দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের ছয়তলার ৬০৮ নম্বর কেবিনে ভর্তি মুক্তা। দরজা নক করতেই খুলে দেয় তার বাবা ইব্রাহীম। পাশাপাশি দুটি বেড। একটিতে মুক্তামনি এবং অপরটিতে তার জমজ বোন হীরামনি।

মুক্তা কেমন আছ এখন? জিজ্ঞেস করতেই মুখে বিরক্তির ছাপ নিয়ে জবাব দেয়, এখন আগের চাইতে একটু ভাল। জবাবের ধরন শুনে মনে হচ্ছে দুই দিন যাবৎ অনেক সাংবাদিক ডাক্তার তাকে এই একটি কথাই জিজ্ঞেস করে। কেমন আছ?

মুক্তা জানায়, সে এখন আগের চাইতে অনেকটাই ভাল আছে। আগে ব্যথা করতো, চুলকাতো, একা একা বসতে ও হাঁটতে পারতো না। এখন সে একা একা বসে এবং একাই হাঁটে। তার সুখে এখন একটাই কথা। সে সুস্থ হয়ে আবার তার বোন হীরার হাত ধরে স্কুলে যাবে।

ক্লাস ওয়ান শেষ করে ক্লাস টুর নতুন বইও কিনেছিল মুক্তা। কিন্তু সেই নতুন বই আর পড়ার সুযোগ হয়নি তার। মুক্তা জানায়, প্রধানমন্ত্রী যখন আমার চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছে, তখন আমি নিশ্চয়ই ভাল হবো।

একই কথা মুক্তার জমজ বোন হীরামনির। সে বলে, আপনারা দোয়া করলে আমার বোন সুস্থ হয়ে যাবে। আমরা আবার এক সাথে স্কুলে যেতে পারবো। ওকে দেখলে আমার খুব কষ্ট হয়। আগে হাতের ব্যথায় খুব কষ্ট পেত এবং চিৎকার করতো। এখন আর আগের মত চিৎকার করে না।

বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন শিশুটির চিকিৎসার বিষয়ে বলেন, ‘মেয়েটির অপারেশন দরকার। তবে তার শরীরে পুষ্টি এবং রক্তের পরিমাণ খুব কম। তার জরুরিভাবে রক্ত দরকার। সেই জন্য তাকে ২ ব্যাগ লাল রক্ত ও ২ ব্যাগ প্লাজমা দেওয়া হয়েছে।

এরপর আরও রক্ত লাগবে কিনা এবিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এছাড়াও তাকে ডাবল ডায়েট খাবার দিয়ে অপারেশনের জন্য প্রস্তুত করতে হবে। আমরা আশা করছি দুই সপ্তাহ পর তার হাতে অপারেশন করতে পারব।

তিনি আরও বলেন, মেডিকেল বোর্ড মুক্তামনির সম্ভাব্য ৪টি রোগ নির্ণয় করেছেন। এর মধ্যে ‘লিমফেটিক ম্যালফরমেশন’ এই রোগ টিকে প্রধান্য দেওয়া হচ্ছে। মুক্তার রক্তের অনেক পরীক্ষাই শেষ হয়েছে। আরও কয়েকটি বাকি আছে। সবগুলো একত্রে এলে তার মূল রোগটা নির্ণয় করা সম্ভব হবে।

ডা. সেন বলেন, এটি একটি জন্মগত রোগ। শরীরের ছোট ছোট টিউমার থেকে এ রোগ হতে পারে। চামড়াজনিত কারণেও হতে পারে।

তিনি বলেন, প্রথম অবস্থায় এর চিকিৎসা করালে আরোগ্য লাভ সম্ভব। কিন্তু মুক্তার বিষয়টি মেনে নিতে পারছি না। কারণ একদিনেই তো রোগটা এতো বড় হওয়া সম্ভব না। অপচিকিৎসার কারণে মুক্তার আজ এই অবস্থা। মুক্তার পরিবারের অবজ্ঞার কারণেই আজ তাকে এই রোগটা বয়ে বেড়াতে হচ্ছে।

(দ্য রিপোর্ট/আরএস/এপি/জুলাই ১৭, ২০১৭)