দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : সিকিউরিটিজ সংক্রান্ত আইন-কানুন অমান্য করার দায়ে পাঁচ প্রতিষ্ঠান ও এক ব্যক্তিকে ২৮ লাখ টাকা জরিমানার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। মঙ্গলবার কমিশনের ৫১০তম সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কমিশনের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমান স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

জানা গেছে, ৫ লাখ টাকার উপরে নগদ গ্রহণের মাধ্যমে সিকিউরিটিজ রুলস ৮(১)(সিসি)(১); পরিচালকদের মার্জিন ঋণ সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে কমিশনের নির্দেশ নং-এসইসি/সিএমআরআরসিডি/২০০১-৪৩/৫১ তাং ২২/০৭/২০১০ লঙ্ঘন; একক বিনিয়োগকারীর কাছে ১০ কোটি টাকার ঊর্ধ্বে মার্জিন ঋণ সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে কমিশনের নির্দেশ নং-এসইসি/সিএমআরআরসিডি/২০০১-৪৩/৫১ তাং ২২/০৭/২০১০ লঙ্ঘন; ও স্টক ডিলার নিবন্ধন সনদ প্রাপ্তির তারিখ ২০/০২/২০১১ থেকে ১৯/০৬/২০১৩ সময়কালে লেনদেনে অংশগ্রহণ না করে ওই নিবন্ধন সনদের শর্তাবলীর সেকশন ১১ লঙ্ঘন করেছে এনবিএল সিকিউরিটিজ লিমিটেড। এ জন্য প্রতিষ্ঠানটিকে ৩ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

বর্ণিত স্টক ব্রোকারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রেজাউল করিম কর্তৃক ডিলার হিসাবের পরিবর্তে তার বিও হিসাবের মাধ্যমে ৪ কোটি ৩৮ লাখ ৭৫ হাজার টাকা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করেন। পরিদর্শক দল কর্তৃক উক্ত স্টক ব্রোকারের ৩০/০৬/২০১২ সমাপ্ত বছরের নিরীক্ষিত আর্থিক বিবরণী বিশ্লেষণপূর্বক দেখতে পান যে, ওই পরিমাণ অর্থের বিনিয়োগ নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনে প্রতিফলিত হয়েছে। তদুপরি ৩০/০৬/২০১২ তারিখের ডিলার হিসাবের পোর্টফোলিও প্রতিবেদন ওই পরিমাণ অর্থের কোনো বিনিয়োগ পাওয়া যায়নি। কিন্তু রেজাউল করিমের পোর্টফোলিও হিসাবের প্রতিবেদন থেকে ৪ কোটি ৩৮ লাখ ৭৫ হাজার টাকা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের তথ্য পাওয়া যায়। যার অর্থ হচ্ছে রেজাউল করিমকে কোম্পানির পেইডআপ ক্যাপিটাল ও রিটেইন আয় থেকে ঋণ প্রদান করা হয়েছে। এই কার্যক্রমের মাধ্যমে কমিশনের নির্দেশ নং-এসইসি/সিএমআরআরসিডি/২০০১-৪৩/৫১ তাং ২২/০৭/২০১০ এবং সিকিউরিটিজ ও এক্সচেঞ্জ কমিশন (স্টক ডিলার, স্টক ব্রোকার ও অনুমোদিত প্রতিনিধি) বিধিমালা ২০০০-এর বিধি ১১ এ বর্ণিত দ্বিতীয় তফসিলের আচরণ বিধি-১ ও ৬ এর লঙ্ঘন করেছে গেটওয়ে ইক্যুইটি রিসোর্স লিমিটেড।

নন মার্জিনেবল ‘জেড’ ক্যাটাগরির শেয়ার ক্রয়ে মার্জিন ঋণ প্রদান করার মাধ্যমে কমিশনের নির্দেশনা নং- এসইসি/সিএমআরআরসিডি/২০০১-৪৩/১৬৯ তাং ০১/১০/২০০৯ লঙ্ঘন।

কনসোলিডেটেড কাস্টমার অ্যাকাউন্টের পরিবর্তে কিছু লেনদেন (রিসিপ্ট/পেমেন্ট) দুটি কাস্টমার কোডে ঘন ঘন পরিচালিত করেছে। এর ফলে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ রুলস, ১৯৮৭-এর সেকশন ৮-এ লঙ্ঘন করেছে গেটওয়ে ইক্যুইটি রিসোর্স লিমিটেড।

এ ছাড়া জুন ৩০, ২০১১ সমাপ্ত বছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন নির্ধারিত ৪ মাসের মধ্যে স্টক এক্সচেঞ্জে দাখিল করতে ব্যর্থতার মাধ্যমে সিকিউরিটিজ ও এক্সচেঞ্জ কমিশন বিধিমালা ২০০০-এর বিধি ১৩(৪) এর লঙ্ঘন করেছে প্রতিষ্ঠানটি। এ সব কারণে গেটওয়ে ইক্যুইটি রিসোর্স লিমিটেডকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে আজকে কমিশন সভায়।

এদিকে নন মার্জিনেবল ‘জেড’ ক্যাটাগরির শেয়ার কেনার ক্ষেত্রে মার্জিন ঋণ প্রদান করার মাধ্যমে কমিশনের নির্দেশনা নং- এসইসি/সিএমআরআরসিডি/২০০১-৪৩/১৬৯ তাং ০১/১০/২০০৯ লঙ্ঘন, মার্জিণ ঋণের চুক্তি ছাড়া নগদ হিসাবে ঋণ প্রদানের মাধ্যমে মার্জিন রুলস ১৯৯৯-এর রুল ৩(২) এবং সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ রুলস, ১৯৮৭-এর সেকশন ৮(১)(সিসিসি) লঙ্ঘন, পরিচালকদের মার্জিন ঋণ সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে কমিশনের নির্দেশনা নং- এসইসি/সিএমআরআরসিডি/২০০১-৪৩/৫১ তাং ২২/০৭/২০১০ লঙ্ঘন ও স্টক ডিলার নিবন্ধন সনদ প্রাপ্তির তারিখ ১৭/০২/২০০৯ থেকে পরিদর্শন চলাকালীন পর্যন্ত লেনদেনে অংশগ্রহণ না করে ওই নিবন্ধন সনদের শর্তাবলীর সেকশন ১১ লঙ্ঘন করেছে প্রতিষ্ঠানটি। উপরিউক্ত সিকিউরিটিজ আইনসমূহ ভঙ্গ করার কারণে ট্রান্সকম সিকিউরিটিজ লিমিটেডকে ৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

বিএসইসি’র পরিদর্শন কমিটির দাখিলকৃত প্রতিবেদন অনুসারে খুরশিদ সিকিউরিটিজ লিমিটেড বিভিন্ন সিকিউরিটি আইন লঙ্ঘন করেছ। এর মধ্যে- মার্জিন ঋণের চুক্তি ছাড়া ক্যাশ হিসেবে ঋণ প্রদানের মাধ্যমে মার্জিন রুলস, ১৯৯৯-এর রুলস ৩(২) এবং সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ রুলস, ১৯৮৭-এর ধারা ৮(১)(সিসিসি) লঙ্ঘন করেছে প্রতিষ্ঠানটি।

পাঁচ লাখ টাকার উপরে নগদ গ্রহণের মাধ্যমে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ রুলস, ১৯৮৭-এর ধারা ৮(১)(সিসি)(আই) লঙ্ঘন করেছে খুরশিদ সিকিউরিটিজ।

মার্চ-এপ্রিল ২০১৩ সালের বিভিন্ন তারিখে বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার শর্ট সেল করার মাধ্যমে ঢাকা স্টক এক্সটেচঞ্জ (শর্ট সেল) রেগুলেশন, ২০০৬-এর ধারা ৩৪ লঙ্ঘন করেছে প্রতিষ্ঠানটি। যার পরিপ্রেক্ষিতে খুরশিদ সিকিউরিটিজ লিমিটেডকে তিন লাখ টাকা জরিমানা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে মঙ্গলবারের কমিশন সভায়।

এ ছাড়া ইন্সট্যান্ট ওয়াচ মার্কট সার্ভিল্যান্স সিস্টেমের মাধ্যমে জেএমআই সিরিঞ্জ অ্যান্ড মেডিক্যাল ডিভাইস লিমিটেডের শেয়ার লেনদেনে স্টক ব্রোকার বী রিচ লিমিটেডের বিভিন্ন সিকিউরিটিজ আইন লঙ্ঘনের প্রমাণ পেয়েছে কমিশন। এর মধ্যে- জেএমআই সিরিঞ্জের শেয়ার লেনদেনে নন মার্জিনেবল শেয়ারে (পিই রেশিও ৪০-এর বেশি) মার্জিন ঋণ প্রদানের মাধ্যমে কমিশনের ১৫ জুন ২০১০ সালের জারিকৃত নির্দশনা লঙ্ঘন করেছে বী রিচ।

বর্ণিত স্টক ব্রোকার, কমিশন এবং স্টক এক্সচেঞ্জকে একই বিনিয়োগকারী কর্তৃক নিজ হিসেবে ক্রয় ও বিক্রয়ের (অটো ক্লাইন্ট) তথ্য প্রদান না করার মাধ্যমে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (স্টক-ডিলার, স্টক-ব্রোকার ও অনুমোদিত প্রতিনিধি) বিধিমালা, ২০০০-এর দ্বিতীয় তফসিলের আচারণ বিধি ১, ৬ ও ৮ লঙ্ঘন করেছে প্রতিষ্ঠানটি।

এ ছাড়া বী রিচের বিনিয়োগকারী মো. নিয়ামুল কবিরের বিও হিসাবে সাজানো লেনদেনের (অ্যারেঞ্জ ট্রেড) কারণে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশ, ১৯৬৯-এর ২২ ধারা; সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন আইন, ১৯৯৩-এর ১৮ লঙ্ঘিত হয়েছে। পাশাপাশি ওই ব্যক্তি কমিশনের শুনানিতে হাজির হননি এবং কোনো লিখিত ব্যাখ্যাও দাখিল করেননি। যার পরিপ্রেক্ষিতে বী রিচকে পাঁচ লাখ টাকা ও নিয়ামুল কবিরকে দুই লাখ টাকা জরিমানা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে ৫১০তম কমিশন সভায়।

(দ্য রিপোর্ট/আরএ/ডব্লিউএন/সা/ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০১৪)