কক্সবাজার প্রতিনিধি : কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনকারী মিয়ানমারের প্রতিনিধিরা নির্যাতনের কথা অস্বীকার করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ অভিযোগ করেছেন মিয়ানমারের প্রতিনিধি দলটির সঙ্গে আলাপ করা বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা। তাদের দাবি, আলাপকালে নির্যাতনের বর্ণনা (মিয়ানমার সেনাবাহিনী কর্তৃক) শুনলেও তা সরাসরি অস্বীকার করেছে প্রতিনিধি দলের সদস্যরা।

উখিয়া উপজেলার বালুখালীর অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সোমবার (২০ মার্চ) সকালে উপস্থিত হয় মিয়ানমার থেকে আসা প্রতিনিধি দলের সদস্যরা। সেখানে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের সাথে কথা বলেন তারা। এরপর প্রতিনিধি দলটি টেকনাফে লেদা ক্যাম্পে যায়। সেখানে সন্ধ্যা পর্যন্ত আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলেন তারা।

এর আগে রবিবার (১৯ মার্চ) কক্সবাজারে পৌঁছায় মিয়ানমারের ১০ সদস্যের প্রতিনিধি দলটি।

কক্সবাজার এসে প্রতিনিধি দলটি সেখানকার জেলা প্রশাসকের সাথে কথা বলে। ওইদিন বিকেলে তারা উখিয়া উপজেলার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে যায়। সেখানে মিয়ানমার থেকে নতুন করে আসা রোহিঙ্গাদের সাথে আলাপ করে তারা।

তবে দুই দিন ধরে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করলেও প্রতিনিধি দলের কোনো সদস্য গণমাধ্যমের সাথে কথা বলেননি। এমন কি তাদের সঙ্গে থাকা আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থার কর্মকর্তারাও এ নিয়ে গণমাধ্যম কর্মীদের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি।

এদিকে, প্রতিনিধিদের সাথে আলাপ করা রোহিঙ্গাদের দাবি করেছেন, ‘এটি একটি লোক দেখানো প্রতিনিধি দল। তারা নির্যাতনের কথা শুনে উল্টো রোহিঙ্গাদের মিথ্যুক বলেছেন। অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হলে মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার বিষয়ে অনেক রোহিঙ্গা নাগরিক আগ্রহ প্রকাশ করলেও এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি প্রতিনিধিরা।’

প্রতিনিধি দলের সাথে আলাপকারী বালুখালী ক্যাম্পের ফরিদা আকতার জানান, কি কারণে তিনি বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছেন তা জানতে চেয়েছে প্রতিনিধি দল। তিনি মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর হাতে কি ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন সেই বর্ণনা দিয়েছেন তাদের কাছে।

প্রতিনিধি দলের সাথে আলাপকারী একই ক্যাম্পের ইয়াসমিন আকতার জানান, বাংলাদেশে পালিয়ে আসার কারণ হিসেবে তিনি প্রতিনিধি দলকে নারী ধর্ষণ, শিশু হত্যাসহ নানা ধরনের নির্যাতনের কথা বলেছেন।

আনোয়ার কামাল নামের এক যুবক জানান, মিয়ানমারের প্রতিনিধি দলের সদস্যরা তার বক্তব্য শুনলেও সরাসরি নির্যাতনের কথা আস্বীকার করে তাকে মিথ্যুক বলে মন্তব্য করেছেন। এমনকি প্রতিনিধি দলের এক সদস্যকে তিনি মিয়ানমারের ভাষায় ‘বাংলাদেশে পালিয়ে এসে রোহিঙ্গারা মিথ্যা গল্প বলছে’ বলে মন্তব্য করতেও শুনেছেন।

হাফেজ আহমদ নামের অপর একজন ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে জানিয়েছেন, মিয়ানমারের প্রতিনিধিরা কৌশলে রোহিঙ্গাদের সাথে প্রতারণা করতে এসেছে। তাদের কাছে তিনিসহ অনেক রোহিঙ্গা মিয়ানমারে ফেরত যাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। মিয়ানমারে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করলে তারা ফিরে যাবেন বলে জানিয়েছেন। কিন্তু এর কোনো উত্তর দেননি প্রতিনিধি দলটির সদস্যরা।

গত বছরের ৯ অক্টোবর মিয়ানমারের সংঘাতের পর সেখানে রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর দেশটির সেনাবাহিনী কর্তৃক ব্যাপক নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার তথ্য মতে, এই নির্যাতনের ঘটনায় নতুন করে ৭০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে, যারা আশ্রয় নিয়েছে কক্সবাজারের কুতুপালং, বালুখালী, টেকনাফের লেদা ও শামলাপুরসহ বিভিন্ন এলাকায়। এসব ঘটনা আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ হলে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠে ‘রোহিঙ্গা ইস্যু’। বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রের কূটনীতিক, জাতিসংঘের প্রতিনিধি, জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের কমিশনসহ বিভিন্ন ব্যক্তি বাংলাদেশের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো পরিদর্শন করেন। রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে তারা ভয়াবহ নির্যাতনের বর্ণনা শুনেন।

এরই ধারাবাহিকতায় সর্বশেষ রবিবার কক্সবাজারে আসে মিয়ানমার সরকারের রাষ্ট্রীয় পরামর্শক অং সান সু চি’র গঠিত তদন্ত কমিশনের ১০ সদস্য।

(দ্য রিপোর্ট/এমএইচএ/জেডটি/এনআই/মার্চ ২০, ২০১৭)