শেয়ারবাজার থেকে ২০১৪ সালে টাকা সংগ্রহ করে মতিন স্পিনিং মিলস। ওই বছর তালিকাভুক্ত অন্য সব কোম্পানির তুলনায় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ টাকা তুলে নেয় কোম্পানিটি। ব্যবসায় সম্প্রসারণের লক্ষ্যে এ টাকা সংগ্রহ করা হলেও শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির পরে নিয়মিতভাবে কোম্পানির উৎপাদিত পণ্য (সুতা) বিক্রয় কমছে।

এদিকে, নির্দিষ্ট সময় শেষ হওয়ার পর ২ বছর অতিবাহিত হলেও প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে তুলে নেওয়া অর্থ এখনো সম্পূর্ণ ব্যবহার করতে পারেনি মতিন স্পিনিং মিলস। তার পরেও কোম্পানি কর্তৃপক্ষ মুনাফার সম্পূর্ণ অংশ বিতরণ না করে, নিয়মিত রিজার্ভের পরিমাণ বাড়াচ্ছে।

কোম্পানিটি আইপিওতে প্রতিটি শেয়ার ৩৭ টাকা দরে ইস্যুর মাধ্যমে শেয়ারবাজার থেকে ১২৬ কোটি ১৭ লাখ টাকা উত্তোলন করে। এর মধ্যে ১২৩ কোটি ৩ লাখ টাকা দিয়ে বিদ্যমান প্লান্ট বৃদ্ধি ও বাকি ৩ কোটি ১৪ লাখ টাকা আইপিও বাবদ ব্যয় করা হবে বলে প্রসপেক্টাসে জানানো হয়। একই সঙ্গে এই অর্থ পাওয়ার ১২ মাসের মধ্যে ব্যবহার সম্পন্ন করা হবে বলে জানানো হয়।

আইপিও ফান্ড ব্যবহারের জন্য ২০১৪ সালের ৮ এপ্রিল অর্থ পায় মতিন স্পিনিং মিলস কর্তৃপক্ষ। এ অর্থ ব্যবহারের জন্য সর্বোচ্চ সময়সীমা ছিল ২০১৫ সালের ৭ এপ্রিল। এরপর আরও ২ বছরের বেশি সময় পার হলেও ৫ কোটি ৬২ লাখ টাকা অব্যবহৃত রয়ে যায়, যা আইপিও ফান্ডের ৪ দশমিক ৪৫ শতাংশ। চিটাগাং স্টক এক্সচেঞ্জের ওয়েবসাইটে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়।

এদিকে প্রতিষ্ঠানটির অর্থ ব্যবহারের সুযোগ না থাকলেও রিজার্ভের পরিমাণ বাড়াচ্ছে। আইপিওতে আসার সময় কোম্পানির ২০১৩ সালের ৩০ জুন ৬৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকার শেয়ার মূলধনসহ শেয়ারহোল্ডার ইক্যুইটি বা নিট সম্পদ ছিল ২২৬ কোটি ৫২ লাখ টাকার। চলতি বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত ৯৭ কোটি ৪৯ লাখ টাকার শেয়ার মূলধনসহ নিট সম্পদ দাঁড়িয়েছে ৩৯৮ কোটি ৭৪ লাখ টাকার। অর্থাৎ নিট সম্পদ বেড়েছে ১৭২ কোটি ২২ লাখ টাকা। এর মধ্যে মুনাফা থেকে ৮১ কোটি ১৫ লাখ টাকা ও প্রিমিয়াম ৯১ কোটি ৭ লাখ টাকা রিজার্ভে যোগ হয়েছে।

আইপিওতে আসার সময় ২০১২-১৩ অর্থবছরে কোম্পানির বিক্রয় হয় ২৩৯ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। এতে নিট মুনাফা হয় ২৫ কোটি ১৮ লাখ টাকা, যা শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) হিসাবে হয়েছিল ৩ দশমিক ৯৭ টাকা। কিন্তু ব্যবসায় সম্প্রসারণের জন্য শেয়ারবাজার থেকে টাকা সংগ্রহ করলেও তার সুফল নেই।

শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির প্রথম অর্থবছরেই (২০১৩-১৪) মতিন স্পিনিংয়ের বিক্রয় কমে যায়। ওই অর্থবছরে কোম্পানিটির বিক্রয় হয় ২৩৩ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বিক্রি হয়েছে ২০২ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বিক্রি হয়েছে ২০০ কোটি ৫২ লাখ টাকা। আর চলতি অর্থবছরের ৯ মাসে (জুলাই ১৬-মার্চ ১৭) বিক্রয় হয়েছে ২১১ কোটি ৪৬ লাখ টাকা।

এদিকে কোম্পানির বিক্রয় ধারাবাহিকভাবে কমলেও মুনাফায় রয়েছে উত্থান-পতন। প্রতিষ্ঠানটি তালিকাভুক্তির বছরে মুনাফা হয় ৩১ কোটি ৭৫ লাখ টাকার বা ইপিএস ৩ দশমিক ২৬ টাকা। যা বেড়ে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে হয় ৪৩ দশমিক ৭৪ লাখ টাকার বা ইপিএস ৪ দশমিক ৪৯ টাকা। তবে এরপর থেকেই মুনাফা কমতে শুরু করে।

এক বছরের ব্যবধানে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে মুনাফা কমে যায় ১৪ কোটি ২৯ লাখ টাকার বা ৩২ দশমিক ৬৭ শতাংশ। এ বছর কোম্পানির মুনাফা হয় ২৯ দশমিক ৪৫ লাখ বা ইপিএস ৩ দশমিক ০২ টাকা। যা চলতি অর্থবছরের ৯ মাসে (জুলাই ১৬-মার্চ ১৭) আরও মন্দাবস্থার দিকে যাচ্ছে। এ সময় নিট মুনাফা হয়েছে ১৫ কোটি ২৫ লাখ টাকা বা ইপিএস ১ দশমিক ৫৬ টাকা।

মতিন স্পিনিংয়ের কোম্পানি সচিব মো. শাহ আলম মিয়া দ্য রিপোর্টকে বলেন, প্রকৃতপক্ষে আইপিও ফান্ড অব্যবহৃত নাই। মূলত আইপিও অর্থের ওপর অর্জিত সুদের টাকা অব্যবহৃত রয়েছে। সেটা ব্যবহার না করায়, স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষ আইপিও ফান্ড অব্যবহৃত দেখাচ্ছে।

সুতার দাম কমে যাওয়ায় অর্থের মূল্যে বিক্রয় কমেছে বলে জানান শাহ আলম মিয়া। তিনি বলেন, সুতা বিক্রয়ের পরিমাণ কমেনি।

প্রতিবছরই সুতার দাম কমেছে কিনা, এমন প্রশ্নে তিনি জানান, সেটা অবশ্য কমে নাই।

উল্লেখ্য, মঙ্গলবার (৬ জুন) লেনদেন শেষে মতিন স্পিনিং মিলসের শেয়ার দর আগের দিনের তুলনায় ৩০ পয়সা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪০ দশমিক ২০ টাকায়।

(দ্য রিপোর্ট/আরএ/এনটি/এস/এম/জুন ০৬, ২০১৭)