দ্য রিপোর্ট ডেস্ক : মেয়েটি তার বাবাকে হঠাৎ করেই বলে বসলো সে সানি লিওন হতে চাই। বাবা আঁৎকে উঠে মেয়ের কথায়। দরজায় দাঁড়িয়ে হতবাক মা প্রথমে কী বলবেন বুঝেই উঠতে পারছিলেন না। এ যেন বিনা মেঘে বজ্রপাত! মেয়ের অ্যাম্বিশন কিনা ‘সানি লিওন’হয়ে ওঠা! এ মেয়ে বলে কী? ঠিক এমন একটি প্রশ্ন তুলেছেন পরিচালক রামগোপাল ভার্মা।

বাড়ির মেয়ে যদি ‘সানি লিওন’হতে চায়? পর্ন ইন্ডাস্ট্রিকেই বেছে নিতে চায় কেরিয়ার হিসেবে? সেটা কেন কিছুতেই মেনে নিতে পারেন না কোনও অভিভাবক? এই বিষয়টিকেই তাঁর প্রথম শর্টফিল্মে তুলে এনেছেন রামগোপাল। ফিল্মের নাম ‘মেরি বেটি সানি লিওন বন্‌না চাহতি হ্যায়’। এটি ইউটিউবে মুক্তি পেয়েছে।

পরিচালক বলেন, ‘সানি লিওন’ আমাদের এই সময়ে সেক্স ফ্যান্টাসির অন্যতম নাম হতে পারেন। লুকিয়ে তাঁকে দেখতে ভারি সুখ। শুধু সানি লিওনই বা কেন, গত কয়েক বছরে ইন্টারনেটের দৌলতে এ দেশেও সব রকম পর্ন ছবির জনপ্রিয়তাই হুড়হুড় করে বেড়েছে। কিন্তু ওই পেশায় নিজের বাড়ির মেয়ে যেতে চাইলেই মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে! সামাজিকতা, লোকলজ্জা, শিক্ষা— বিবিধ আভিধানিক শব্দ এসে পথ আগলায়! যে আয়নায় অন্যের মেয়েকে অনায়াসে মেনে নিই আমরা, আমাদের সমাজ, সে আয়নায় নিজের মুখ দেখাটা আজও রপ্ত করতে পারিনি।’

পর্ন ইন্ডাস্ট্রিকেই যাঁরা পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন তাঁদের সম্মানের চোখে দেখার মতো মানসিকতা এখনও তৈরি হয়নি সমাজের। ঠিক যেমন ভাবে প্রয়োজনে যৌনকর্মীর কাছে যাওয়া যেতে পারে। কিন্তু তা নিয়ে প্রকাশ্য আলোচনা করতে গেলেই হিপোক্রেসি সক্রিয় হয়ে ওঠে। তখন কোথাও সমাজ হয়ে যায় ‘সতী’, আর সানি লিওন ‘অসতী’।

ছবিতে মেয়েটির বাবা যখন বলে ওঠেন, ‘সানি লিওন শুধুমাত্র একটি বস্তু। ব্যবহার করা হয়ে গেলে যাকে ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া হয়।’ মেয়ের উত্তর, ‘প্রত্যেক পেশার প্রত্যেক মানুষকেই ব্যবহার করা হয়ে গেলে ছুঁড়ে ফেলা হয়। একটা সময়ের পর সকলকেই তো অবসর নিতেই হয়।’

রামগোপালের ছবির মুখ্য চরিত্র মনে করেন, যৌনতা তাঁর প্রপার্টি। তাকে যেখানে খুশি যেভাবে খুশি খরচ করবেন। সে কারণেই তিনি বেছে নিতে চান এই পেশা। পৃথিবীতে সকলেই কিছু না কিছু বিক্রি করেন নিত্যদিন। কেউ মেধা, তো কেউ শ্রম। আরও কত কী! পারিশ্রমিকের বিনিময়ে বিক্রি হয় যৌনতাও। তা হলে সানি লিওন যদি তাঁর পর্ন কেরিয়ারে সেক্স অ্যাপিল বিক্রি করে থাকেন, ক্ষতিটা কোথায়? সেই পথেই যেতে চায় মেয়েটিও। নিজের শর্তে বাঁচতে চায় সে। মাকে মনে করিয়ে দেয়, তাঁর মতো বিয়ে করে ইচ্ছেয় হোক বা অনিচ্ছেয়- স্বামীর যৌনসঙ্গী হতে নারাজ।

উল্লেখ্য, কানাডার সার্নিয়ায় এক পঞ্জাবি পরিবারে জন্ম সানি লিওনের। এখন বয়স ৩৬। ছোটবেলার হকি খেলতে ভালবাসত। নার্স হওয়ার জন্য জোরদার পড়াশোনা করত সে। আবার পকেটমানি জোগাড় করার জন্য জার্মান বেকারিতে পার্টটাইমের চাকরিও। ১৮ বছর থেকেই জড়িয়ে পড়েন পর্ন ইন্ডাস্ট্রিতে। খুব অল্প দিনের মধ্যেই প্রফেশনাল তারকা হয়ে ওঠেন। একের পর এক ম্যাগাজিনের কভার শুটের অফার আসতে থাকে তখন। পরিচিতি বাড়তে থাকে মডেলিং জগতে।

২০১১ বদলে দিল মেয়েটির জীবন। ‘বিগ বস’-এ অংশ নিলেন। সে বছরই প্রথম কোনও পর্ন তারকার ‘বিগ বস’-এ আসা। ওই রিয়ালিটি শো এপিসোড টিআরপি পেল প্রচুর। মেয়েটি অর্থাৎ সানি লিওনেরও কম লাভ হল না। ওখান থেকেই নাকি তিনি ‘জিসম ২’-এর অফার পান। ২০১২-তে মুক্তি পায় সে ছবি। এখান থেকে নতুন জার্নি শুরু হয় সানির। পর্ন ইন্ডাস্ট্রি ছেড়ে বলিউডি অভিনয়।

সূত্র : আনন্দবাজার

(দ্য রিপোর্ট/পিএস/এপি/জুন ১৩, ২০১৭)