কী এমন ঘটনা ঘটল যে নরেন্দ্র মোদিকে চীনের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলতে হলো- অরুণাচল ভারতের অংশ, চীন যেন তার সম্প্রসারণ নীতি থেকে সরে আসে। গুজরাটের চিফ মিনিস্টার নরেন্দ্র মোদি আগামী নির্বাচনে ভারতীয় জনতা পার্টির প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী। অর্থাৎ বিজেপি অথবা বিজেপি জোট যদি আগামী নির্বাচনে জয়ী হয়, তাহলে মোদিই হবেন ভারতের আগামী দিনের প্রধানমন্ত্রী।

সেই নির্বাচনী প্রচারেই মোদি গিয়েছিলেন ভারতের ‘সেভেন সিস্টার’খ্যাত রাজ্যসমূহের অন্যতম অরুণাচলে। সেখানে এক নির্বাচনী র‌্যালিতে অংশগ্রহণ শেষে তিনি চীনকে সম্প্রসারণ নীতি থেকে সরে আসার আহ্বান জানান। তিনি তার বক্তব্যে এই প্রথমবারের মতো পররাষ্ট্র নীতি নিয়ে কোনো মন্তব্য করলেন। মোদি বলেন, আধুনিক বিশ্ব উন্নয়নের দিকেই এগিয়ে যাচ্ছে। তাই চীনের এই আগ্রাসনে কোনো দেশ সমর্থন দেবে না। অরুণাচল প্রদেশ অখণ্ড ভারতের অংশ এবং তা সব সময় ভারতেরই থাকবে উল্লেখ করে মোদি তার ভাষণে বলেন, ‘আমি এই মাটি ছুঁয়ে বলছি, কখনই অরুণাচলকে ভাঙতে দেব না, কখনও মাথা নোয়াতে দেব না।’

ভারতীয় জনতা পার্টির প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী মোদি তার বক্তব্যে আরও উল্লেখ করেন, সম্প্রসারণ নীতি থেকে বেরিয়ে ভারতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নে চীনের মনোযোগ দেওয়া উচিত।

জনসভায় মোদি ১৯৬২ সালে চীনের শক্তিশালী সেনাবাহিনীকে মোকাবেলা ও কারগিল যুদ্ধে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সাহসিকতার পরিচয় দেওয়ায় অরুণাচলবাসীকে সত্যিকারের দেশপ্রেমিক বলে প্রশংসা করেন।

ভারত-চীন সম্পর্কের প্রশ্নে অরুণাচল সব সময় গুরুত্বপূর্ণ। তবে ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে বিশেষ করে জাতীয় নির্বাচনের সময় অরুণাচল ইস্যুটি সচরাচর গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে না। বিজেপি এর আগেও ভারতের রাষ্ট্র ক্ষমতায় ছিল, সে সময়ও রাজনীতির মাঠে অরুণাচল ইস্যু হয়ে ওঠেনি। তাই মোদি কেন অরুণাচলকে সামনে এনে চীনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হলেন সে বিষয়টি বিবেচনার দাবি রাখে।

হিন্দুত্ববাদী রাজনৈতিক শক্তি হলেও বিজেপির নেতাদের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িকতার অভিযোগ তেমন নেই। তবে গুজরাটের মুসলিমবিরোধী দাঙ্গায় সরাসরি সম্পৃক্ততার অভিযোগে দেশে-বিদেশে মোদি বেশ নিন্দিত। কিন্তু ভারতীয় রাজনীতির নির্মম পরিহাস, সেই মোদিই এখন বহু জাতি-ধর্মের দেশটির প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন। এ জন্য হিন্দু ছাড়াও মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানসহ সব জাতি-ধর্মের সমর্থন তার এখন দরকার। এমন একটি সাধারণ সমীকরণ থেকে তিনি যদি ভারতীয় জাতির ঐক্যে শামিল হওয়ার জন্য অরুণাচলবাসীকে এই আহ্বান জানান, তাহলে তার এই বক্তব্য নিয়ে তেমন কিছুই বলার থাকে না। কিন্তু যদি নব্য পরাশক্তি চীন সত্যি সত্যি অরুণাচলকে চীনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে অঙ্গীভূত করতে চায় (যে দাবি থেকে চীন কখনও সরে আসেনি) তাহলে বলতে হয়, মোদির মন্তব্য একটি বিশেষ সঙ্কটের ইঙ্গিত বহন করছে, যা শুধু চীন ও ভারত নয়; এ অঞ্চলের অন্য রাষ্টগুলোতেও প্রভাব ফেলবে। এমনকি তা বিশ্ব রাজনীতিতে নতুন সমীকরণের জন্ম দিতে পারে।