ট্রাইব্যুনালে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে রায়ের জন্য অপেক্ষমাণের তালিকায় রেকর্ড গড়েছে জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর মামলা। এরপরও এ মামলার রায় কবে হবে তা কেউ জানে না।

জানা গেছে, রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখার পর তিন মাস (৯৪ দিন) পার হলেও রায় ঘোষণা করা হয়নি। পাশাপাশি কখন এই মামলার রায় ঘোষণা করা হবে সে ব্যাপারেও নির্দিষ্ট কিছু বলতে পারছে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

এদিকে, নিজামীর মামলা রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রেখে ট্রাইব্যুনাল-১ থেকে অতি সম্প্রতি বিদায় নিয়েছেন চেয়ারম্যান বিচারপতি এটিএম ফজলে কবির। যার পরিপ্রেক্ষিতে নতুনভাবে ট্রাইব্যুনাল-১ পুনর্গঠিত হওয়ার পর নিজামীর মামলায় আবার যুক্তিতর্ক হতে পারে। আর পুনরায় যুক্তিতর্ক হলে রায়ের জন্য অপেক্ষা হতে পারে আরও কয়েক মাস।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল ও ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন টিমের সমন্বয়ক এম কে রহমান দ্য রিপোর্টকে জানান, ট্রাইব্যুনাল-১ এ চেয়ারম্যান না থাকায় রায় হচ্ছে না।

ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন হলে নতুন করে যুক্তিতর্ক হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘যুক্তিতর্ক উপস্থাপন অবশ্যই হবে। কারণ নতুন বিচারপতিকে এ মামলা সম্পর্কে জানতে হবে। নতুন করে যুক্তি উপস্থাপনের পরই রায় ঘোষণা করা হবে।’

ট্রাইব্যুনাল-১ এর নতুন চেয়ারম্যান কবে নাগাদ নিয়োগ হতে পারে জানতে চাইলে এমকে রহমান বলেন, ‘আমি জানতে পেরেছি দ্রুতই নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।’

রাষ্ট্রপক্ষে মামলা পরিচালনাকারী প্রসিকিউটর মো. আলী দ্য রিপোর্টকে জানান, নতুন বিচারপতি আসার পর নতুন করে আবার যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করা হবে কিনা-সে ব্যাপারে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন ১৯৭৩-এ নির্দিষ্ট করে কিছু বলা নেই।

উল্লেখ্য, গত ২০ নভেম্বর নিজামীর মামলার রায় যে কোনো দিন ঘোষণা করা হবে এই মর্মে (সিএভিতে) রেখে দেয় ট্রাইব্যুনাল। নিজামীর মামলাই একমাত্র মামলা যেটি রায়ের জন্য দুইবার অপেক্ষমাণের তালিকায় রাখা হয়।

এর আগে গত ১৩ নভেম্বর এ মামলায় আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ না করেই রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রেখেছিল ট্রাইব্যুনাল। পরে আসামিপক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে আবার যুক্তি উপস্থাপনের সুযোগ দেওয়া হয়।

এরপর ১৭ থেকে ১৯ নভেম্বর তিন দিন নিজামীর পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন শেষ করেন ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক, এডভোকেট মিজানুল ইসলাম ও তাজুল ইসলাম। এর আগে ৭ নভেম্বর একদিন নিজামীর পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করেন এডভোকেট মিজানুল ইসলাম।

রাষ্ট্রপক্ষে গত ৩ থেকে ৬ নভেম্বর প্রসিকিউটর সৈয়দ হায়দার আলী, মোহাম্মদ আলী ও ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ নিজামীর বিরুদ্ধে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন।

নিজামীর পক্ষে সাক্ষী দেওয়ার জন্য দশ হাজার ১১১ জন সাক্ষীর তালিকা থেকে ৪ জনকে সাফাই সাক্ষীর অনুমতি দিয়ে গত ৬ অক্টোবর আদেশ দেয় ট্রাইব্যুনাল।

২০১২ সালের ২৬ আগস্ট থেকে ২০১৩ সালের ৮ অক্টোবর পর্যন্ত নিজামীর বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেন মুক্তিযোদ্ধা, অধ্যাপক, সাংবাদিক ও ইতিহাসবিদসহ মোট ২৬ জন।

২০১১ সালের ১১ ডিসেম্বর মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করেন প্রসিকিউশন পক্ষ।

২০১২ সালের ৯ জানুয়ারি নিজামীর বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নেয় ট্রাইব্যুনাল।

এরপর ২০১২ সালের ২৮ মে ১৬টি অভিযোগ এনে নিজামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে ট্রাইব্যুনাল।

তার বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, লুট, ধর্ষণ, উস্কানি ও সহায়তা, পরিকল্পনা ও ষড়যন্ত্র এবং বুদ্ধিজীবী হত্যাসহ মোট ১৬টি অভিযোগ আনা হয়।

ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার মামলায় ২০১০ সালের ২৯ জুন মতিউর রহমান নিজামীকে গ্রেফতার করা হয়। পরে একই বছরের ২ আগস্ট এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তাকে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়।

(দ্য রিপোর্ট/এসএ/এইচএসএম/এনআই/ফেব্রুয়ারি ২২, ২০১৪)