দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : বেসিক ব্যাংকের ঋণ জটিলতায় এমারেল্ড অয়েল ইন্ডাস্ট্রিজ সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে বলে জানিয়েছেন কোম্পানি কর্তৃপক্ষ। তবে এ পরিস্থিতি স্বল্প সময়ের মধ্যে কাটিয়ে উঠবে বলে আশাবাদ প্রকাশ করেছেন। এমতাবস্থায় কোম্পানির উপর ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) কর্তৃপক্ষকে আস্থা রাখার অনুরোধ করেছে এমারেল্ড অয়েল কর্তৃপক্ষ। ডিএসই সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

‘অস্তিত্ব সংকটে এমারেল্ড অয়েল’ শীরোনামে সম্প্রতী অনলাইন নিউজপেপারে সংবাদ প্রকাশিত হয়। যার উপর ভিত্তি করে ডিএসই কর্তৃপক্ষ তদন্ত করে। এরই আলোকে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, বেসিক ব্যাংকের ঋণ জটিলতায় এমারেল্ড অয়েল সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে। যে কারণে কোম্পানির ব্যবস্থাপনা কঠিন পরিস্থিতি পার করছে। তবে স্বল্প সময়ের মধ্যে এই পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠার আশাবাদ প্রকাশ করেছেন।

এদিকে কোম্পানির উপর আস্থা রাখার ও ‘অস্তিত্ব সংকটে এমারেল্ড অয়েল’ জাতীয় হুজুগে সংবাদ এড়িয়ে চলার জন্য ডিএসইকে অনুরোধ করেছেন এমারেল্ড কর্তৃপক্ষ। কোম্পানিটি এই মুহূর্তে ওয়ার্কিং ক্যাপিটালের অভাবে স্বল্প পরিসরে উৎপাদন করছে বলে দাবি। একইসঙ্গে নতুন ব্যবস্থাপনা এই পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠার চেষ্টা করছে এবং চলতি মাসের মধ্যে পূর্ণ রূপে উৎপাদন হওয়ার আশাবাদ প্রকাশ করেছেন।

তবে এর আগে উৎপাদন শুরুর কথা ডিএসইকে জানালেও তা শুরু করতে পারেনি এমারেল্ড অয়েল কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া স্বল্প পরিসরে উৎপাদন হচ্ছে দাবি করলেও তার সত্যতা পাওয়া যায়নি।

সরেজমিনে এমারেল্ড অয়েলের শেরপুরে কারখানায় গিয়ে দেখা গেছে উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। যেখানে শুধুমাত্র ১ জন নিরাপত্তারক্ষী ১ জন তত্ত্বাবধায়ক উপস্থিত ছিলেন। যদিও ২০১৬ সালের ২০ আগষ্ট থেকে উৎপাদন শুরু হবে বলে এমারেল্ড অয়েল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিলেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কোম্পানির উৎপাদন কাজে জড়িত এক কর্মকর্তা বলেন, ২০১৬ সালের এপ্রিল মাস থেকে উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। বেশিরভাগ জনবল অন্য কোথাও যোগদান করেছেন। এক প্রশ্নের জবাবে জানান, মাঝেমধ্যে কয়েকজনকে কিছু বেতনাদি দেওয়া হয়। আর এপ্রিলের পরে মাঝেমধ্যে কিছু তেল কিনে নিজেদের নামে প্যাকেটজাত করে বিক্রয় করা হয়েছে।

এদিকে রাজধানীর বিজয় নগরে অবস্থিত কোম্পানিটির করপোরেট অফিস প্রায় সময় বন্ধ পাওয়া যায়। অফিস কখনো খোলা হলেও ২-৩জন উপস্থিত থাকে। এ ছাড়া অফিস খোলা ও বন্ধ করার ক্ষেত্রে কোন সময় নেই। কোনদিন সকাল ১১ টায় আবার কোনদিন দুপুর ১২টায় অফিস খোলা হয়। অপরদিকে বিকাল ৪টায় বন্ধ করা হয়।

কোম্পানির পরিচালক সজন কুমার বশাক দ্য রিপোর্টকে বলেছিলেন, আমাদের সব কিছু সেট করা আছে ও জানুয়ারি থেকে উৎপাদন যাব। ওই সময় ম্যানেজম্যান্টে বড় পরিবর্তন আসবে এবং শক্তিশালী হবে। কিন্তু তা সম্ভব হয়নি।

এর আগে এমারেল্ড অয়েল কর্তৃপক্ষ ডিএসইকে জানিয়েছিলেন, ২০১৬ সালের ২৭ জুন থেকে কোম্পানিটির উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। মেশিন ও ইক্যুপমেন্ট মেরামত (সার্ভিসিং) করার জন্য এ উৎপাদন বন্ধ হয়েছে। তবে একই বছরের ২০ আগষ্ট থেকে উৎপাদন শুরু হবে বলে আশাবাদ প্রকাশ করেছিলেন।

এদিকে আর্থিক হিসাব প্রকাশেও মিথ্যার আশ্রয় নেয় এমারেল্ড অয়েল কর্তৃপক্ষ। যা প্রতিষ্ঠানটির নিরীক্ষায় বেরিয়ে এসেছে।

কোম্পানি কর্তৃপক্ষ ২০১৫-১৬ অর্থবছরের আর্থিক হিসাবে ৭২ কোটি ১৫ লাখ টাকার মজুদ পণ্য আছে বলে তথ্য প্রকাশ করে। কিন্তু কোম্পানিটির নিরীক্ষক এই মজুদ পণ্যের কোন সত্যতা পায়নি। এ ছাড়া চালের কূড়া কেনার জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে ১৬ কোটি ৫৪ লাখ টাকা অগ্রিম প্রদানের বিষয়েও সত্যতা পায়নি। একইসঙ্গে এমারেল্ড অয়েল বেসিক ব্যাংকের ঋণ পরিশোধে অক্ষম বলে নিরীক্ষক জানিয়েছেন।

ঋণ পরিশোধের কথা বলে এমারেল্ড অয়েল শেয়ারবাজার থেকে ২০ কোটি টাকা সংগ্রহ করে। কিন্তু তালিকাভুক্তির প্রথম বছরেই কোম্পানিটির ঋনের পরিমাণ বাড়ে। ঋণের বিপরীতে সুদজনিত ব্যয় কমাতে শেয়ারবাজারে এসে এখন নিয়মিতভাবে বাড়ছে। কিন্তু কোম্পানিটি তালিকাভুক্তির প্রথম বছরেই ঋণ পরিশোধের পরিবর্তে নিট ১০ কোটি ৩ লাখ টাকার ঋণ গ্রহণ বাড়ে।

প্রসপেক্টাস অনুযায়ি, শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির সময় এমারেল্ড অয়েলের মোট ঋণ ছিল ৭৪ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। যা ২০১৬ সালের ৩০ সেপ্টেম্বরে দাড়িয়েছে ১২২ কোটি ৪৯ লাখ টাকায়। এ হিসাবে ঋণ বেড়েছে ৪৭ কোটি ৮৫ লাখ টাকা।

এমারেল্ড অয়েল কোম্পানিটি চালের ভূষি দিয়ে সয়াবিন তেল তৈরী করে। দেশের প্রথম কোম্পানি হিসাবে কোল্ড স্টরেল মুক্ত এ তেল তৈরী শুরু করেছিল কোম্পানিটি।

কোম্পানিটি পুঁজিবাজার থেকে ২০ কোটি টাকা উত্তোলন করে। যার ১২ কোটি টাকা দিয়ে ঋণ পরিশোধ, ৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা কার‌্যক্ষমতা বৃদ্ধি ও বাকি ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা আইপিও খাতে ব্যয় করা হবে বলে প্রসপেক্টাসে উল্লেখ করেছিল।

উল্লেখ্য সোমবার (১০ এপ্রিল) লেনদেন শেষে এমারেল্ড অয়েলের শেয়ার দর দাড়িয়েছে ২৬.১০ টাকা।

(দ্য রিপোর্ট/আরএ/এপ্রিল ১১, ২০১৬)