স্বপ্ন পূরণের প্রত্যাশা করে যে সব মানুষ ব্যর্থ হয় তারা স্বপ্ন দেখতে ভয় পায়। দু চোখে এখন আর স্বপ্ন আঁকি না। কেবল দূর আকাশের বিশালতার মাঝে নিজের বেঁচে থাকার অর্থ খুঁজে বেড়াই। তোমাকে ভুলতে পারি না একটুও। তোমাকে ভাবতে ভাবতে শত গোলাপ ফুলের মতো মনের ভিতর দুলে উঠে কথার পাপড়ি। আজও আমি তোমাকে ছুঁয়ে দেই। তবে হাত বাড়িয়ে নয় মন বাড়িয়ে। আমার এই ক্ষুদ্র হৃদয়ের মনের মাধুরী মিশিয়ে যার ছবি এঁকেছি জনম জনম ধরে, সে শুধুই তুমি। তোমার কল্পনায় বিভোর হয়ে আজন্ম সুখের নেশায় অনাবিল প্রেমের আবেশে এখনও আমি জাগরিত হই। গোধূলির আলোয় তোমার ছবি আমার চারপাশ ঘিরে রাখে অপরূপ মুগ্ধতায়। তোমার চঞ্চল মনে আমার উদাসী অনুভূতি দিয়ে জানিয়ে দিতে ইচ্ছে করে- জীবন একটাই, ভালোবাসা বার বার আসে না। নিঃশ্বাসের প্রতিটি শ্বাস আমায় মনে করিয়ে দেয়, তুমি আছ তাই আমি আছি। আমার সকাল, সন্ধ্যা, রাত কাটে কেবল তোমাকেই ভেবে। সকালের গা বেয়ে আকাশে উদীয়মান হলুদ সূর্যের নির্যাস নিয়ে আমি পাগলের মতো খুঁজতে থাকি তোমার মুখচ্ছবি।

আমি যখন একাকী ভাবনার দরজা খুলে বসি তখন আমার মনে হয় আমি কাউকে ভালোবাসি। আমি যখন নিশ্চুপ রাতে স্বপ্ন বুনতে বুনতে ঘুমিয়ে পড়ি- কে যেন স্বপ্নে এসে আমাকে ভালোবাসা শেখায়। আমি যখন ভালোবাসার বিরহে নিতান্ত কাতর, তখন চোখ বেয়ে নেমে আসা জল ঠোঁটে মিশতে মিশতে বলে, তুমি কাউকে জীবনের চেয়ে বেশি ভালোবেসে ফেলেছ।

ভালোবাসা আমাকে শিখিয়েছে চোখের জলের স্বাদ নুনতা, ভালোবাসা আমাকে শিখিয়েছে প্রচণ্ড শীতেও চোখের জল ঠাণ্ডা হয় না। আমার ভালোবাসার সাক্ষী আমার মাথার নিচের বালিশ। কারণ চোখ বেয়ে নেমে আসা স্রোতধারা আশ্রয় খুঁজে নিয়েছে এই বালিশের মাঝে। তবে আমার ভালোবাসার সব থেকে বড় সাক্ষী তুমি। কারণ তুমি শুনেছ আমার হৃদয়ের আকুলতা, তোমার হাতে মিশে আছে আমার চোখের তপ্ত জল, তুমি দেখেছ আমার ব্যথাতুর হৃদয়ের অসহায় চাহনি।

আমার ভেতরটা একেবারে ক্ষয়ে গেছে। হুমায়ূন আহমেদের হিমুর মতো আমার সবগুলো নীল পদ্ম কখন যে তোমাকে দিয়ে ফেলেছি আমি নিজেই জানি না। ভুলটা কার বেশি সে প্রশ্নটা আজ না হয় থাক। শুধু এইটুকু জেনে রাখ, এখনও অনেক রাত অনিদ্রায় কাটে। দূর আকাশের তারাদের সঙ্গে মিতালী হয়। এখন জ্যৈষ্ঠের রৌদ্র আমায় আনন্দ দেয়, কালবৈশাখী ঝড় আমায় সঙ্গ দেয়।

এখন আমার হৃদয় শূন্য মরুভূমি। আমি রিক্ত, নিঃস্ব, খুব একা। আমার হৃদয় আজ ফেরারি। অবিশ্বাসের বৃষ্টিতে ভিজে এ বুকে সবুজ ফসল ফলানোর দিন শেষ। এখন যে দিকে হাত বাড়াতে চাই সে দিকেই যেন অবিশ্বাসের কালো হাত ফণা তুলে আছে ছোবল দিতে।

খুব কাছে যেতে চেয়ে আমি অনেক বেশি দূরে সরে গেছি। খসে গেছে আমার স্বপ্নীল ডানা। তারপরও স্বপ্ন থেমে নেই। তোমাকে নিয়ে জেগে জেগে স্বপ্ন দেখার সাহস আমি হারিয়ে ফেলেছি। তারপরও ঘুমের মধ্যে তুমি স্বপ্ন হয়ে ধরা দাও। সারা রাত স্বপ্ন দেখি। দেখি তুমি আসছ। বাতাসে খোলা চুল উড়িয়ে তুমি আসছ সেই পুরনো ঠিকানায়। আচমকা জেগে উঠে দেখি তুমি নেই। সৌখিন নিঃসঙ্গতা খেলা করে ঘরময়। নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয়। নিদ্রা নিহত নির্জন রাতে মাথায় এসে ভর করে স্মৃতিময় সেই দিনগুলো। আর কত কষ্ট দিবে, বল? কি চাও তুমি আমার কাছে? কেন তুমি মাঝ রাতে ঘুমন্ত চোখের পাপড়ি খুলে কষ্টের দুয়ার উন্মোচন করতে আস? আমি মুক্তি চাই। আমাকে তুমি মুক্ত করে দিতে পার না?