মনোজিৎ মিত্র

আমি যে তোমারে দেখি নাই কোনো কালে, তারপরও না মনে হয় কোথায় যেন তোমারে দেখছি। মনে হয়, এই একটু আগেও দেখলাম চোখের সামনে দিয়ে হেঁটে চলে গেলে তুমি! আচ্ছা তোমারও কি এমন মনে হয়, তোমারও এই দেখা দেখা লাগে আমারে, অচেনা কাউরে মনে হইতে থাকে এইটা বুঝি আমি, বলো না প্লিজ! বুকের মধ্যে টিমটিমে উত্তেজনা নিয়ে গরম হয়ে যাওয়া ফোনের সঙ্গেই কান পেতে রাখে মনজুরুল।

-না, আমার ওইসব ভাবাভাবি নাই, আমি তো জানিই তুমি কেমন। কুলসুমের সহজ উত্তরেও মনজুরুলের বুকের ধুকপুক বাড়ে। তারপরও ঢোক গিলে সে প্রশ্ন করে যায়, আচ্ছা বলো তো আমি কেমন?

এর উত্তর বহুবার শোনা হয়ে গেছে মনজুরুলের, তবুও কুলসুমের বলা, ‘তুমি তোমার মত, আবার কেমন!’ এই লাইনটা শুনেই মোবাইলে ‘আমাকে আমার মত থাকতে দাও’ গানটা ভরছে সে। সেদিন বউয়ের সঙ্গে ঝগড়ার সময়ও মনজুরুল এই কথাটারেও নিজের অজান্তেই ব্যবহার করছে, আমি আমার মতই, তোমার পছন্দ না হলে চলে যাও। বউরে কথাটা বলার পরই তার কুলসুমের কথা মনে হওয়ায় ঝগড়াটা একেবারে থিতিয়ে যায়। এই হয়েছে আজকাল মনজুরুলের, রং নাম্বারে পরিচয় থেকে কথা আর কথা ফুরায় না, প্রথম প্রথম কথা বলতে ভালো লাগত, আর এখন কথা বলতে না পারলে খারাপ লাগে। সারাদিন খালি খালি লাগে, রাত্রে ঠিকঠাক ঘুমও আসে না। তখন অবশ্য কুলসুমের জামাইয়ের উপর ভীষণ রাগ হয়, মনজুরুলের। রাত্রে কতকথা বলতে ইচ্ছে করে, কিছুই বলা হয়ে ওঠে না। মনজু ভাবে কুলসুমের জামাইটা নিশ্চয়ই একটা খাটাস, অমানুষের একশেষ। তা না হলে কী আর রাত্রে কুলসুমরে ফোন বন্ধ করে রাখতে হয়! তবে তারপরও তো দিনের বেলায় কথা হয়, এও কম না, আবার কোন কোনো দিন সন্ধ্যা রাতেও কথা হয় কুলসুমের সঙ্গে! সেইদিনও সন্ধ্যায় কথা বলার সময় অবশ্য আর একটু হলেই নিজের বউয়ের কাছে ধরা খেতে খেতে বেঁচে গেছে সে, আরেকটু হলেই কাম সারা হয়ে যাইত! এমনিতেই বউ তারে কয়েকদিন থেকে সন্দেহ করে যাচ্ছে তারপর হাতেনাতে ধরা খাইলে কর্ম সাবাড়। তবে সেইদিন বড় পোলার জন্য তার উপর দিয়ে ঝড়টা যায় নাই, ফোনে কথা বলার অপরাধে ওইসময় মাইরটা পোলার উপর দিয়েই গেছে। আগে হইলে সেও হয়ত গিয়ে পোলারে দু’চারটে চড় হাঁকাত, কিন্তু কুলসুমের সঙ্গে কথা বলা শুরু করার পর থেকে তার মনটাও যেন কেমন নরম নরম হয়ে গেছে। কোনো কিছুতেই আর আগের মত রাগ লাগে না, সারাদিন খাটুনির পর সময়মত ভাত না পেলেও রক্ত মাথায় উঠে যায় না। এমনকী ভ্যান চালানোর সময়ও তার মনে এখন গান উঠে আসে, গুনগুন করে সে দু’চার লাইন গেয়েও নেয়। মোবাইলের মেমরি কার্ডেও গানের পরিমাণ দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। এই অবস্থায় একদিন হঠাৎ করেই বন্ধ হয়ে যায় কুলসুমের মোবাইল নম্বর, ভীষণ অস্থিরতায় পুরো সপ্তা পার করার পর অচেনা এক নম্বর থেকে ভেসে আসে কুলসুমের গলা, -শোনো, আমার ফোন না জামাইয়ে ভেঙে দিছে, এইজন্য তোমার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করতে পারি নাই। তুমি ভালো আছো তো?

মনজুরুলের বুকের ভেতর হঠাৎ করে যেন প্রজাপতির দল উড়াউড়ি শুরু করল। কি বলবে ভেবে সে কথা খুঁজে পায় না। তারপর যেন হঠাৎ করে তার বুকের সমস্ত বাঁধ ভেঙে গেল, প্রথমে সে কাঁপতে কাঁপতে বলল, - সাতদিন, কুলসুম, সাতদিন। তুমি এর মধ্যে একটাবারও আমারে জানাতে পারলে না। কতবার তোমারে ফোন করছি তুমি জানো। একবারও তোমার মনে হলো না আমার কথা। একবারও মনে হলো না আমি চিন্তা করব, তোমাকে না পেলে আমার যে কেমন লাগে তা বুঝি তুমি জানতে না? কেন আরও আগে জানালে না, একটাবারও তুমি অন্যকারও ফোন থেকে আমারে জানাতে পারলে না? কথা শেষ করে মনজুরুল হাঁপাতে থাকে।

-আমার জন্য কেউ এত চিন্তা করে আমি ভাবি নাই। কুলসুমের সহজ উত্তরে মনজুরুল আরও বিচলিত হয়ে পড়ে। সে কথা খুঁজে পায় না। তারপর হুট করেই বলে ওঠে -বলো, তোমার কী ফোন লাগবে? আমি দিচ্ছি। আমি তোমার সঙ্গে কথা না বলে একদিনও আর থাকতে চাই না।

-না। না। আমার ফোন লাগবে না। যখন সবাই বলবে ফোন পেলাম কোথায় তখন আমি কী বলব? আমি আর ঝামেলা চাই না। এমনিতেই মেলা ঝামেলা হয়ে গেছে। এখন পরিস্থিতি একটু ঠা-া হইছে। এখন ফোন আমার কাছে কেউ দেখলে আবার নতুন ঝামেলা শুরু হবে। তার চেয়ে যখন সুযো পাবো তখন তোমারে আমি...। এই কে যেন আসছে। রাখি রাখি। ভালো থাইকো। কুলসুম ফোন রেখে দেয়। মনজুরুল না না, বলতে বলতেই লাইন কেটে যায়। সে আবার ওই নম্বরে ডায়াল করে। কিন্তু ওই বিরক্তিকর কণ্ঠস্বর আপনার ডায়ালকৃত নাম্বারে এই মুহূর্তে সংযোগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

২.

মনজুরুলের সংসারটা শুরু হয়েছিলো আরো বছর পনের আগে। বয়সের হিসেব করলে তার নিজেরও বয়স কম না, কাগজের হিসেবে প্রায় ৪৩ হইল। এই পনের বছরে নানা উত্থান পতন পার হয়ে এখন তার মাঠে কয়েক বিঘা জমি আর পাকা টিনশেডের ঘর হইছে। ঘরের পিছনের ডোবাটারেও কেটেকুটে ছোটখাট একটা পুকুর বানানো হইছে। আর যেই ভ্যানের প্যাডেল মেরে তার এই রোজগার তাতেও মটর লাগিয়ে খাটুনি কমানো গেছে। এর মধ্যে বড় ছেলের বয়স প্রায় ১৪ আর ছোট ছেলের বয়স চোখের সামনে ১০ বছর হয়ে গেলো। সবার ছোট মেয়ের বয়সও দেখ দেখ করে ৭ ধরছে। সবই গোছানো কিন্তু এই মোবাইল ফোন কেনার পর থেকেই যেন সব এলোমেলো হয়ে গেল মনজুরুলের। কোথা থেকে কুলসুম এসে যেন তার ঘুম ভাঙিয়ে গেল। এখন আর আয় রোজগারে তার মন বসে না। ভাড়া নিয়ে যাত্রীদের সঙ্গেও তার দর কষাকাষি করতে বিরক্ত লাগে। ভ্যান চালানোর ফাঁকে ফাঁকে কাঁচকলার ব্যবসাটাও তার কাছে এখন বাড়তি ঝামেলা মনে হয়। সংসারের জন্য এতকিছু করেও কি সে সবার কাছে ভালো হইতে পারছে। না, পারে নাই। এইটা নাই, ওইটা নাই, ওইটা দরকার বউয়ের মুখে সারাক্ষণ এই কথার বাইরে মনজুরুলের মনে হয় কোনোদিন সে অন্য কথা শোনে নাই। ছেলেমেয়েদেরও সেই একই সুর, আজ এটা তো কাল ওইটা। তাদের দিতে পারলেই সে ভালো, অথচ তারও যে নিজের একটা ইচ্ছে আছে, নিজেরও যে কিছু চাওয়া থাকতে পারে সেসবের বালাই এদের কাছে নাই। অথচ এতগুলো বছর ধরে সে এই গাধার খাটুনি খেটে চলল এদের জন্যই। এই যে একেবারে শূণ্য থেকে সে এতকিছু করল তার যেনো কোনো মূল্যই এদের কাছে নাই। সংসারের প্রথম দিকে বউয়ের গলার হার বিক্রি করে যেই ভ্যান কেনা হইছিলো সেই খোটা আজও তারে শুনতে হয়। অথচ বউরে সে নতুন হার বানায়া দিছে, কানের সোনার দুল, হাতের বালাও সে কী দেয় নাই, দিছে। তারপরও কারও বউয়ের নতুন সোনার নুপূর হইছে সেই খোঁটা তারে শুনতে হয়। না, মনজুরুল অনেক ভেবে দেখেছে, এই অজাতের গুষ্ঠিরে যতই দেওয়া হোক তাদের মন পাওয়া যাবে না। এই পনের বছর ধরে সে তো কম চেষ্টা করে নাই, তারপরও তাদের খাই ক্রমশই বাড়ছে। নিজের পড়ার জন্য নতুন একটা লুঙ্গি কিনতেও তারে এখনও দশবার ভাবতে হয়, অথচ এদের আবদার করতে একবারও ভাবতে হয় না, বললেই আনতে হবে। না আনলেই নিত্যকার ঝগড়া আর কথার দেমাগে চারপাশ মুখর হয়ে ওঠে, পাড়ার মানুষ জেনে যায়। মনজুরুল বিয়ের প্রথম দিকের দিনগুলো ভাবে, কিন্তু সেখানেও যেন কোনো আলো দেখতে সে পায় না। তখন বয়স কম ছিলো তার, বাপের কথা মত বিয়ের পর যে বউ তার ঘরে আসছিলো সেই আতিয়ার স্বাভাবিক ছলরেই সে প্রথমে ভালোবাসা মনে করছিলো। আর নতুন শরীরের মোহে সেও অত মনের দিকে তাকায় নাই। তবে আতিয়া দেখতে খারাপ না, শরীরও সুগঠিত। প্রথম বছর তো শরীর ছেনেই তার কীভাবে চলে গেলো, সেইসব স্বপ্ন স্বপ্ন লাগে। সেই শরীর অবশ্য এখনো সুগঠিতই, আতিয়ার সঙ্গে মিলতে তার ইচ্ছে এই পনের বছর পরও খুব বেশি কমছে ব্যাপারটা এমন না। আর তিনটে বাচ্চা হওয়ার পরেও আতিয়ার শরীরে সেইসবের ছাপ এখনো কমে নাই। পরিবর্তন যেটুকু তা ওই বুকে আর পিছনে, তা মনজুরুলের খারাপ লাগে না, বরং ব্যাপারটা তার ভালো লাগার মতই বড় হইছে। কিন্তু ওই শরীর থেকে যখন কথা বের হয় তখন আর কিছুই যেন ভালো লাগে না। সব মিলায়ে মনজুরুল বিরক্ত নিজের আর আর সংসারের উপর। এই সংসার ঘানি মনে হয় তার সব শুষে নিচ্ছে, আর দিচ্ছে শুধু অবহেলা।

কুলসুমের সঙ্গে পরিচয় গাঢ় হওয়ার পর থেকেই, পরিচয় গাঢ় মানে কথা বেশিক্ষণ আরকি, এর বিষয় ওরে জানানোর পর সবকিছু মিলায়ে দেখা গেল কুলসুমও মনজুরুলের মতই। সংসারে তারও মন লাগে না, মনে হয় কার জন্য সে এইসব করছে। এইসব জানার পর সবকিছু ছেড়ে যেইদিকে দুই চোখ যায় সেইদিকে চলে যাইতে ইচ্ছে করে তাদের। এই যে এখন কুলসুমের সঙ্গে ঠিকঠাক কথা হচ্ছে না, তবুও মনজুরুলের মনে হয় কুলসুম তার কথা ভাবছে, তার কথা মনে করে কষ্ট পাচ্ছে, তারে কখন ফোন করবে, কীভাবে ফোন করবে এইসব নিয়ে টেনশন করছে। অথচ নিজের বউটা বাড়িতে ফিরতে দেরী হইলেই শুরু করবে ঝগড়া, অথচ দেরী করার জন্য তার একটুও চিন্তা হয় না। কিন্তু একদিন সে কুলসুমরে সন্ধ্যায় ফোন করতে একটু দেরী করছিলো, তাই নিয়ে কুলসুম কি দুঃশ্চিন্তায় না তার জন্য করছিলো। কত অভিমান ছিলো তার। ভাবলেই মায়া লাগে মনজুরুলের, অথচ একটা ছবির বাইরে সে আর কতখানি দেখছে কুলসুমের। কিন্তু দেখাই কী সব, আতিয়া তো দেখতে খারাপ না, কিন্তু মন বলে তার আদৌ কিছু আছে নাকি! কুলসুম কী সুন্দর করে কথা বলে, কত সুন্দর করে অপেক্ষা করে তার জন্য যে শুধু সে কখন ফোন করবে। কুলসুম আবার কখন ফোন করবে ভাবতে ভাবতে অস্থিরতায় দিন কাটায় সে। দিন যেন আর কাটে না তার। সবকিছু মনে হচ্ছে অনেক ধীর হয়ে গেছে। কুলসুমের নতুন পুরনো সব নাম্বারে ফোন দিতে দিতে সপ্তা ঘুরে যায়, তবুও কোনো সাড়া পাওয়া যায় না। সব আশা ছেড়ে দিয়ে একদিন মাঝখানে মনজুরুল পাগলের মত আশাপুরও ঘুরে আসে। কুলসুম তার বাড়ি বলছিলো এইখানে। কিন্তু ওইখানে গিয়ে সে কারে কী বলবে, একজনরে কোনরকমে বলছিলো আমাগের গ্রামের কুলসুমের বিয়ে হইছিলো এইখানে ওগো বাড়িটা কোথায় বলতে পারেন? মেলাদিন আসা হয় না তো, সেই বিয়ের সময় আসছিলাম। যে লোকের কাছে এই কথা সেই লোকের জবাব ছিলো, ফোন নম্বর নাই? ফোন দেন শুনে সারাদিন আশাপুর বাজারের এখান সেখান ঘুরে মনজুরুল বাড়িতে ফেরে। আর এমনই কপাল বাড়িতে ফিরতেই ফোন আসে কুলসুমের। কত কথা যে মনজুরুল বলে তখন, কথা যেন আর ফুরায় না, কুলসুমেরও একই দশা। কুলসুমের ব্যালান্স শেষ হয় দ্রুতই, তারপর একসময় মনজুরুলেও ফুরায় ফোনের টাকা। কিন্তু কথা আরও বলা যাবে, কুলসুম এখন আর জামাইয়ের বাড়ি নাই, বাপের বাড়িতে গেছে একমাস থাকব। এখন তার ফোনে কথা বলতে আর কোনো সমস্যা নাই, সমস্যা শুধু একটাই যে তার নিজের ফোন নাই। অন্যের ফোনে সিম বেশিক্ষণ ভরে রাখা যায় না। এইসব ভাবতে ভাবতে মনজু দ্রুত বাজারের দিকে রওনা হয়। নতুন করে ফোনে রিচার্জ করে আর কুলসুমের ফোনেও। এইটা সে প্রথম থেকেই করে আসছে, কুলসুমের নিষেধ সত্বেও। আজকে সে হাজার তিনেক টাকা বিকাশও করে দিলো নতুন ফোন কেনার জন্য। বাজার থেকে কথা বলতে বলতে বাড়ি, কুলসুমের কী ঝাড়ি, কেন সে বিকাশ করল, টাকা পাঠালো- এইসব নিয়ে। ভালো লাগে, কুলসুমের এইসব ঝাড়িও তার ভালো লাগে। কালই ফোন কিনবা, সকাল সকাল, একটুও যেন দেরী না হয়, দেরী হইলে কী হবে জানিয়ে মনজুরুলও তারে ঝাড়ি দেয়। বহুদিন পর রাত্তিরে যেন সে খুব শান্তি নিয়ে ঘুমায়।

৩.

মনজুরুলের বড় ছেলে মাহাতাব ক্লাস সেভেনে, মাঝখানে সে একবার স্কুল আর মাদরাসা করতে করতে দুইবছর পিছনে পড়ে গেছে। কিন্তু এই পিছনে পড়ার ব্যাপারটারে সে অন্যদিক থেকে উসুল করে নিয়েছে। পাড়ায় তার বয়সী যত ছেলেপেলে আছে তাদের সবার নেতা সে এবং যত অকাজ চারপাশে ঘটে তার প্রায় সবগুলোতেই মাহাতাবের প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ আয়োজন থাকে। তাই সে যখন নতুন ফোন নিয়ে বাড়িতে ফিরল তখনই আতিয়ার মাথায় নতুন দুঃশ্চিন্তা এসে গেল। তার দৃঢ় বিশ্বাস নিশ্চয়ই মাহাতাব ফোন কারও ফোন চুরি করছে। মেরেকেটেও তার কাছ থেকে চুরির কথা স্বীকার করাতে না পেরে আতিয়া হাল ছেড়ে দিলো। মনজুরুলের অবশ্য এ নিয়ে মাথাব্যথা নেই, পুরো সংসারই এখন তার কাছে বিরানভূমি হয়ে গেছে। প্রায় একমাস পার হয়ে গেল কুলসুমের কোনো খবর নাই, কোনোভাবেই আর কিছুই সে জানতে পারছে না। মাঝে মাঝে মনের মধ্যে কুকথা জাগে, কুলসুম বেঁচে আছে তো? নাকি বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটছে! সারাক্ষণ এই দুশ্চিন্তায় তার কিছুতেই মনোযোগ নাই। তাই মাহাতাবের ফোন কেনা নিয়ে আগে হইলে দুয়েকটা চড় যে সে হাঁকাতো এটা নিশ্চিত। এখন উল্টো বউ যখন এই বিষয় নিয়ে শাস্তির আবদার করে তখন সে উল্টো বউয়ের ধমক মারে। সেদিন এই ধমক খেয়েই বউ আরও রেগেমেগে পুরনো একটা কাগজের বাক্স মনজুরুলের মুখে ছুড়ে মারলে বাক্স খুলে একগাঁদা সিমকার্ড ছড়িয়ে পড়ে। সঙ্গে বউয়ের অবিরাম কথা, জেলে যাইবা এই পোলার জন্য, আমার কথা লিখে রাইখো। এখনও সময় আছে কইলাম পোলারে শাসন করো, এই পোলা সারাদিন ফোনে কথা কয়, কী সব নাকি করে। মোবাইলে কীসব করে কণ্ঠ বদলায়ে নাকি পোদ্দারপাড়ার অসীমের কাছ থেকে নাকি টাকাও নিছে। অতবড় মুরব্বীরে ঠকায়, আরও কার কার সঙ্গে কতকিছু করে। এখনও সময় আছে সামলাও না হলে কোমড়ে দড়ি পড়ল বলে। কিন্তু মনজুরুলের কানে সেসব কথার কিছুই ঢোকে না, ছড়িয়ে যাওয়া সিমকার্ডের মধ্যে থেকে যেই সিমটা সে প্রথম মোবাইলে ভরছে সেই নম্বরটায় কুলসুমের! চোখ লাল করে সে শুধু বলে, শুয়োরের বাচ্চাটা কোথায়?