দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : ভাষা সৈনিক ও বাংলাদেশপ্রেমী  প্রখ্যাত সাংবাদিক জয়নুল আবেদিন স্মরণে ‘জয়নুল আবেদিন সম্মাননা’ পুরস্কার প্রবর্তনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি সাখাওয়াত হোসনে বাদশা। শনিবার বেলা সাড়ে ১১টায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনী মিলনায়তনে জয়নুল আবেদিন স্মরণে আয়োজিত এক শোকসভায় তিনি এ কথা জানান।

তিনি বলেন, একজন ভাষাসৈনিক ও প্রখ্যাত সাংবাদিক হিসেবে জয়নুল আবেদিন রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে সম্মাননা পাওয়ার দাবি রাখলেও সরকার কোন ধরনের সম্মাননা প্রদান করেনি। সরকার জয়নুল আবেদিনের চিকিৎসা ব্যায় বহন করারও প্রয়োজনবোধ করেনি উল্লেখ করে তিনি বলেন, জয়নুল আবেদিন একজন মহান মানুষ ছিলেন। তিনি ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সদস্য ছিলেন। তাই ডিআরইউ তার প্রতি সম্মান প্রদর্শনস্বরূপ আগামী বছর থেকে সেরা সাংস্কৃতিক প্রতিবেদনে ‘জয়নুল আবেদিন সম্মাননা পুরস্কার’ প্রদান করবে।

তিনি বলেন, রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে জয়নুল আবেদিনকে কোন ধরনের সম্মাননা না জানানো রাষ্ট্রের চরম ব্যর্থতা। জয়নুল আবেদিন একুশে পদকের যোগ্য ছিলেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, জয়নুল আবেদিন কখনো কিছু পাওয়ার আশায় থাকতেন না। কিন্তু যেখানে স্বয়ং বঙ্গবন্ধু নিজে তাকে নাগরিকত্ব দিয়েছিলেন, তার অবদান স্বীকার করেছিলেন, সেখানে বর্তমান সরকার তাকে সম্মান দেখিয়ে নিজে সম্মানিত হতে পারতো।

শোকসভায় বিশিষ্ট গীতিকার ও সাংবাদিক কে জি মোস্তফা বলেন, তিনি সব সময় সুন্দরের পরামর্শ দিতেন। তিনি এ দেশের কারও রক্তের বন্ধনে আবদ্ধ না হয়েও আত্মার বন্ধনে আত্মীয়ে পরিণত হয়েছেন।

অনুষ্ঠানে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক মুরসালিন নোমানি বলেন, জয়নুল আবেদিন নিজের কথা না ভেবে এই বাংলাদেশের মানুষকে, বাংলা ভাষাকে ভালবেসে সারাজীবন এদেশেই কাটিয়ে গেছেন। তার শেষ ইচ্ছাটাও ছিল নিজের সমাধি হবে বাংলাদেশে, সেটা হয়েছেও। রাষ্ট্র তার জন্য অনেক কিছুই করতে পারতো।

জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সহ-সভাপতি ও সাংবাদিক আব্দুর রহমান খান বলেন, তিনি আমার পরিবারের সদস্য হিসেবে ছিলেন। তিনি বাংলাদেশের অকৃত্তিম বন্ধু ছিলেন। তাকে হারিয়ে এক ধরনের শুন্যতার সৃষ্টি হয়েছে।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সোহেল হায়দার চৌধুরী, জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘জয়নুল আবেদিন কর্ণার’র দাবি জানান।

অনুষ্ঠানে জয়নুল আবেদিনের ছোটভাই সিরাজউদ্দিন বলেন, জয়নুল আবেদিনকে এভাবে সম্মান দেওয়ার জন্য উপস্থিত সবাইকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, আমরা পরিবারের সদস্য হয়েও তার জন্য যা করতে পারিনি সেটা আপনার করেছেন।

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন বাদশার সভাপতিত্বে ও মুরসালিন নোমানির সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব এম আব্দুল্লাহ, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক সভাপতি শাহেদুজ্জামান, জয়নুল আবেদিনের ঘনিষ্ঠজন ও সাংবাদিক শাহানাজ পলি প্রমুখ।

উল্লেখ্য, জয়নুল আবেদিন একজন উর্দুভাষী ভারতীয় নাগরিক ছিলেন যিনি ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় বাবার সাথে তৎকালীন পুর্ব পাকিস্তানে চলে আসেন। উর্দুভাষী হওয়া স্বত্ত্বেও পরবর্তীতে তিনি বাংলা ভাষার সমর্থনে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে বাঙালিদের সমর্থন করে শাসকগোষ্ঠীর বিরাগভাজন হন। পরবর্তীতে তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা পাকিস্তানে চলে গেলেও তিনি সারাজীবন বাংলাদেশেই কাটিয়ে দিয়েছেন, ভাষার টানে, এ দেশের টানে। গত ৯মার্চ মহান এই বাংলাদেশপ্রেমী না ফেরার দেশে পাড়ি জমান। তাকে মিরপুরে বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন করা হয়। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮১ বছর।

(দ্য রিপোর্ট/এএস/এপি/মার্চ ১৮, ২০১৭)