দ্য রিপোর্ট ডেস্ক : পৃথিবীর অনেক সংস্কৃতি বা ধর্মেই মৃত্যুকে মনে করা হয় শুধুমাত্র শারীরিক বিনাশ। যা এই জগতের শেষ, আর অন্য আরেক জগতের শুরু।

তবে ইন্দোনেশিয়ার একটি অঞ্চলে বিষয়টি একটু আলাদা। সেখানে একজনের মৃত্যু হলেও, তার শেষকৃত্য হতে অনেক সময় লেগে যায়।

মৃতদের নিয়ে তাদের দৃষ্টিভঙ্গিও আলাদা। একটি ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে বসার কক্ষে পরিবারের সদস্যরা বসে কফি খাচ্ছেন।

সবাই খু্ব হাসিখুশি, আর এরই পাশের কক্ষের বিছানায় একজন শুয়ে আছেন। তিনি কোন নড়াচড়া করছেন না। তার ধূসর বর্ণের মুখে ছোট ছোট অনেক দাগ, যেন পোকা মাকড় কামড় দিয়েছে। শরীরে অনেক কাপড় পেঁচানো।

বাড়ির ছোট মেয়ে মামাক লিসা বলছিলেন, "তার সম্পর্কে হৃদয়ের আবেগের খুব সম্পর্ক আছে। আমাদের সেই সম্পর্ক এখনো আছে"। অথচ এই ব্যক্তি মারা গেছেন ১২ বছর আগে।

যদিও তার পরিবার মনে করে তিনি এখনো জীবিত কিন্তু একটু অসুস্থ। এই মৃত ব্যক্তি তার পরিবারের প্রাত্যহিক জীবনযাত্রারই একটি অংশ।

ইন্দোনেশিয়ার তোরাজন এলাকার পুরনো প্রথার এটিও একটি, যেখানে মৃতরা জীবিতদের সাথেই বসবাস করে। কেউ মারা যাওয়ার অনেক মাস পর. অনেক বছর পর শেষকৃত্য হয়। এ মধ্যবর্তী সময়ে নানা হারবাল ও রাসায়নিক দিয়ে মৃতদেহ সংরক্ষণ করে পরিবারের সঙ্গেই রাখা হয়।

তাকে দিনে দুবার খাবার দেয়া হয়, টয়লেটের জন্যও রুমে এক কোণে একটি পাত্র রাখা হয়। তার কন্যা বলছিলেন, "এটা আমার দুঃখবোধ কাটাতে অনেক সাহায্য করছে। আমার বাবা যে মারা গেছেন সে কষ্টের সাথে অভ্যস্ত হতে আমি সময় পাচ্ছি"।

যখন চূড়ান্তভাবে মৃতদের বিদায় জানানো হয় তখন অনুষ্ঠান হয় অত্যন্ত জাঁকজমকপূর্ণ। আত্মীয়স্বজনরা আসেন। অনেক টাকা পয়সাও খরচ করা হয়। আবার এ শেষকৃত্য কিন্তু চূড়ান্ত বিচ্ছেদ নয়।

কয়েক বছর পর পর নানা উপলক্ষে কফিন খুলে মৃতদেহ বের করা হয়। বন্ধু আর আত্মীয়রা তাকে নানা খাবার দেন, পরিষ্কার করে একত্রে তার সাথে ছবিও তুলেন।

সমাজবিজ্ঞানী আন্দি তান্দি লোলো জানান, "সমাজবিজ্ঞানের দৃষ্টিতে দেখলে এটি জীবিত ও মৃতদের মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ রক্ষার মতো ব্যাপার"।

তিন বছর আগে নিহত এক ব্যক্তির পুত্রবধূ বলছেন, যখন তাকে দেখতে পাই তখন মনে হয় তিনি আমাদের কত ভালোবাসতেন। তবে এ প্রাচীন প্রথাটি এখন ক্রমশ বিলুপ্তির পথে।

(দ্য রিপোর্ট/এফএস/এনআই/এপ্রিল ২০, ২০১৭)