সংবিধানের আলোকে কোনো আইন না থাকায় এবারও সার্চ কমিটির মাধ্যমে নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনের প্রস্তাব দিতে যাচ্ছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ।

ইসি গঠন প্রসঙ্গে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে সংলাপে অংশ নিতে বুধবার (১১ জানুয়ারি) বিকেল ৪টায় বঙ্গভবনে যাচ্ছে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দল। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১৯ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল সংলাপে অংশ নিচ্ছে।

নতুন ইসি গঠনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার ধারাবাহিকতায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে এবার সংলাপে বসছেন রাষ্ট্রপতি। এর আগে দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি এবং সংসদের প্রধান বিরোধীদল জাতীয় পার্টিসহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল সংলাপে অংশ নিয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে ইসি গঠনে তাদের প্রস্তাবনা তুলে ধরেছে।

আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ফেব্রুয়ারিতে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। অল্প সময়ের মধ্যে সার্চ কমিটির মাধ্যমে ইসি গঠনই সর্বোত্তম পন্থা। সংবিধানে রাষ্ট্রপতিকে সেই ক্ষমতা দেওয়া আছে। তার প্রতি আওয়ামী লীগের শ্রদ্ধা রয়েছে। পূর্বের ন্যায় এবারো সার্চ কমিটির মাধ্যমেই সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি ইসি উপহার দিতে পারবেন রাষ্ট্রপতি।

নতুন ইসি গঠনে পূর্ণাঙ্গ আইন থাকার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছে জাতীয় পার্টিসহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল। কিন্তু আওয়ামী লীগ মনে করে, সময়ের স্বল্পতার কারণে এবারই আইন করে ইসি গঠন করাটা কঠিন হবে। তাই ইসি গঠনে আপাতত রাষ্ট্রপতি যে পদক্ষেপগুলো নেবেন, পরে আইন প্রণয়নে তা অনুসরণ করা যেতে পারে। রাষ্ট্রপতিকে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দেওয়া প্রস্তাব ও সুপারিশমালা দিতে প্রস্তুতি কমিটি করা হয়। তারা মিটিং করে ইসি গঠন নিয়ে আলোচনা করেন। এ আলোচনায় আইন প্রণয়ন, সার্চ কমিটিসহ বিভিন্ন বিষয় উঠে আসে। তবে ইসি গঠনে আওয়ামী লীগের প্রস্তাবনা নিয়ে সুনির্দিষ্ট করে এখনই মুখ খুলতে নারাজ দলের নেতারা।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রাজ্জাক দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন, ‘এখনই সুনির্দিষ্টভাবে কিছু বলা যাবে না। ইসি গঠন নিয়ে বিভিন্ন বিষয়ের ওপর আলোচনা হয়েছে। কিন্তু এখনও তা চূড়ান্ত করা হয়নি। আগে আমরা চূড়ান্ত করি, তারপর সময় মতো সবই শুনতে পারবেন।’

তিনি আরও বলেছেন, ‘নির্বাচন কমিশন নিয়ে আমাদের আইন হওয়া উচিত। এটা আমাদের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা। তবে এবার করা যাবে কিনা, এটা সুস্পষ্টভাবে বলা যাচ্ছে না। এমন হতেও পারে, প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের মতো সার্চ কমিটির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হলো। রাষ্ট্রপতি যেসব পদক্ষেপ নেবেন, হয়তো সেগুলো পরে আইনে পরিণত হতে পারে।’

নতুন ইসি গঠনের প্রস্তাবনা সম্পর্কে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের ‍উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট মো. আবদুল বাসেত মজুমদার দ্য রিপোর্টকে বলেছেন, ‘এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে প্রস্তাবনা কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এই মুহূর্তে বিস্তারিত কিছু বলার সুযোগ নেই।’

দলের আইন বিষয়ক সম্পাদক আবদুল মতিন খসরু বলেছেন, ‘সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আইন প্রণয়নের বিষয়ে রাষ্ট্রপতিকে প্রস্তাব দেওয়া হতে পারে।’

প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন বর্তমান কমিশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে চলতি বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি। সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি ‘সার্চ কমিটি’র মাধ্যমে সিইসি ও ইসি নিয়োগ দেবেন। ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারিতে নিয়োগ পান কাজী রকিবউদ্দীনের নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশন। নিয়ম অনুযায়ী- এই কমিশনের পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষ হচ্ছে ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে।

সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের এখতিয়ার রাষ্ট্রপতিকে দেওয়া হয়েছে। তবে এ এখতিয়ার প্রয়োগে রাষ্ট্রপতি স্বাধীন নন। ৪৮ (৩) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছা অনুযায়ী রাষ্ট্রপতিকে এ নিয়োগ দিতে হয়। যোগ্যতার শর্তাবলি না থাকায় যেকোনো ব্যক্তিকে এ পদে নিয়োগ দেওয়ার সুযোগ রয়েছে।

সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে লইয়া এবং রাষ্ট্রপতি সময়ে সময়ে যেরূপ নির্দেশ করিবেন, সেইরূপ সংখ্যক অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারকে লইয়া বাংলাদেশের একটি নির্বাচন কমিশন থাকিবে এবং উক্ত বিষয়ে প্রণীত কোনো আইনের বিধানাবলি সাপেক্ষে রাষ্ট্রপতি প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারকে নিয়োগদান করিবেন।’

গত বছর ১৮ ডিসেম্বর থেকে নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শুরু করেন রাষ্ট্রপতি । প্রথম দিনেই বিএনপির সঙ্গে সংলাপ করেন তিনি। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন। এরপর ২০ ডিসেম্বর জাতীয় পার্টি, ২১ ডিসেম্বর লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) ও কৃষক-শ্রমিক জনতা লীগ, ২৬ ডিসেম্বর জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), ২৭ ডিসেম্বর ওয়ার্কার্স পার্টি, ২৯ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট ও ইসলামী ঐক্য জোট, ২ জানুয়ারি জাতীয় পার্টি (মঞ্জু) এবং ৩ জানুয়ারি বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন ও বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি), ৭ জানুয়ারি জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), সর্বশেষ ৯ জানুয়ারি বিকল্প ধারা বাংলাদেশ এর সঙ্গে আলোচনা করেন রাষ্ট্রপতি।

(দ্য রিপোর্ট/এমএইচ/জেডটি/এনআই/জানুয়ারি ১০, ২০১৭)