পাভেল রহমান, দ্য রিপোর্ট : অভিনয় শিল্পী সংঘের নির্বাচনকে ঘিরে দিনভর প্রাণচঞ্চল ছিল রাজধানীর সেগুনবাগিচার শিল্পকলা একাডেমি। শুক্রবার(১০ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৯টা থেকে শুরু হয় ভোটগ্রহণ, চলে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। নির্বাচনকে ঘিরে নবীন-প্রবীণ অভিনয়শিল্পীদের মিলনমেলায় পরিণত হয় ভোটকেন্দ্র। প্রিয় শিল্পীরা সবাই ছিলেন শিল্পকলা একাডেমিতে। এই খবর জেনে অনেক ভক্তও ছুটে এসেছেন সেখানে।

ঢাকার উত্তরা থেকে শামীম আহমেদ এসেছেন প্রিয় তারকাকে কাছ থেকে দেখার জন্য। দ্য রিপোর্টকে তিনি বলেন, ‘এক বন্ধু টিভি নাটকে অভিনয় করে। তার কাছ থেকে শুনেছি আজকে নাকি শিল্পকলায় দেশের সব তারকারা আসবেন। তাই এসেছি। আমার প্রিয় অভিনেতা মোশাররফ করিম। কিন্তু তাকে দেখিনি। শুনেছি মোশাররফ করিম নাকি এসে ভোট দিয়েছেন। কিন্তু আমি দেখতে পারলাম না।’

অনেকেই প্রিয় তারকাকে কাছে পেয়ে ছবি তোলার অনুরোধ করেন। তারকারাও হাসিমুখে ভক্তদের ছবি তোলার ইচ্ছে পূরণ করছেন। তবে প্রার্থীরা ব্যস্ত ছিলেন ভোটার নিয়ে। অভিনেতা মীর সাব্বির তো ভোটকেন্দ্রের সামনে সকাল থেকে টানা দাঁড়িয়ে ছিলেন। একটু সময় শিল্পকলার গেটে তাকে পেয়ে ছবি তোলার সাধ পূরণ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নওরোজ।

জনপ্রিয় টিভি তারকাদের প্রায় অনেকেরই শুরুটা ছিল থিয়েটারের মাধ্যমে। নির্বাচনকে ঘিরে থিয়েটারের বন্ধুদের নিয়ে দিনভর আড্ডায় মেতে উঠেন সবাই। আরণ্যক নাট্যদলের জটলার মাঝে দেখা গেলো মান্নান হীরা, চঞ্চল চৌধুরী, তমালিকা কর্মকার, আ খ ম হাসান’সহ অনেককে।

মাঠের মাঝে গোল করে আড্ডা দিচ্ছিলেন নাট্যব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ, নাট্যকার-নির্দেশক মাসুম রেজা, অনন্ত হিরা, নূনা আফরোজ, অভিনেতা এজাজ বারীসহ বেশ কয়েকজন। তাদের আ্ড্ডার মাঝে হঠাৎ কিছুটা মন খারাপের কারণ হয়ে এলো অভিনেতা মোজাম্মেল হকের মৃত্যু সংবাদ।

পাবনা থেকে সকালে ঢাকায় আসার পথে শুক্রবার সকালে সিরাজগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান এই অভিনেতা। তিনি অভিনয় শিল্পী সংঘের নির্বাচনে ভোট দেওয়ার জন্যই ঢাকায় আসছিলেন।

তার মৃত্যু সংবাদ শোনার পর অনন্ত হিরা বলেন, ‘গত মাসেই পাবনায় থিয়েটারের শো করতে গিয়ে তার সঙ্গে পরিচয় হয়েছে। তার এমন প্রয়াণ মেনে নেয়া কষ্টকর।’

অভিনেত্রী শাহনাজ খুশি ফেসবুকে লিখেন, ‘একজন অভিনেতার চলে যাওয়া। ছোট্ট একটা খবর। তারপর সবই স্বাভাবিক নিয়মেই চলছে/চলতেই হয়। কিন্তু বুকের ভেতর, মস্তিকের কোটরে কোটরে কারো কারো অহর্নীশি কাটে যে ঘুন পোকা, আমরা ক’জনা আপনার তেমন সহকর্মী ভাই। আপনার চলে যাওয়া আমরা দেখলাম, আমাদের ক্ষত আপনার দেখতে হলো না। আমরা আপনার এই অবিশ্বাস্য চলে যাওয়া কেউ মানতে পারছি না মোজাম্মেল ভাই। আমাদের ক্ষমা করবেন।’

মোজাম্মেল হকের হঠাৎ প্রয়াণ নির্বাচনের আনন্দে খানিকটা বেদনার সুর মেখে দিলেও, জীবন চলমান-সেই স্বাভাবিক নিয়মেই শিল্পকলার ভোটের উৎসব চলেছে তার স্বাভাবিক নিয়মে। অভিনেতা এজাজ বারী বলেন, ‘নির্বাচনকে ঘিরে আজ যেন শিল্পীদের ঈদের আনন্দ। ভীষণ ভালো লাগছে সবার সঙ্গে দেখা হয়ে।

শিল্পকলার মাঠেই পাওয়া গেলো অভিনেত্রী চুমকীকে। তিনি বলেন, ‘ভীষণ ব্যস্ত এবং আনন্দের সময় কাটছে। ভোট চাইছি, ভোট দিয়েছি। আমার স্বামী সাব্বিরের (মীর সাব্বির) জন্য কিছুটা প্রচারণাও করে ফেললাম। সবাই মিলে দারুণ মজা করছি।’

শিল্পকলার নন্দনমঞ্চের পাশে পাওয়া গেলো এক সময়ের জনপ্রিয় অভিনেতা আব্দুল কাদেরকে। তিনি বলেন, ‘এখন মাঝে মাঝে অভিনয় করা হয়। তেমন একটা নিয়মিত অভিনয় করা হচ্ছে না। আজকে এখানে এসেছি ভোট দিতে। সেই সঙ্গে সবার সঙ্গে দেখা হবে। এই ভোট উৎসব আমাদের শিল্পী পরিবারের একটা মিলনমেলা।’

মাঠেই অভিনেতা শতাব্দী ওয়াদুদ এবং ফারুক আহমেদকে ঘিরে ছবি তোলায় ব্যস্ত ভক্তরা। এই তারকা শিল্পীরাও সবার সঙ্গে ছবি তুলছেন, গল্প করছেন।

শিল্পকলা একাডেমির সঙ্গীত ও নৃত্যকলা ভবনের সামনে অভিনেত্রী চিত্রলেখা গুহকে ঘিরে চুমকী’সহ আরও কয়েকজনকে বেশ প্রাণচঞ্চল দেখা গেলো। চিত্রলেখা গুহ বলেন, ‘মাত্রই ভোট দিয়ে বের কলাম। এখন গল্প করছি। অনেকের সাথে কতো দিন পর দেখা হলো আজ। ভীষণ ভালো লাগছে।’

কিছুটা ক্লান্ত হয়ে নিজেদের মধ্যে গল্প করছেন অভিনেতা শহীদুল আলম সাচ্চু, আমিরুল হক চৌধুরী। সাচ্চু এই নির্বাচনে সভাপতি প্রার্থী। তিনি বলেন, ‘নির্বাচনকে ঘিরে আমাদের মধ্যে এখন উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। শিল্পীরা এবার এক হয়েছে। আমার বিশ্বাস, এবার ভালো কিছু হবে। ভোটারদের উপর আস্থা আছে। আশা করি, আমিই নির্বাচনে জয়ী হব।’

এদিকে ভোটকেন্দ্র থেকে বের হয়ে বেশ কয়েকজন ভোটার জানান, নির্বাচনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে। বিশেষ করে সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক পদে। এই দুটি পদের প্রার্থীদের গ্রহণযোগ্যতা আছে। ফলে ভোটের হিসাবে কে যে এগিয়ে থাকবে সেটা বলা মুশকিল। এখন শুধু ফলাফলের জন্য অপেক্ষা।

(দ্য রিপোর্ট/পিএস/জেডটি/এনআই/ফেব্রুয়ারি ১০, ২০১৭)