আমিনুল ইসলাম, সিরাজগঞ্জ : ঋতু বৈচিত্র্যের বাংলায় বছরের বিভিন্ন সময় বর্ণিল রঙ আর অনাবিল সৌন্দর্যে সজ্জিত হয় চলনবিল। কখনো সবুজ রঙে ছেয়ে যায় মাঠ, কখনো রূপালী জলে ভরে যায় বিল, আবার কখনো সোনালী ধানের শীষে লাগে বাতাসের দোল। আর শীত এলে দিগন্ত জুড়ে সরিষা ফুলের সমারোহ ছুঁয়ে যায় মন। চারিদিকে তখন যেন কেবলই হলুদের উৎসব, চলন বিল হয়ে ওঠে হলুদ সমুদ্র।

গ্রীষ্মে যেমন সোনালী ধান, বর্ষায় ভরে রূপালী জলে, বসন্তে সবুজ ধানের চারা আর শীতে হলুদ সরিষায় মাঠ ভরা। ঋতুতে ঋতুতে এমনই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নিয়ে হাজির হয় চলনবিল। পৌষের শুরুতে শীতের তীব্রতা বাড়ার পাশাপাশি চলনবিলের মাঠ ছেয়ে যায় হলুদ সরিষায়। ফুলে ফুলে মৌমাছির মন মাতানো গুঞ্জন প্রকৃতিপ্রেমীদের মন কেড়ে নেয়। দিগন্ত জুড়ে থাকে হলুদ সমুদ্র।

সম্প্রতি এক সকালে চলনবিল অধ্যুষিত তাড়াশ উপজেলার সগুনা, মাগুড়া বিনোদ, উল্লাপাড়া উপজেলার মোহনপুর, বড় পাঙ্গাসী, উদুনিয়া ও পুর্ণিমাগাঁতী ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা গেল হলুদ সরিষায় ছেয়ে গেছে মাঠ।

পুর্ণিমাগাঁতী ইউনিয়নের হেলাল, মোফাজ্জলসহ সরিষা চাষী কৃষকেরা জানান, বন্যার পানি নেমে যাবার সঙ্গে সঙ্গে আমরা সরিষা বীজ বপণ করি। একযোগে সরিষা বোনার কারণে একসাথে চারা বড় হওয়ার পাশাপাশি ফুলও আসে। ফলে সরিষা মাঠ হলুদে ছেয়ে যায়।

সগুনা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহেল বাকী জানান, চলনবিলের এই সরিষার মাঠ দেখার জন্য দূর-দুরান্ত থেকে মানুষেরা ছুটে আসেন, ছবি তোলেন। বিশেষ করে শুক্রবারে দর্শনার্থীরা স্বপরিবারে আসেন। সরিষা ক্ষেতের মাঝখানে দাঁড়িয়ে তারা ছবি তোলেন। এতে কিছু সরিষা নষ্টও হয়ে যায়। তারপরও কোনো কৃষক তাদের বাধা দেন না। বিভিন্ন স্থানের দর্শনার্থী দেখে এখানকার কৃষকেরাও নিজেদেরকে গর্বিত মনে করেন।

জানা গেছে সিরাজগঞ্জ জেলার তাড়াশ, উল্লাপাড়া, শাহজাদপুর ও রায়গঞ্জ, পাবনা জেলার চাটমোহর, ফরিদপুর ও ভাঙ্গুড়া, নাটোর জেলার সিংড়া ও গুরুদাসপুর এবং নওগাঁ জেলার আত্রাই উপজেলার বিস্তৃতি অঞ্চল নিয়ে চলনবিল গঠিত। ১৬ টি নদী ও ২২টি খাল রয়েছে। নদীগুলির মধ্যে করতোয়া, আত্রাই, বড়াল, গুড়, হিজলী, তুলশী, ইছামতি, নন্দকুজা, গুমানী, চৈচুয়া, ভাদাই, চিকনাই, বানগঙ্গা, কুমারডাঙ্গা, মরা আত্রাই ও করতোয়া উল্লেখযোগ্য।

ফসলি জমির পরিমাণ ১ লাখ ৬৬ হাজার ৫৩৫ হেক্টর। চলনবিলের বিভিন্ন উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ বছর ৬২ হাজার ৩শ’ ৯৫ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ করা হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় সরিষার বাম্পার ফলনের আশা করছেন কৃষকেরা। প্রতি বিঘা জমি থেকে কৃষক ৪/৫ মণ সরিষা উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে।

সিরাজগঞ্জ কৃষি অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক তাজুল ইসলাম পাটোয়ারী জানান, ইরি ধান মৌসুমের আগে চলনবিলের কৃষকেরা সরিষা চাষ করেন। এতে করে বাড়তি আয়ের পাশাপাশি ইরি চাষের জন্য জমিও উপযুক্ত হয়। সরিষা আবাদ করা জমিতে ধানচাষ করলে বেশি রাসায়নকি সারের ব্যবহার করতে হয় না। এ কারণেই কৃষকেরা সরিষার প্রতি ঝুঁকছে।

(দ্য রিপোর্ট/এস/জেডটি/জানুয়ারি ০৫, ২০১৭)