দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : অনেক দিন ধরেই মঞ্চে অনুপস্থিত আলী যাকের। তবে তার অভিনীত ‘নূরুল দীনের সারাজীবন’, ‘দেওয়ার গাজীর কিসসা’, ‘গ্যালিলিও’ নাটকগুলো এখনো মিস করেন দর্শক। মাঝে বিরতি কাটিয়ে ‘দেওয়ান গাজীর কিসসা’ নাটকে কিছুদিন আগেও মঞ্চ মাতিয়েছেন আলী যাকের।

শারীরিক অসুস্থতার জন্য এখন আর অভিনয় করতে পারেন না। দুই দিন আগেই সিঙ্গাপুর থেকে চিকিৎসা নিয়ে দেশে ফিরেছেন এই বরেণ্য অভিনেতা। এসেই জাতীয় নাট্যশালার মূল মঞ্চে দাঁড়ালেন। এবার আর অভিনয় করতে নয়। দীর্ঘ নাট্যজীবনের স্বীকৃতি হিসেবে তাকে এ বছর ‘সেলিম আল দীন পদক- ২০১৭’ প্রদান করা হয়েছে।

মঞ্চে তখন উপস্থিত নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের একসময়ের তুখোড় দুই অভিনেতা। আলী যাকের ও আসাদুজ্জামান নূর। গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় আলী যাকেরকে সেলিম আল দীন পদক তুলে দেন তাঁরই নাট্য সতীর্থ সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর।

ছয় দিনব্যাপী সেলিম আল দীন উৎসবের দ্বিতীয় দিনে এ পদক দেওয়া হয়েছিল। সেদিন অসুস্থতার কারণে সেখানে উপস্থিত হতে পারেননি আলী যাকের। তাঁর হয়ে পদক কেউ গ্রহণ করেননি। কেননা পদকটি নিজ হাতেই নিতে চেয়েছিলেন তিনি।

পদক পেয়ে আপ্লুত আলী যাকের বলেন, ‘আজকে শিমুল (শিমুল ইউসুফ) প্রথমে এসে চোখে জল এনে দিল। তারপর কিছু অতীতের কথা তুলে নূর (আসাদুজ্জামান নূর) আবারও সজল করে তুলল। কত কথা মনে এসে যায়। কত গল্প। তখন সবকিছুতেই আনন্দ খুঁজে পেতাম। নিবেদিতপ্রাণ, মেধা, পরিশ্রম দিয়ে কাজ করেছি, এগুলো অর্থহীন কথাবার্তা। সেটি একটা আনন্দের সময় গেছে আমাদের। পেশার জন্য দিনটাকে খরচ করে সন্ধ্যা বেলায় মিলিত হওয়া ছিল অবধারিত। সেই সময় আমাদের যাঁরা দেখেছেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম প্রধান পুরুষ সেলিম আল দীন। আজকে যদি এমন হতো সেলিম বেঁচে আছেন, তাঁর হাত থেকে আমি আজকে এই পদকটি নিচ্ছি—এর চেয়ে আনন্দের বিষয় আর কিছু হতে পারে না। সেলিম, আপনি যেখানে থাকুন না কেন, আপনার প্রতি কৃতজ্ঞতা, আপনার লেখার প্রতি ঈর্ষা। আপনি জানুন আপনার একজন ভক্ত এ মঞ্চে দাঁড়িয়ে আছেন। একটাই দুঃখ, সেলিম আমাকে কোনো দিন বলেননি তাঁর একটা নাটক করেন। যদি মঞ্চে ফিরি, তবে কোনো একদিন সেলিমের নাটক করব।’

আলী যাকেরকে উত্তরীয় পরিয়ে দেন নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার। সভাপতি ছিলেন উৎসবের আহ্বায়ক নাসির উদ্দীন ইউসুফ। পদক প্রদান অনুষ্ঠান শেষে মঞ্চায়িত হলো মহাকাল নাট্য সম্প্রদায়ের নাটক নীলাখ্যান। কাজী নজরুল ইসলামের ‘সাপুড়ে’ গল্প অবলম্বনে রচনা করেছেন আনন জামান, নির্দেশনা দিয়েছেন ইউসুফ হাসান।

১৯৪৪ সালে চট্টগ্রামে জন্ম হয় আলী যাকেরের। ১৯৭২ সালে আরণ্যক নাট্যদলের কবর নাটক দিয়ে অভিনয়যাত্রা শুরু। একই বছর যোগ দেন নাগরিক নাট্যসম্প্রদায়ে। অভিনয় করেন দেওয়ান গাজীর কিসসা, নূরলদীনের সারাজীবন, গ্যালিলিও ইত্যাদি নাটকে। সৈয়দ শামসুল হকের সৃষ্টি চরিত্র নূরলদীনের চরিত্রে অভিনয় করে জায়গা করে নিয়েছেন দর্শক হৃদয়ে। তিনি অভিনয়ের পাশাপাশি নির্দেশনাও দিয়েছেন। টিভি নাটকে অভিনয় করে আছেন উজ্জ্বল হয়ে।

(দ্য রিপোর্ট/পিএস/এনআই/আগস্ট ২৪, ২০১৭)