও তার সহযোগীরা।

এ ঘটনায় নিহত রতনের ছেলে মো. কামরুজ্জামান ৭ জানুয়ারি সাভার মডেল থানায় স্বষ্টিকে প্রধান আসামি করে একটি মামলা দ্বায়ের করলে ওই দিন রাতেই পুলিশের চৌকস অভিযানে সন্দেহজনকভাবে স্বষ্টি ঘোষের সহকারী গোপালকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে তার দেওয়া তথ্য অনুসারে ৫ দিন পর একই পাম্পের পিছনে ময়লার স্তূপ থেকে রতন মিয়ার ক্ষত-বিক্ষত লাশ উদ্ধার করা হয়।

এ ঘটনায় শুক্রবার রাতে নিহতের স্বজন, এলাকাবাসী ও শ্যামলী পরিবহনের শ্রমিকরা ক্ষুব্ধ হয়ে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে এনআর পাম্পসহ শ্যামলী পরিবহনের বেশ কিছু গাড়িতে ভাংচুর চালায়। এ সময় সড়কটিতে প্রায় ১ ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ থাকে। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছলে রাত সাড়ে ৯টায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সাভার মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. জাকারিয়া দ্য রিপোর্টকে জানান, ৭ জানুয়ারি মামলা রুজর পর থেকে পুলিশ অপহরণকারীদের ধরতে মরিয়া হয়ে ওঠে। ওই দিন রাতেই মামলার এক নম্বর অভিযুক্তের সহযোগী গোপাল নামে একজনকে আটক করা হয়। পরে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে এবং আটককৃতের দেওয়া তথ্যমতে, এনআর সিএনজি পাম্পের পিছনে শ্যামলী ডেইরি ফার্মের ময়লার স্তূপে চাপা দেওয়া অবস্থায় অপহৃত রতন মিয়ার হাত কাটা ও চোখ উপড়ে ফেলা লাশ উদ্ধার করা হয়। এ সময় এনআর সিএনজি পাম্পের কর্মী নুকুল, লুৎফর রহমান, আজিম ও খাইরুল নামে আরও পাঁচজনকে আটক করে পুলিশ।

নিহত রতন মিয়ার সহকর্মীরা জানায়, শ্যামলী পরিবহনের ৪০০ বাসের মালিক গণেশ চন্দ্র ঘোষ ও তার ভাই রমেশ চন্দ্র ঘোষ। দীর্ঘদিন ধরে এই দুই ভাইয়ের মধ্যে বাসের মালিকানা নিয়ে দ্বন্দ্ব চলে আসছিল। আর বাসের হেড মিস্ত্রী রতন মিয়া ছিলেন রমেশ চন্দ্র ঘোষের আস্থাভাজন কর্মচারী। ফলে এই দ্বন্দ্বের সূত্র ধরেই গণেশ চন্দ্র ও তার শ্যালক স্বষ্টি ঘোষ মিলে রতনকে অপহরণ করে হত্যার পর লাশ গুমের চেষ্টা করেছে।

হত্যার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামরুজ্জামান দ্য রিপোর্টকে বলেন, ঘটনাটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তারা ঘটনার সাথে জড়িত ছয় আসামিকে আটক করতে সক্ষমও হয়েছেন। হত্যার সঠিক কারণ সম্পর্কে জানতে পরবর্তী সময়ে আসামিদের অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদে আসল রহস্য বেরিয়ে আসবে। আর হত্যাকারী যেই হোক, তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এদিকে নিহত শ্রমিকের লাশ উদ্ধারের পর শুক্রবার রাত থেকে শ্যামলী পরিবহনের মালিকানাধীন এনআর সিএনজি পাম্প এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।

(দ্য রিপোর্ট/এএসটি/সা/জানুয়ারি ০৯, ২০১৬)