মনিরুজ্জামান বাবলু, চাঁদপুর : বাল্য বিয়ের গ্রাম কুড়লী। দারিদ্র্যতার চাপে ক্রমান্বয়ে বাড়ছে বাল্যবিয়ের হিড়িক। সম্প্রতি সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রী তানজিলার বাল্য বিয়ে শেষ হয়েছে। এখন যৌতুকের ৫০ হাজার টাকা জোগাড় করতে সতের বছর বয়সী ভাই রাজিব হোসেন বাল্য বিয়ের প্রস্তুতি নিয়েছেন। যার সাথে বিয়ের কথা পাকাপোক্ত করেছে পরিবার, সেই কিশোরীর বয়স মাত্র ১৩ বছর।

দেশে বাল্য বিয়ের বয়স নির্ধারণ নিয়ে জাতীয় সংসদ থেকে বিশ্লেষকদের এতো মাতামাতির পরিসমাপ্তি হয়েছে। বাল্য বিয়ের বয়স নির্ধারণ ও দণ্ডবিধি আইন সংশোধন করা হয়েছে।

এসব বিষয়ে ভ্রুক্ষেপ নেই কুড়লী গ্রামের বাসিন্দাদের। অজোপাড়া গ্রামটি চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলার ৭ নং বড়কুল ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ড (দেবীপুর-গোপালখোঁড়-কুড়লী)। তিনটি গ্রাম নিয়ে এই ওয়ার্ডটি গঠিত।

আগামী ১৫ মার্চ রাজিব আর আশার বাল্যবিয়ের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। বিনিময়ে রাজিবের পরিবারকে যৌতুক বাবদ দিতে হবে ৭০ হাজার টাকা।

সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, কুড়লী গ্রামের মোল্লাবাড়ীর বিল্লাল হোসেনের ছেলে রাজীব হোসেন। দশ বছর বয়সেই পড়ালেখা শেষ করে কর্মমুখী হয়। বর্তমানে ঢাকায় একটি ফার্নিচারের দোকানে শ্রমিক হিসেবে কাজ করছে। প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, তার বয়স ষোল কিংবা সতের।

একমাস পূর্বে তার বোন তানজিলা আক্তারের বিয়ে হয়েছে। সে রামচন্দ্রপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণীর শিক্ষার্থী ছিল। তানজিলার এক বছরের বড় এই রাজিব।

তানজিলা আক্তার ও রাজিব হোসেনের মা সুফিয়া বেগম দ্য রিপোর্ট টুয়ান্টিফোর ডটকমকে বলেন, প্রায় একমাস পূর্বে ফরিদগঞ্জে মেয়ের বিয়ে দিয়েছি। জামাইকে ৫০ হাজার টাকা দেওয়ার কথা ছিল। এছাড়া আরো মালামাল দিতে হবে। কোন উপায় নেই। তাই রাজিবকে বিয়ে করানোর প্রস্তুতি নিয়েছি। মেয়ের বাবার সাথে ৭০ হাজার টাকার কথা চূড়ান্ত হয়েছে। বুধবারে বিয়ে হবার কথা ছিল। এখন মেয়ের জামাই আসতে দেরি দেখে বিয়ের তারিখ এক সপ্তাহ (১৫ মার্চ) পিছানো হয়েছে।

এদিকে একই গ্রামের বাল্য বিয়ের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা মেয়ে আশার বাবা মেয়ের বয়স আঠারো হতে কয়েকমাস বাকি রয়েছে বলে দাবি করেন। তার কাছে জানতে চাইলে বলেন, এখন বিয়ে হবে। কিন্তু মেয়েকে শ্বশুরবাড়িতে দিবো না। আগামী কোরবানীর ঈদের পর দিবো। প্রশ্নের জবাবে বলেন, মেয়ের কয়েকবছর পড়ালেখা বন্ধ ছিল। জন্মনিবন্ধন কাগজপত্র সব ঠিকঠাক আছে। আঠারো বছর হলেই শ্বশুর বাড়িতে দিবো। অথচ বাবার সম্মুখে মেয়ে আশার কাছে জানতে চাইলে সে মাত্র তিন মাস আগে পড়া বন্ধ করেছে বলে নিশ্চিত করে। আশা বলেন, ‘মা-বাবা যে সিদ্ধান্ত নিবে, আমি সেই সিদ্ধান্তে একমত।’

স্থানীয় সাংবাদকর্মী এসএম মিরাজ মুন্সী দ্য রিপোর্ট টুয়ান্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘এই গ্রামে গত একমাসে আরো দুইটি বাল্য বিয়ের খবর পেয়েছি। একটি বন্ধ হয়েছে। আরেকটি পরে গোপনে বিয়ে হয়ে গেছে।’

বিষয়টি স্বীকার করে ইউপি সদস্য আবদুল মান্নান বলেন, কিছুদিন আগে দুইটি বাল্য বিয়ের কাজে বাধা দিয়েছি। তবে একটি বাল্য বিয়ে পরে হয়েছে। এখন যারা বিয়ের আয়োজন করবে, তাদেরকে বিয়ে বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হবে।

হাজীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. জাবেদুল ইসলাম দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বাল্য বিয়ের আয়োজন করলেই সংশ্লিষ্টদের আটক করা হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাহবুবুল আলম মজুমদার বলেন, বাল্য বিয়ে হতে দেওয়া যাবে না। আমরা বাল্য বিয়ে বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

(দ্য রিপোর্ট/এপি/মার্চ ০৮, ২০১৭)