ইমরুল কায়েস, বাগেরহাট : বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবনের করমজল বন্যপ্রাণি প্রজনন কেন্দ্রে বিশ্বে বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির কচ্ছপ বাটাগুর বাসকার এখন সংরক্ষণ ও প্রজননের মাধ্যমে বংশ বিস্তার করে চলেছে।

 

এই প্রজনন কেন্দ্রে কচ্ছপ বাটাগুর বাসকার বেড়ে ওঠা, প্রজনন এবং ডিম পাড়ার জন্য জন্য ইতোমধ্যেই তৈরি ও খনন করা হয়েছে একাধিক পুকুর, নালা, সেডসহ প্যান (কৃত্রিম পুকুর) ও ডিমপাড়া স্থান।

 

বর্তমানে এই প্রজনন কেন্দ্রে বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির ১১৭টি কিশোর ও ১০টি বড় বাটাগুর বাসকা কচ্ছপ রয়েছে। এরমধ্য থেকে সব থেকে বড় দুটি বাটাগুর বাসকা কচ্ছপের পিঠে স্যাটালাইট ট্রান্সমিটার বসিয়ে রবিবার (৫ ফেব্রুয়ারি) ভাটার সময় ছেড়ে দেয়া হয়েছে সুন্দরবনের বঙ্গোপসাগর মোহনায়। পিঠে বসিয়ে দেয়া স্যাটালাইট ট্রান্সমিটারের মাধ্যমে এখন সুদুর ইউরোপিয় ইউনিয়নভুক্ত দেশ অষ্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় বসে এই কচ্ছপের জীবনাচরণের তথ্য ও ছবি স্পষ্ট দেখা যাবে।

গবেষণার মধ্য দিয়ে জানা যাবে বিশ্বের বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির এই কচ্ছপের স্বভাব, খাদ্য সংগ্রহ, বিচরণ, পরিবেশসহ বঙ্গোপসাগেরর গভীর না অগভীর পানিতে থাকতে পছন্দ করে সেসব বিষয়।

এছাড়া এই দুটি কচ্ছপ বঙ্গোপসাগরের বাংলাদেশ অংশ ছেড়ে ভারত ও শ্রীলংকা অংশে যায় কিনা জানা সম্ভব হবে। এখন থেকে দীর্ঘ এক বছর ধরে কচ্ছপটির গতিবিধি পর্যালোচনা করা হবে। পর্যলোচনা ও গবেষণা শেষে সুন্দরবন এবং বঙ্গোপসাগরে এ প্রজাতির কচ্ছপের আরও বাচ্ছা অবমুক্ত করা হবে। করমজল বন্যপ্রাণি প্রজনন কেন্দ্রের থেকে এতথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।

পূর্ব সুন্দরবনের করমজল বন্যপ্রাণি প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. তৌহিদুর রহমান দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, বাংলাদেশের বন-বিভাগ, আমেরিকার টারটেল সারভাইভাল এলায়েন্স, অস্ট্রিয়ার ভিয়েনা জু ও প্রকৃতি জীবন ফাউন্ডেশনের অর্থায়ানে সুন্দরবনের করমজল বন্যপ্রাণি প্রজনন কেন্দ্রের কুমির ও হরিণের পাশাপাশি ২০১৪ সালে গড়ে তোলা হয় বাটাগুর বাসকার কচ্ছপ প্রজনন কেন্দ্র।

বিশ্বে বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির তালিকায় থাকা বাটাগুর বাসকা কচ্ছপ করমজলে প্রজননের আগে বিশ্বের মধ্যে শুধুমাত্র সুন্দরবনসহ বাংলাদেশ ও ভারতে ছিল মাত্র ১০০ টির মতো। মাত্র ৩ বছরে সুন্দরবনের করমজলে প্রজননের মাধ্যমে এর সংখ্যা এসে দাড়ায় ১২৭ টিতে।

বর্তমানে করমজল কচ্ছপ প্রজনন কেন্দ্রে ১১৭ কিশোর-কিশোরী ও ১০টি বড় বাটাগুর বাসক প্রজাতির কচ্ছপ রয়েছে। এর মধ্যে ৪টি বড় পুরুষ ও ৪টি নারী কচ্ছপ রয়েছে। এছাড়া ৮টি কচ্ছপ চলতি বছরের মাঝামাঝি সময়ে ডিম দিবে। এরপর ডিম থেকে ফুটে বের হওয়া বাচ্চাগুলো প্রাপ্ত বয়স্ক হলে সুন্দরবন ও বঙ্গোপসাগরে অবমুক্ত করা হবে।

বন বিভাগের বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ ঢাকা অঞ্চলের বন সংরক্ষক জাহিদুল কবির দ্য রিপোর্টকে বলেন, বিশ্বের সংকটাপন্ন এই প্রজাতির কচ্ছপ প্রাণীকে আমাদেরকেই রক্ষা করতে হবে। সেজন্যই মুলত এ আয়োজন কিংবা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, যে দুটি কচ্ছপের পিঠে স্যাটেলাইট ট্রান্সমিটার লাগানো হয়েছে সেই দুটি কচ্ছপ সুন্দরবনের জেলে-বাওয়ালীদের জালে যদি কখনও আটকা পড়ে তাহলে তারা যেন আমাদেরকে খবর দেয়। তা না হলে তারা যেন দ্রুত জাল থেকে অবমুক্ত করে দেয়। এজন্য জেলে-বাওয়ালী, র‌্যাব, কোস্ট গার্ড, পুলিশ ও নৌ বাহিনীর সহযোগিতার প্রয়োজন। সকলের প্রচেষ্টা ছাড়া কোনভাবেই এ প্রাণীটিকে রক্ষা করা সম্ভব হবে না।

(দ্য রিপোর্ট/কেএনইউ/এআরই/ফেব্রুয়ারি ০৭, ২০১৭)