দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : কোনো দলীয় ওয়েজবোর্ড সাংবাদিক সমাজ মেনে নেবে না বলে জানিয়ে সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ বলেছেন, সকল সাংবাদিক সংগঠনের প্রতিনিধিদের নিয়ে ওয়েজবোর্ড গঠন করতে হবে। আর রেজিস্টার্ড সাংবাদিক ইউনিয়নকে বাদ দিয়ে যদি দলকানা ওয়েজবোর্ড গঠন করা হয় তাহলেও সাংবাদিক সমাজ মেনে নেবে না। জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মঙ্গলবার (১৪ মার্চ) আয়োজিত অবস্থান কর্মসূচিতে সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ এ কথা বলেন। বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন-বিএফইউজে ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন-ডিইউজে’র একাংশ এ অবস্থান কর্মসূচির আয়োজন করে।

বিএফইউজে’র সভাপতি শওকত মাহমুদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন- সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক রুহুল আমিন গাজী, বিএফইউজের মহাসচিব এম. আবদুল্লাহ, সাবেক মহাসচিব এম এ আজীজ, ডিইউজে’র সভাপতি কবি আবদুল হাই শিকদার, সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম প্রধান, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি শাখাওয়াত হোসেন বাদশা, সাধারণ সম্পাদক মোরসালিন নোমানী, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ, বর্তমান যুগ্ম সম্পাদক ইলিয়াস খান, সাবেক যুগ্ম সম্পাদক কাদের গণি চৌধুরী, বিএফইউজের সাংগঠনিক সম্পাদক শহীদুল ইসলাম, ডিইউজে’র সহ-সভাপতি সৈয়দ আলী আসফার, খুরশিদ আলম, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মুন্সী আবদুল মান্নান, মুহাম্মদ বাকের হোসাইন, সাংবাদিক নেতা নুরুল আমীন রোকন, আবুল কালাম মানিক, জাকির হোসেন, ইরফানুল হক নাহিদ, এস এম আলমগীর, সাখাওয়াত হোসেন ইবনে মঈন চৌধুরী, ডি.এম. আমিরুল ইসলাম অমর, বোরহান উদ্দিন প্রমুখ। সমাবেশ পরিচালনা করেন ডিইউজে’র যুগ্ম সম্পাদক শাহীন হাসনাত।

সভাপতির বক্তব্যে শওকত মাহমুদ বলেন, নবম ওয়েজবোর্ড সাংবাদিকদের মৌলিক দাবি। আমরা দেড় বছর যাবৎ এ দাবি বাস্তবায়নের জন্য আন্দোলন করে যাচ্ছি। যদি সকল সাংবাদিক সংগঠনের প্রতিনিধিদের মাধ্যমে নবম ওয়েজবোর্ড গঠন করা হয় তাহলে কোনো কথা নেই। আর যদি শুধুমাত্র সরকার সমর্থক প্রতিনিধিদের মাধ্যমে ওয়েজবোর্ড গঠন করা হয় তাহলে আমরা তা মেনে নেবো না। শুধু আমরাই নয়, সাংবাদিক সমাজই তা মেনে নিবে না। সকল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাংবাদিকদের সমন্বয়ে নবম ওয়েজবোর্ড গঠন করতে হবে।

এই সরকারের আমলে পশুপাখির চেয়েও সাংবাদিকরা বেশি নির্যাতিত হয়েছে বলে মন্তব্য করে শওকত মাহমুদ বলেন, এই সরকারের আমলে আজ পর্যন্ত একজন সাংবাদিক হত্যারও বিচার হয়নি। কোনো সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনারও বিচার হয়নি।

তথ্যমন্ত্রী ইনুকে উদ্দেশ করে এই সাংবাদিক নেতা বলেন, এই সরকারের বিদায়ের আগেই আপনাকে বিদায় নিতে হবে। একদিন সাংবাদিকদের কাঠগড়ায়ও দাঁড়াতে হবে। ভবিষ্যতে সকল সাংবাদিক হত্যা ও নির্যাতনের বিচার করা হবে। অবিলম্বে সকল বন্ধ গণমাধ্যম খুলে দিন। সাগর-রুনীসহ সকল সাংবাদিক হত্যা ও নির্যাতনের বিচার করুন।

রুহুল আমিন গাজী তার বক্তব্যে বলেন, অতীতে সকল পক্ষকে নিয়ে ওয়েজবোর্ড গঠন করা হয়েছে। এবারও সকল সাংবাদিক সংগঠনের প্রতিনিধিদের নিয়ে নবম ওয়েজবোর্ড গঠন করতে হবে। তা না হলে এর পরিণতি ভাল হবে না। ভোটারবিহীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই গণমাধ্যমের ওপর নিপীড়ন চালাচ্ছে। শতশত সাংবাদিকদের মিথ্যা মামলা দিয়ে কারাগারে আটকে রাখছে। অসংখ্য মিডিয়া বন্ধ করে হাজার হাজার সাংবাদিকদের বেকার করে রেখেছে।

তিনি বলেন, আজ কেউ সত্য কথা বলতে পারছে না। বললেই তাকে নানা ধরনের নির্যাতনের শিকার হতে হচ্ছে। দেশের কোনো মানুষ আজ নিরাপদে নেই। সাংবাদিকরা আজ নিরাপত্তাহীনতায় দিন কাটাচ্ছে। যতদিন গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা না হবে ততদিন সাংবাদিক ও গণমাধ্যম স্বাধীন হবে না। আমাদের আন্দোলন চলছে এবং যতদিন দাবি আদায় না হবে ততদিন আমাদের আন্দোলন চলবে।

এম আবদুল্লাহ বলেন, নবম ওয়েজবোর্ড গঠন নিয়ে তামাশা হচ্ছে। টালবাহানা চলছে বছরের পর বছর। নবম ওয়েজবোর্ড সাংবাদিকদের ন্যায্য দাবি। এটা করুণার বিষয় নয়। সরকারি কর্মচারীদের বেতন দ্বিগুণ হয়েছে। অথচ এখনো নবম ওয়েজবোর্ড গঠন করা হচ্ছে না। দেশে কারো বেতন বাড়বে আর কারো বেতন বাড়বে না তা হতে পারে না। দলকানা ও বিকলাঙ্গ ওয়েজবোর্ড গঠনের ষড়যন্ত্র হচ্ছে। সকল সাংবাদিক সংগঠন বিশেষ করে রেজিস্টার্ড বিএফইউজে ও ডিইউজের প্রতিনিধি নিয়ে নবম ওয়েজবোর্ড গঠন করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, দীর্ঘদিন যাবৎ আমরা বন্ধ গণমাধ্যম খুলে দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছি। তবু সরকার খুলে দিচ্ছে না। আজ দেশে অন্যান্য খুনের বিচার হলেও কোনো সাংবাদিক হত্যার বিচার হচ্ছে না। দাবি আদায়ে আগামী ২৩ মার্চ সারাদেশে বিক্ষোভ সমাবেশ কর্মসূচি পালন করা হবে।

কবি আবদুল হাই শিকদার বলেন, আজ আমাদের কর্মময় অবস্থায় থাকার কথা ছিল। অথচ সরকারের নিপীড়ন ও নির্যাতনের কারণে রাজপথে আসতে বাধ্য হয়েছি। আজ পর্যন্ত একটি সাংবাদিক হত্যার বিচারও এই বাংলার মাটিতে হয়নি। একটির পর একটি সংবাদ মাধ্যম বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। এত হাজার হাজার সাংবাদিক বেকার হয়ে মানবেতর জীবন অতিবাহিত করছে।

এ সময় তিনি অবিলম্বে সকল সাংবাদিক সংগঠনের প্রতিনিধিদের নিয়ে নবম ওয়েজবোর্ড গঠনের দাবি জানান।

(দ্য রিপোর্ট/এপি/এনআই/মার্চ ১৪, ২০১৭)