নানা অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ছে রাষ্ট্রায়ত্ত বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন্স কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল)। কতিপয় দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীর অরাজকতায় বিটিসিএলের কর্মপরিবেশ নষ্ট হচ্ছে।

বিটিসিএল প্রশাসন যথাসময়ে অপরাধীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় এ ধরনের বিশৃঙ্খলা ঘটেই চলেছে। যা বর্তমানে চরম আকার ধারণ করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এমনকি অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় আইনগত ব্যবস্থা নিতে বললেও তা পালন করছে না বিটিসিএল কর্তৃপক্ষ।

বিটিসিএলের কতিপয় উচ্ছৃঙ্খল কর্মচারী ২০১৩ সালের ২০ অক্টোবর সদস্য (প্রশাসন) এর কক্ষ ভাঙচুর করে। এ ঘটনায় রমনা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়। একটি তদন্ত কমিটিও করে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়।

তদন্তে উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. শাহনেওয়াজ, মো. ফারুক আহমেদ, মো. আব্দুল আউয়াল, ওয়ার্কচার্জড কর্মচারী মো. হুমায়ুন কবির, শেখ রফিকুল ইসলাম ও মো. কামরুল ইসলামের বিরুদ্ধে ‘বিভাগীয় মামলা দায়ের/শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’ ২০১৩ সালের ২৯ ডিসেম্বর ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের এক পত্রের মাধ্যমে এ নির্দেশ দেওয়া হয়। তবে বিটিসিএল প্রশাসন এ ব্যাপারে কোনো ধরনের দৃশ্যমাণ পদক্ষেপ এখনও পর্যন্ত গ্রহণ করেনি। বিটিসিএল সূত্র দ্য রিপোর্টকে এ সব তথ্য নিশ্চিত করেছে।

মন্ত্রণালয়ের তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘ইতোপূর্বে সংঘটিত উচ্ছৃঙ্খল ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কোনোরূপ প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণে ব্যর্থতার কারণে এ জাতীয় ঘটনা নির্ভয়ে/নির্দ্বিধায় ঘটানো হয়েছে।’ একই সঙ্গে ‘এ ধরনের অনিভিপ্রেত ঘটনা প্রতিকারে তদন্ত প্রতিবেদনের সুপারিশের আলোকে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করে মন্ত্রণালয়কে জরুরিভিত্তিতে অবহিত করার’ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

জানতে চাইলে বিটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) নাজির শাহা কৌরাশী দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে এখন কিছু বলতে পারছি না।’

বিটিসিএলের পরিচালক (সংস্থাপন ও প্রশাসন-২) কবির হাসান দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘এ বিষয়টি নিয়ে এমডিই সিদ্ধান্ত নেবেন। তিনি ভালো বলতে পারবেন।’

বিটিসিএল সূত্র জানায়, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ জরুরিভিত্তিতে পালন না করায় সোমবার টেলিযোগাযোগ ভবনের দ্বিতীয় তলায় ২৩৫ নম্বর কক্ষে এ ধরনের আরেকটি অনিভিপ্রেত ঘটনা ঘটেছে। বিভাগীয় প্রকৌশলী (পরিবহন) মো. শাহজাহান আলী মোল্লার কক্ষে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

মো. শাহজাহান আলী দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘কোনো ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেনি। তবে তাদের আচরণ ঔদ্ধত্যপূর্ণ ছিল। তারা আমাকে হুমকি দিয়েছে। আমি এ ব্যাপারে এখনও কোনো জিডি করিনি। তবে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী মহোদয় এবং তার পিএসকে জানিয়েছি। আমার (বিটিসিএল) প্রশাসনকে জানিয়েছি। দেখি প্রশাসন কী করে। প্রশাসন যেভাবে পরামর্শ দেয় সে অনুসারে কাজ করব।’

দ্য রিপোর্টের কাছে তিনি এ ঘটনার জন্য উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. শাহনেওয়াজ, মো. ফারুক আহমেদ, মো. বেলাল হোসেন, ড্রাইভার জালাল উদ্দিন, মো. কামরুল ইসলাম আজাদ ও ওয়ার্কচার্জড (ড্রাইভার) মো. বাকেরকে অভিযুক্ত করেন।

তিনি আরও বলেন, ‘তাদের অবৈধ দাবি-দাওয়া মেনে না নিলে তারা এ আচরণ করে।’

বিটিসিএল সূত্র জানায়, শাহজাহান আলী মোল্লার কক্ষে গিয়ে উপ-সহকারী প্রকৌশলী জাফরুল আহসান সোহাগ, ভেহিক্যাল ইন্সপেক্টর মো. জসিম মিয়া ও ড্রাইভার মো. রিপনের উপস্থিতিতে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে অভিযুক্তরা।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) নাজির শাহা কৌরাশী দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে এখন কিছু জানি না। আমার কাছে এখনও পর্যন্ত কোনো অভিযোগ আসেনি।’

জানতে চাইলে বিটিসিএলের পরিচালক (সংস্থাপন ও প্রশাসন-২) কবির হাসান দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘এ বিষয়টি নিয়ে ভুক্তভোগী কোনো অভিযোগ করেনি। আমরা কোনো অভিযোগ পাইনি।’

(দ্য রিপোর্ট/এইচবিএস/এইচএসএম/শাহ/এএল/ফেব্রুয়ারি ১২, ২০১৪)