দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির ৪০ বছর পূর্তি উপলক্ষে একাডেমি প্রাঙ্গণে বছরব্যাপী উৎসবের উদ্বোধন হয়েছে বুধবার সন্ধ্যায়। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির প্রথম পরিচালক জাতীয় অধ্যাপক ড. মুস্তাফা নূর-উল ইসলাম এই আয়োজনের উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর।

শেষ বিকেলের আলো থাকতেই নাট্যশিল্পী, সাহিত্যিক, চিত্রকর, আবৃত্তিশিল্পী, সঙ্গীতশিল্পী, নৃত্যশিল্পী, প্রাক্তন মহাপরিচালকসহ সকল সংস্কৃতিকর্মীদের আনাগোনায় মুখর হতে থাকে শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণ।

ঠিক সন্ধ্যা ছয়টায় শুরু হয় আনন্দ উৎসব। এ সময় ঘণ্টাধ্বনি বাজিয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন ড. মুস্তাফা নূর-উল ইসলাম। তার সঙ্গে ছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, বর্তমান মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীসহ সংস্কৃতিকর্মীরা।

তারপর তারা প্রদীপ প্রজ্জ্বলন, বেলুন ও ফানুষ ওড়ান। চিত্রকলা বিভাগের ছাদ থেকে আতশবাজি ছোড়া হয়। আকাশে আলোকচ্ছটা ও মুহুর্মুহু করতালিতে চারদিক রঙিন হয়ে ওঠে।

এরপর শিল্পীরা দলগতভাবে ‘আমরা পরাজিত হইনি’ ও ‘বিজয় নিশান উড়ছে ওই’-গান দু’টি পরিবেশন করে।

অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেন আবৃত্তিকার ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিনেত্রী ফারহানা মিঠু।

বর্তমান মহাপরিচালক মঞ্চে উপবিষ্ট সকল অতিথিদের উত্তরীয় পরিয়ে দেন। প্রথম মহাপরিচালক ও বর্তমান মহাপরিচালককে উত্তরীয় পরিয়ে দেন।

ড. মুস্তাফা নূর-উল ইসলাম বলেন, ‘১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাকে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির দায়িত্ব নিতে বলেন। আমি বললাম, মুজিব ভাই, আমি কেন? আমি তো নাটকের লোক নই, সঙ্গীতেরও নই। তখন তিনি বললেন, তুই ছাত্র রাজনীতি করেছিস, বড়দের রাজনীতি বুঝবি না। নাটকের লোককে দিলে সঙ্গীতের লোক বেজার হবে। আর সঙ্গীতের লোককে দিলে নাটকের লোক বেজার হবে। তাই তোকে দিলে তোর কি ভালো লাগবে না? শিল্পের প্রতি আকর্ষণ থাকলে কার না ভালো লাগে।’

তিনি আরও বলেন, ‘কথায় আছে, ৪০ বছর বয়স হয়েছি কি বনে চলে যাও। তোমার কোনো কাজ নেই। কিন্তু ৪০ বছরে এসে শিল্পকলা একাডেমি যেন নতুন করে যাত্রা শুরু করল।’

সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বলেন, ‘অতীতের অনেক সমস্যা পার করে এসেছি। সামনের বাঁধাও অতিক্রম করতে পারব। সবার সহযোগিতা চাই। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিকে সংস্কৃতিবান্ধব প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।’

বর্তমান মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী বলেন, ‘আট বছর ধরে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর জেলা কমিটির বিপক্ষে মামলা ছিল। দুই বছর আগে নিষ্পত্তি হয়েছে। এখন আবার জেলা কমিটি পুনর্গঠিত করা হচ্ছে। উপজেলা পর্যায়েও কমিটি গঠন করা হবে। আগে জেলার জন্য ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ থাকত। এখন তা বেড়ে হয়েছে চার লাখ টাকা। উপজেলার জন্য ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ করা হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘সারাদেশের সকল শিল্পীদের তালিকা করা হচ্ছে। এ ছাড়া গত বছর থেকে ১০ জন শিল্পীকে সম্মাননা দেওয়া শুরু হয়েছে। জেলা শিল্পকলা একাডেমি থেকেও প্রতিবছর পাঁচজন করে ৩২০ জন শিল্পীকে সম্মাননা দেওয়া হবে।’

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন চিত্রশিল্পী হাশেম খান, ইন্টারন্যাশনাল থিয়েটার ইনস্টিটিউটের বিশ্ব সভাপতি নাট্যব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার, সংস্কৃতি সচিব ড. রণজিৎ কুমার বিশ্বাস প্রমুখ।

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করে জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদ, ধ্রুব শিশু কিশোর সংগঠন, নজরুল সঙ্গীত শিল্পী পরিষদ, রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা, সুজিত মোস্তফা, কিরণ চন্দ্র রায়, শাকিলা জাফর, ব্যান্ডদল জলের গান ও ব্যান্ডদল ভারক।

নৃত্য পরিবেশন করে ধৃতি নর্ত্তনালয়, রেওয়াজ পারফর্মিং আর্টস ও নন্দনকলা কেন্দ্র।

আবৃত্তি পরিবেশন করেন আহকাম উল্লাহ ও ডালিয়া আহমেদ।

সাংস্কৃতিক আয়োজনের ফাঁকে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির প্রাক্তন মহাপরিচালকরা স্মৃতিচারণ করেন।

এরপর অ্যাক্রোবেটিক প্রদর্শন করে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির অ্যাক্রোবেটিক দল।

অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় দিন বৃহস্পতিবার আলোচনা, স্মৃতিচারণ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও অ্যাক্রোবেটিক প্রদর্শনীর আয়োজন করা হবে।

(দ্য রিপোর্ট/আইএফ/এসকে/এএল/ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১৪)