দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক :  তথ্য-প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারা বিলোপের পাশাপাশি প্রস্তাবিত ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের ১৯ থেকে ২২ ধারা বাতিলের দাবি জানিয়েছেন সাংবাদিক নেতারা। তারা বলেছেন, ‘আর কোনো টালবাহানা না করে এখনই ৫৭ ধারাসহ মত প্রকাশ ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা বিরোধী সব কালাকানুন বাতিল করতে হবে । নতুন নামে আইনটি আনা হলে তা হবে নতুন বোতলে পুরনো মদ পরিবেশনের সমান। ৫৭ ধারার মতোই নতুন আইনেরও অপপ্রয়োগ হবে।’

প্রস্তাবিত সম্প্রচার আইনও গণমাধ্যমের কন্ঠ স্তব্ধ করার জন্য ভয়ানক কালো ধারা যুক্ত করা হয়েছে-এমনটা উল্লেখ করে সাংবাদিক নেতারা বলেছেন, ‘নাম পাল্টে একই আইন (৫৭ ধারা) রাখা হলে তা দেশের সাংবাদিক সমাজ মেনে নেবে না।’

বৃহস্পতিবার (১৩ জুলাই) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত এক বিক্ষোভ সমাবেশে সাংবাদিক নেতারা এসব কথা বলেছেন ।

তথ্য-প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে একের পর এক মামলার প্রতিবাদে এবং মত প্রকাশ ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা বিরোধী প্রস্তাবিত ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের ১৯ -২২ ধারা বাতিলের দাবিতে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে) এ বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করে।

বিএফইউজে সভাপতি শওকত মাহমুদের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন-সংগঠনের সাবেক সভাপতি রুহুল আমীন গাজী, মহাসচিব এম আবদুল্লার, ডিইউজে’র সভাপতি কবি আবদুল হাই শিকদার, সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম প্রধান, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ বাকের হোসাইন, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি’র (ডিআরইউ) সাধারণ সম্পাদক মোরসালিন নোমানী, জাতীয় প্রেসক্লাবের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান, সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাদের গণি চৌধুরী, সাংবাদিক নেতা নূরুল আমিন রোকন, মোদাব্বের হোসেন, শহীদুল ইসলাম, সৈয়দ আলী আসফার, বেলায়েত হোসেন, রাশেদুল হক, ডিএম আমিরুল ইসলাম, মীর হোসেন মীর, খন্দকার আলমগীর, শাজাহান শাজু প্রমুখ।

শওকত মাহমুদ বলেছেন, ‘৫৭ ধারা এই মুহূর্তে বাতিল করতে হবে। এ ধারায় হওয়া সব মামলা এখনই প্রত্যাহার করতে হবে। আর নতুন করে যাতে কোনো মামলা না হয় তা নিশ্চিত করতে হবে । ৫৭ ধারার আদলে নতুন কোনো আইন বা ধারাও সাংবাদিক সমাজ মানবে না।।’

তিনি আরো বলেছেন, ‘তথ্য-প্রযুক্তি আইনের বিতর্কিত ৫৭ ধারা পরিবর্তন করে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের ১৯ থেকে ২২ ধারায় একই বিষয়বস্তু সন্নিবেশিত করার প্রক্রিয়া চলছে। প্রস্তাবিত সম্প্রচার আইনে কোনো সংবাদে সরকার অসন্তুষ্ট হলে সাংবাদিককে ৭ বছরের জেল ও ৫ কোটি টাকা জরিমানা করতে পারবে।’

তিনি বলেছেন, ‘৫৭ ধারা কেবল সাংবাদিকদের বিরুদ্ধেই নয়, বহু তরুণের বিরুদ্ধে ঠুনকো অজুহাতে মামলা ও সাজা দিয়ে জেলে পুরে রাখা হয়েছে। এর ভয়ে অনেক যুবক দেশত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছে ।’

দেশের বুদ্ধিজীবী সমাজকে এ কালো আইনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন শওকত মাহমুদ ।

রুহুল আমীন গাজী বলেছেন, ‘গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করে অতীতে কোনো স্বৈরাচারী সরকার রক্ষা পায় নি । বর্তমান অবৈধ সরকার গদি রক্ষার জন্য একের পর এক কালো আইন করছে । তাতে শেষ রক্ষা হবে না।’

তিনি অবিলম্বে সাগর-রুনী হত্যাকারীদের গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন।

এম আবদুল্লাহ তার বক্তব্যে ৫৭ ধারার পক্ষে সংসদে তথ্যমন্ত্রীর সাফাই বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে বলেছেন, ‘গত এক মাসে ৫৭ ধারায় বহু সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে । ঢাকায় আজমল হক হেলাল, গোলাম মুজতবা ধ্রুব, নাজমুল হোসেন, আহমদ রাজু, ছিদ্দিকুর রহমান, চট্টগ্রামে তৌফিকুল ইসলাম বাবর, হবিগঞ্জের গোলাম মোস্তাফা রফিক কয়েক দিনের ব্যবধানে ৫৭ ধারার শিকার হয়েছেন । নতুন করে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের ১৯ থেকে ২২ ধারায় মত প্রকাশের স্বাধীনতা হরণের পাঁয়তারা করা হচ্ছে । সম্প্রচার আইন দিয়ে সব টেলিভিশনকে বিটিভি বানানোর ষড়যন্ত্র পাকাপোক্ত করা হয়েছে। সাংবাদিক সমাজকে এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।’

আবদুল হাই শিকদার বলেছেন, ‘৫৭ ধারা শুধু গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধের জন্যই নয়, গণতান্ত্রিক চেতনা ধ্বংসের জন্য এটা করা হয়েছে । এটা আমাদের সভ্যতা ও সংস্কৃতির পরিপন্থী।’

জাহাঙ্গীর আলম প্রধান বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগ বার বার প্রমাণ করেছে তারা গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না । ক্ষমতায় এসেই তারা নতুন নতুন কালাকানুন দিয়ে গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করে। ৫৭ ধারাসহ সব কালো আইন বাতিল না করলে সাংবাদিকরা তীব্র আন্দোলনে বাধ্য করা হবে।’

(দ্য রিপোর্ট/জেডটি/জুলাই ১৩, ২০১৭)