মুহাম্মদ আবু তৈয়ব, খুলনা ব্যুরো : খুলনায় খাদ্য মন্ত্রণালয়ের জন্য আমদানি করা শতকোটি টাকার গম লুটের ঘটনায় এবার মামলা দায়ের করেছে রফতানিকারক বীমা প্রতিষ্ঠান। মেরিটজ ফায়ার অ্যান্ড মেরিন ইনস্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড নামের ওই বীমা প্রতিষ্ঠানের পক্ষে ২ আগস্ট মুখ্য মহানগর হাকিম চট্টগ্রাম আদালতে এ মামলা দায়ের করা হয়েছে। যার এফআইআর নম্বর ৭৮। এতে আসামি করা হয়েছে ক্ষমতাসীন দলের নেতাসহ খুলনা, ঢাকা ও চট্টগ্রামের মোট সাত জনকে।

মামলায় বাদী পক্ষে আইনজীবী অ্যাডভোকেট আমিরুল ইসলাম নাজির বিষয়টি নিশ্চিত করে জানিয়েছেন, আদালত মামলাটি গ্রহণ করে তদন্তের জন্যে বন্দর থানাকে নির্দেশ দিয়েছেন। একই ঘটনায় এর আগে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট ডিভিশনে ক্ষতিপূরণ চেয়ে চলতি বছরের ২০ জুলাই আরও একটি মামলা দায়ের করা হয়েছিল। যার নম্বর ৪৫।

মামলার ৭ আসামি হলেন – খুলনার জেকে শিপিং লাইন্সের মালিক মৃত হেদায়েতুল ইসলামের ছেলে কামরুল ইসলাম, তার (কামরুল ইসলামের) ছেলে নুরুল ইসলাম, ওই প্রতিষ্ঠানের (জেকে শিপিং) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আক্তারুজ্জামান খান মামুন, চট্টগ্রামের মোতাহার আলীর ছেলে আব্দুল মালেক মাঝি, ঢাকার রোকেয়া অটোমেটেড ফ্লাওয়ার মিলসের মালিক সাইফুল ইসলাম, খুলনার জেকে শিপিংয়ের ম্যানেজার আব্দুস সালাম ও নির্বাহী কর্মকর্তা শওকত হোসেন।

অ্যাডভোকেট আমিরুল ইসলাম আরও জানান, দক্ষিণ কোরিয়াস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে এই ৩৩ হাজার মেট্রিক টন গম লুটের ঘটনা বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা হয়েছে। এরপর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ান ওই প্রতিষ্ঠানের পক্ষে তাদের বাংলাদেশ প্রতিনিধি সোহেল রানা বাদী হয়ে মুখ্য মহানগর হাকিম শাহাদাৎ হোসেন ভূঁইয়ার আদালতে মামলাটি দায়ের করেন। চট্টগ্রামে মামলায় বাদী পক্ষের আইনজীবী হিসেবে রয়েছেন অ্যাডভোকেট মোস্তফা আজগর।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মামলার চট্টগ্রামের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোস্তফা আজগর মুঠোফোনে জানান, কোরিয়ান ওই প্রতিষ্ঠানের লোকজন বাংলাদেশে এসে সংবাদ সম্মেলনে পরে বিস্তারিত জানাবেন।

তিনি আরও জানান, ইতোপূর্বে কোরিয়ান রফতানিকারক এদেশে এসে তার নিরাপত্তার জন্য বন্দর থানায় একটি জিডি করে গেছেন।

এ ব্যাপারে জে কে শিপিং লাইন্সের প্রধান নির্বাহী কামরুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, কোরিয়ান প্রতিষ্ঠানের লিখিত নির্দেশে তারা গম বাজারে বিক্রি করে প্রধান এজেন্ট আখতারুজ্জামান খান মামুনের ব্যাংক হিসাবে টাকা জমা দিয়েছেন।

রোকেয়া আটোমেটিক ফ্লাওয়ার মিলের মালিক সাইফুল ইসলাম জানান, তিনি গম কিনেছেন, কিন্তু জানতেন না গম খাদ্য মন্ত্রণালয়ের জন্য আমদানি করা।

তিনি আরও জানান, তাকে যে পরিমাণ গম সরবরাহ করা হয়েছে সেই টাকা তিনি পরিশোধ করেছেন।

এদিকে, অভিযোগের বিষয় জানতে আখতারুজ্জামান মামুন খানের মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তার তিনটি মোবাইলই বন্ধ পাওয়া যায়। তবে, জে কে শিপিংয়ের সিইও কামরুল ইসলাম জানান, মামুন বিদেশে রয়েছেন।

এ ব্যাপারে জানতে চট্টগ্রাম বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মইনুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হয়। তিনি দ্য রিপোর্টকে জানান, আদালতের কোন আদেশ তিনি হাতে পাননি। তবে, আদালত থেকে আদেশ আসলে আইন অনুয়ায়ী ব্যবস্থা নিবেন।

উল্লেখ্য, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের শত কোটি টাকার গম আত্মসাতের সংবাদ ২০১৬ সালের ১০ জুলাই প্রথম প্রকাশ করা হয়েছিল দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকমে। সেই ধারাবাহিকতায় আরও কয়েকটি প্রতিবেদন প্রকাশের পর নড়েচড়ে বসে সরকারের উচ্চমহল।

জালিয়াতি করে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের শতকোটি টাকার গম আত্মসাৎ

শত কোটি টাকার ‘গম কেলেঙ্কারি’ ধামাচাপার চেষ্টা!

(দ্য রিপোর্ট/এজে/এনআই/আগস্ট ০৪, ২০১৭)