দ্য রিপোর্ট ডেস্ক : আন্তর্জাতিক খ্যাতিমান চলচ্চিত্রকার তারেক মাসুদ ও এটিএন নিউজের প্রধান নির্বাহী মিশুক মুনীরের ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী রবিবার (১৩ আগস্ট)। ২০১১ সালে এই দিনে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার জোকা এলাকায় মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় দেশের এই দু’কৃতি সন্তানসহ পাঁচজন নিহত হন।

এ উপলক্ষে রবিবার সকাল থেকেই দুর্ঘটনাস্থলে নির্মিত স্মৃতি ফলকে পুষ্পস্তবক অর্পণ, নীরবতা পালন, প্রতিকী মানববন্ধন ও শোক সভার আয়োজন করা হয়েছে।

এসব কর্মসূচির আয়োজন করেছে যৌথভাবে মানিকগঞ্জ প্রেসক্লাব, বারসিক, উত্তরণ, স্যাক, সাবিস এবং তারেক মাসুদ- মিশুক মুনীর স্মৃতি পর্ষদসহ বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন।

শোক সভায় নিরাপদ সড়কের দাবিতে ঢাকা- আরিচা মহাসড়ককে চার লেনে উন্নীত করাসহ রেল পথ নির্মাণের দাবি জানানো হবে বলে জানা গেছে।

২০১১ সালের এই দিনে মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার শালজানা গ্রামে কাগজের ফুল ছবির স্যুটিং স্পট দেখে মাইক্রোবাসে করে ঢাকায় ফিরছিলেন তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীর। বেলা সাড়ে ১২টার দিকে তাদের বহনকারী মাইক্রোবাসের সঙ্গে বিপরীতমুখী চুয়াডাঙ্গাগামী চুয়াডাঙ্গা ডিলাক্স পরিবহনের একটি বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়।

এতে ঘটনাস্থলেই তারেক মাসুদ, মিশুক মুনীর, মাইক্রোবাস চালক মোস্তাফিজুর রহমান, প্রোডাকশন সহকারী মোতাহার হোসেন ওয়াসিম ও জামাল হোসেন নিহত হন। এ দুর্ঘটনায় তারেক মাসুদের স্ত্রী ক্যাথরিন মাসুদ, শিল্পী ঢালী আল-মামুন ও তার স্ত্রী দিলারা বেগম জলি এবং তারেক মাসুদের সহকারী মনীশ রফিক আহত হন।

এদিকে, দুর্ঘটনার পর ঢাকা-আরিচা মহাড়কের ২১টি স্পটকে ব্ল্যাক স্পট হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এরপর ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় ডিভাইডার বসানো হয়।

দীর্ঘ তদন্ত শেষে চলতি বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি বাস চালক জামির হোসেনের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৩০৪ ও ৪২৭ ধারার অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়। ফলে আদালত দণ্ডবিধি ৩০৪ ধারায় তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, ৫ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড এবং দণ্ড বিধি ৪২৭ ধারায় দুই বছরের কারাদণ্ড, দুই হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ডাদেশ দেন।

এ রায়ে বিচারক আল- মাহমুদ ফায়জুল কবীর উল্লেখ্য করেন, আসামির বেপরোয়া ও অবহেলার কারণে ঘটনাস্থলেই পাঁচ জনের মৃত্যু হয়। এতে বাংলাদেশের মিডিয়া জগৎ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ্য হয়। কাজেই এ ধরনের অপরাধ সংঘটনকারী আসামিকে দণ্ড দেওয়ার ক্ষেত্রে নমনীয়তা প্রদর্শনের কোনও যুক্তিসংগত কারণ নেই।

মামলার রায়ে বিচারক আরও উল্লেখ করেন, মামলাটি তদন্তের সময় প্রকাশ পায় আসামি জামির হোসেনের ড্রাইভিং লাইসেন্সের মেয়াদ দুর্ঘটনার তিন বছর আগেই শেষ হয়েছে। অবৈধ উপায়ে ড্রাইভিং লাইসেন্সেরএকটি ভুয়া নবায়ন স্লিপ ব্যবহার করে দীর্ঘদিন গাড়ি চালাতেন জামির হোসেন। এছাড়া বাসের যান্ত্রিক ত্রুটিও ছিল। বিআরটিএর বেঁধে দেওয়া গতির চেয়ে বেশি গতিতে বাস চালিাচ্ছিলেন তিনি। বাসটির ফিটনেস সার্টিফিকেট ছিল না বলেও উল্লেখ্য করেন বিচারক।

(দ্য রিপোর্ট/এনটি/আগস্ট ১৩, ২০১৭)