দ্য রিপোর্ট ডেস্ক : বাংলাদেশ ও ভুটান দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও সংহত করার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছে এবং পারস্পরিক স্বার্থে বিদ্যুৎ, পানিসম্পদ খাতে সহযোগিতা জোরদারে দ্বিপক্ষীয় ও উপ-আঞ্চলিকভাবে কাজ করার ব্যাপারে সম্মত হয়েছে।

ভুটানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তিনদিনের রাষ্ট্রীয় সফরের শেষে বৃহস্পতিবার (২০ এপ্রিল) যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই অঞ্চল ও বিশ্বের বৃহত্তর শান্তি, সমৃদ্ধি ও উন্নয়নের জন্য দুই দেশ একত্রে কাজ করার ব্যাপারে সম্মত হয়েছে।

২৬-দফা বিবৃতিতে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভুটানের প্রধানমন্ত্রী দাসো তেরেসিং তোবগে তাদের দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে পারস্পরিক স্বার্থে বিদ্যুৎ, পানিসম্পদ এবং যোগাযোগের ক্ষেত্রে উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতার সুযোগ গ্রহণের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন।

বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে, উপ-আঞ্চলিক যোগাযোগ বৃদ্ধির গুরুত্ব বিবেচনা করে উভয় পক্ষ এ লক্ষ্যে দ্বিপক্ষীয় এবং উপ-আঞ্চলিকভাবে কাজ করতে সম্মত হয়েছে।

আঞ্চলিক কাঠামোয় নীতিগত সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে জলবিদ্যুৎ খাতে সহযোগিতার জন্য বাংলাদেশ, ভুটান ও ভারতের মধ্যে প্রস্তাবিত ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারকের (এমওইউ) বিষয়টিকে তারা স্বাগত জানিয়েছেন।

তারা আশা প্রকাশ করেছেন যে, পরবর্তীতে তিনটি দেশের নেতারা যখন একত্রিত হবেন তখন এই এমওইউ স্বাক্ষর হবে।

দুই প্রধানমন্ত্রী আঞ্চলিক যোগাযোগের জন্য বিবিআইএন মোটর ভেহিকেল এগ্রিমেন্টের গুরুত্ব অনুধাবন করেছেন এবং দ্রুত এই চুক্তি বাস্তবায়নে তাদের আগ্রহের কথা ব্যক্ত করেছেন।

দুই প্রধানমন্ত্রী ভুটান ও বাংলাদেশের মধ্যে বিদ্যমান ঐতিহাসিক জোরদার সম্পর্ক এবং বোঝাপাড়ার কথা স্মরণ করেছেন। এই সম্পর্কের সূচনা করেছিলেন ভুটানের রাজা জিগমে দরজি ওয়াংচুক এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

দুই নেতা চমৎকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে সন্তোষ ব্যক্ত করেছেন এবং ভ্রাতৃপ্রতীম দুটি দেশের পারস্পরিক স্বার্থে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও সংহত করার ব্যাপারে তাদের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন।

ভুটান ও বাংলাদেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের কথা পুনর্ব্যক্ত করেছেন এবং এই অঞ্চলের ও বিশ্বের শান্তি, সমৃদ্ধি ও সমন্বিত উন্নয়নের অভিন্ন আকাঙ্ক্ষার ওপর এই সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত।

দুই প্রধানমন্ত্রী জলবিদ্যুৎ, পানিসম্পদ, ব্যবসা-বাণিজ্য, যোগাযোগ ট্যুরিজম, সংস্কৃতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, আইসিটি এবং কৃষিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতার বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, উভয় পক্ষ বিমসটেক, সার্ক ও জাতিসংঘ এবং অন্যান্য সকল প্রধান ইস্যুতে তাদের মতামত ও অবস্থানসহ অন্যান্য আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক ফোরামে সহযোগিতার বিষয় মতবিনিময় করেছেন।

বাংলাদেশ ভুটানে আরো তৈরি পোশাক, সিরামিক, ওষুধ, পাট, পাটজাত ও চামড়াজাত পণ্য, প্রসাধন সামগ্রী ও কৃষি পণ্য রফতানির প্রস্তাব দেয়। ভুটান এসব পণ্য তার দেশের বাজারজাতকরণ ও দুদেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ অধিকতর সম্প্রসারণে একমত হয়।

ভুটানের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে গুড়া চুন (লাইম স্টোন পাউডার), জিপ্যাম ও ক্যালসিয়াম কার্বোনেট রফতানিতে শুল্ক ছাড় সমস্যা নিষ্পন্নে তামাবিল-ডাউকি ও নাকুয়াগং-দালু, গোবরাকুরা ও কড়াইতলি-গাসুয়াপারান্দ স্থলবন্দর চালুসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।

প্রাচীন সংস্কৃতি ও উভয় দেশের জনগণের মধ্যকার সম্পর্কের কথা স্মরণ করে পর্যটনের সম্ভাবনাকে সর্বোচ্চ কাজে লাগাতে এ খাতে সহযোগিতার জন্য দুদেশ অভিন্ন মত পোষণ করেছে।

দুই প্রধানমন্ত্রী দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তি সম্প্রসারণ ও উভয় দেশের মধ্যকার বন্ধুত্ব আরো সুসংহত করার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন।

ভুটানের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের আইসিটি খাতের অগ্রগতির প্রশংসা করেছেন। দুই নেতা আইসিটি খাতে সহযোগিতায় একমত হয়েছেন।

বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশকে প্রথম স্বীকৃতি প্রদানে ভুটানের অমূল্য সমর্থনের কথা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করেছেন।

শেখ হাসিনা ১৯৭১ সালে পাকিস্তানী বাহিনীর গণহত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞের উল্লেখ করে বলেছেন, ‘ভুটান বাংলাদেশের মানুষের দুর্ভোগ ও দুর্দশায় সহানুভূতি ও সহমর্মিতা প্রকাশ করেছে।’

ভুটানের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সোনার বাংলা ভিশনের রূপকার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অনুপ্রেরণাদায়ী নেতৃত্বের কথা স্মরণ করেছেন। বর্তমানে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সোনার বাংলার এ ভিশন বাস্তবায়িত হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভুটানের রাজা ও রানী এবং প্রধানমন্ত্রীকে তাদের সুবিধাজনক সময়ে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।

তেসেরিং তোবগে চলতি বছরের ১ থেকে ৫ এপ্রিল ঢাকায় ১৩৬তম আইপিইউ অ্যাসেম্বলির সফল আয়োজনের জন্য শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।

দুই প্রধানমন্ত্রী দুদেশের পার্লামেন্টারিয়ানগণের মধ্যে নিয়মিত সফর বিনিময়ের কথা সন্তোষের সঙ্গে উল্লেখ করে তাদের মধ্যকার পারস্পরিক যোগাযোগ আরো বৃদ্ধিতে উৎসাহ প্রদান করেছেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভুটানে অনুষ্ঠিত ‘অটিজম অ্যান্ড নিউরোডেভেলপমেন্টাল ডিসঅর্ডার’ শীর্ষক ৩ দিনের এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগদান শেষে বৃহস্পতিবার সকালে দেশে ফিরেছেন।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ভুটান ও বাংলাদেশের মধ্যে উচ্চ পর্যায়ে সফর বিনিময়ের ঐতিহ্য এবং উভয় দেশের বন্ধুত্ব সমুন্নত রাখতে ও জোরদার করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই সফর ছিল খুবই তাৎপর্যপূর্ণ।

সূত্র : বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস)

(দ্য রিপোর্ট/জেডটি/এপ্রিল ২০, ২০১৭)