স্বাধীনতার পর দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থার উপর বড় আঘাত ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট ৬৩ জেলায় একযোগে বোমা হামলা। ওই সময় জঙ্গি সংগঠন জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি) সারাদেশের সাড়ে পাঁচশ স্থানে এ হামলা চালায়। সিরিজ বোমা হামলার এক যুগপূর্তি হচ্ছে বৃহস্প‌তিবার।

চার দলীয় জোট সরকারের আমলে মুন্সীগঞ্জ জেলা ছাড়া দেশের ৬৩ জেলায় একযোগে এ হামলা চালানো হয়। হামলার নিহত হন দুইজন। আদালত সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার পর সারাদেশে ১৬১টি মামলা করা হয়। এখন পর্যন্ত ১১৩টি মামলার রায় হয়েছে। এ সব রায়ে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে ১৫ জন জঙ্গিকে, যাবজ্জীবন হয়েছে ১৩১ জনের। এ ছাড়া বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয় ১৮৪ জনকে। আর ঢাকায় হওয়া ১৮টি মামলার মধ্যে ৪টি মামলা খারিজ করে দেন আদালত।

পুলিশ সদর দফতরের সহকারী মহাপ‌রিদর্শক (এআইজি-মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) সহেলী ফেরদৌস জানান, সিরিজ বোমা হামলার ঘটনায় সারাদেশে ১৬১টি মামলা হয়েছিল। তদন্ত শেষে ১৪৩টি মামলার চার্জশিট দেয়া হয়। ফাইনাল রিপোর্ট (চূড়ান্ত প্রতিবেদন) দেয়া হয় ১৭টি মামলার। ওই মামলাগুলোর এজাহারে আসামি করা হয় ২৪২ জনকে। অভিযোগপত্র দেওয়া ১৪৩টি মামলায় আসামি করা হয় এক হাজার ১৫৭ জনকে। এর মধ্যে বিভিন্ন সময়ে গ্রেফতার করা হয়েছে ৯৬৭ জনকে।

সিরিজ বোমা হামলার সময় জেএমবির প্রধান ছিলেন শায়খ আব্দুর রহমান, সামরিক শাখার প্রধান ছিলেন সিদ্দিকুর রহমান বাংলা ভাই। অন্য মামলায় ২০০৭ সালের ৩০ মার্চ তাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। ২০০৬ সালের ২ মার্চ জেএমবি প্রধান শায়খ আব্দুর রহমানকে সিলেট থেকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। এর চারদিন পর ৬ মার্চ সামরিক শাখার প্রধান সিদ্দিকুর রহমান বাংলা ভাইকে ময়মনসিংহ থেকে গ্রেফতার করা হয়।

২০১০ সালের ২৫ মে রাজধানীর সবুজবাগ ও নারায়ণগঞ্জ এলাকা থেকে জেএমবির পরবর্তী প্রধান মাওলানা সাইদুর রহমান, তার স্ত্রী নাইমা আকতার, সামরিক শাখার প্রধান আনোয়ার আলম শিবলু ও মজলিসে শুরা সদস্য সোহেল মাহফুজকে গ্রেফতার করে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

সিরিজ বোমা হামলা কেবল নয়, একই বছরের ১৪ নভেম্বর ঝালকাঠির সহকারী জেলা জজ সোহেল আহমেদ ও জগন্নাথ পাঁড়ৈ জেএমবির সুইসাইড স্কোয়াডের এক সদস্যের বোমা হামলায় নিহত হন। এ ঘটনার ১৫ দিন পর ২৯ নভেম্বর সকালে চট্টগ্রাম আদালত ভবনে পুলিশ চেকপোস্টের সামনে বোমা হামলা চালায় জঙ্গিরা। ঘটনাস্থলে মারা যান পুলিশ কনস্টেবল রাজীব বড়ুয়া ও ফুটবলার শাহাবুদ্দীন। আহত হন পুলিশ কনস্টেবল আবু রায়হান, সামসুল কবির, রফিকুল ইসলাম, আবদুল মজিদসহ অন্তত ১০ জন।

একই বছরের ৩ অক্টোবর চট্টগ্রাম আদালতের তৎকালীন দ্বিতীয় যুগ্ম জেলা জজ আবু সৈয়দ দিলজার হোসেন এবং তৎকালীন মহানগর হাকিম আকরাম হোসেনের এজলাসে জেএমবি জঙ্গিরা আত্মঘাতী বোমা হামলা চালায়।

ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার ও কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটি) ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘নব্য জেএমবিকে (জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ) নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব স্বরাস্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রক্রিয়াধীন আছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা ও নিজেদের নেতৃত্বের সংঘাতের কারণে জেএমবি ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। তীব্র অভিযানের মুখে নেতৃত্বশূন্য হয়ে পড়ায় নতুন করে হামলা চালানোর সক্ষমতা হারিয়েছে জেএমবির জঙ্গিরা।’

সিটি ইউনিটের প্রধান বলেন, ‘২০০৫ সালে ১৭ আগস্ট জঙ্গিদের দেশব্যাপী একযোগে বোমা হামলার উদ্দেশ্য ছিল তাদের অবস্থান জানান দেওয়া। ওই হামলার জড়িত অধিকাংশ জঙ্গিকে অনেক আগেই গ্রেফতার করা হয়। তাদের অনেকের আদালতের রায়ে বিভিন্ন মেয়াদে সাজাও হয়েছে।’

ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, ‘ওই হামলার পর দীর্ঘদিন নিষ্ক্রিয় থাকার পর গত দুই বছর ধরে নতুন করে সংগঠিত হয়েছিল জেএমবির ও নব্য জেএমবির সদস্যরা। গুলশান হামলার পর আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ধারাবাহিক সফল অভিযানে শীর্ষ জঙ্গিরা গ্রেফতার কিংবা আত্মঘাতী হয়েছে। তাই বর্তমানে তাদের সাংগঠনিক কাঠামো ভেঙে পড়েছে। ছোট খাটো যে জঙ্গিরা এখনো পলাতক থেকে সক্রিয় রয়েছে, সেদিকে আমাদের গোয়েন্দা নজরদারি রয়েছে।’

মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘নব্য জেএমবি জঙ্গি সংগঠনটিকে নিষিদ্ধ করার যে প্রস্তাবনা সেটি আমরা ইতিমধ্যেই দাখিল করেছি। এটি নিষিদ্ধ করা হলে কী কী সুবিধা হবে আমাদের কার্যক্রমে, পাশাপাশি এদের দমনে আমরা কী সফলতা পাব এ যুক্তিগুলো তুলে ধরেই তা নিষিদ্ধ করার জন্য আমরা আবেদন করেছি। আমার জানা মতে, এটি সক্রিয় বিবেচনাধীন আছে।

(দ্য রিপোর্ট/এমএসআর/এজে/আগস্ট ১৬, ২০১৭)