দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : স্থায়ী সম্পদের উপরে অবচয় চার্জ বা হিসাব নিয়ে প্রতারণা করেছে ওইম্যাক্স ইলেকট্রোডস কর্তৃপক্ষ। বিগত বছরগুলোতে সঠিকভাবে অবচয় চার্জ না করে সম্পদের পরিমাণ বেশি দেখিয়ে আসছে। এ ছাড়া সংরক্ষিত আয়ের পরিমাণ বেশি দেখানো হয়েছে। যাতে শেয়ারপ্রতি সম্পদও (এনএভিপিএস) বেশি দেখানো হচ্ছে।

ওইম্যাক্স ইলেকট্রোডসের প্রসপেক্টাস থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

হিসাব মান অনুযায়ি, স্থায়ী সম্পদের উপর অবচয় চার্জ করতে হয়। এতে ব্যয় বৃদ্ধি পায়। যাতে নিট মুনাফা ও শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) কমে আসে। অন্যদিকে অবচয়ের কারণে স্থায়ী সম্পদের পরিমাণ ও শেয়ারপ্রতি সম্পদের পরিমাণ কমে আসে।

দেখা গেছে, ২০১০ সালের মার্চ মাস থেকে ব্যবসায় করে আসছে ওইম্যাক্স ইলেকট্রোডস। কিন্তু কোম্পানির স্থায়ী সম্পদ ভবনের (বিল্ডিং) উপর ২০১৪-১৫ অর্থবছর থেকে অবচয় ধার্য্য করা শুরু হয়েছে। এর আগে এই সম্পদের উপর অবচয় ধার্য্য করা হয়নি। যাতে ২০১৩-১৪ অর্থবছর পর্যন্ত মুনাফা ও ইপিএস বেশি দেখানো হয়েছে। একইসঙ্গে ব্যবসার শুরু থেকে এখন পর্যন্ত কোম্পানি কর্তৃপক্ষ সংরক্ষিত আয়, স্থায়ী সম্পদ ও শেয়ারপ্রতি সম্পদ বেশি দেখিয়ে আসছে।

প্রসপেক্টাস অনুযায়ি, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ওইম্যাক্সে ইলেকট্রোডসের ভবনবাবদ ২ কোটি ৫৩ লাখ ৮২ হাজার টাকার সম্পদ ছিল। আর ওই বছরে কোম্পানির নির্ধারিত ১০ শতাংশ হারে অবচয় আসে ২৫ লাখ ৩৮ হাজার ২শত টাকা। যা ২০১৫-১৬ অর্থবছরের শুরুতে পূঞ্জীভুত অবচয় হিসাবে দেখানো হয়েছে। এ হিসাবে প্রতিষ্ঠানটির ভবনের উপর ২০১৪-১৫ অর্থবছরে অবচয় ধার্য্য করা শুরু হয়েছে।

এদিকে হিসাব মান অমান্য করে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ক্রয়কৃত ইলেকট্রিক্যাল ইক্যুপমেন্ট ও ভবনের উপর গতানুগতিক ধারায় ৬ মাসের অবচয় চার্জ করা হয়েছে। কিন্তু হিসাব মান অনুযায়ী, যখন থেকে ব্যবহারযোগ্য, তখন থেকেই স্থায়ী সম্পদের উপর অবচয় চার্জ করতে হয়।

পাবলিক ইস্যু রুলসের ৩ ধারার ২ উপধারার ‘ই’তে ফাইন্যান্সিয়াল স্টেটমেন্ট আন্তর্জাতিক হিসাব মান অনুযায়ি প্রস্তুত করতে বলা হয়েছে। কিন্তু ওয়াইম্যাক্স ইলেকট্রোডস কর্তৃপক্ষ আইএএস-৭, ১২ ও ৩৩ ধারা লংঘন করেছে।

আইএএস-৭ অনুযায়ি, ওয়েটেড শেয়ার দিয়ে শেয়ারপ্রতি নগদ প্রবাহ (এনওসিএফপিএস) হিসাব করতে হয়। কিন্তু ওইম্যাক্স ইলেকট্রোডস কর্তৃপক্ষ মোট শেয়ার বিবেচনায় নিয়ে ২০১৪-১৫ ও ২০১৫-১৬ অর্থবছরের এনওসিএফপিএস হিসাব করেছে। যাতে ২০১৪-১৫ অর্থবছরের এনওসিএফপিএস ১.০৮ টাকার পরিবর্তে ০.৮৭ টাকা ও ২০১৫-১৬ অর্থবছরের এনওসিএফপিএস ০.৩১ টাকার পরিবর্তে ০.২৭ টাকা দেখানো হয়েছে।

আইএএস-১২ অনুযায়ি, ওয়াইম্যাক্স ইলেকট্রোডসে ডেফার্ড টেক্স গণনা প্রযোজ্য হলেও ২০১৪ সাল পর্যন্ত করা হয়নি। এমনকি এ বাবদ পরবর্তীতে সমন্বয়ও করার বিধান থাকলেও তা করা হয়নি। যাতে বর্তমানে নীট সম্পদের ক্ষেত্রে সঠিক তথ্য প্রকাশ করা হয়নি। এ ছাড়া ২০১৫ সালের আগের বছরগুলোতে সঠিক মুনাফা দেখানো হয়নি।

এদিকে ইপিএস গণনার ক্ষেত্রে আইএএস-৩৩ লংঘন করেছে ওয়াইম্যাক্স ইলেকট্রোডস কর্তৃপক্ষ। আইএএস অনুযায়ি, শেয়ার ওয়েটেড না করেই ১৫৭ ও ১৫৮ পৃষ্টায় প্রদত্ত ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ভুল ইপিএস দেখানো হয়েছে। এ বছর ইপিএস ১৬৫.৬৮ টাকা হলেও কোম্পানি কর্তৃপক্ষ ১১৮.৭৪ টাকা দেখিয়েছে।

উল্লেখ্য পাবলিক ইস্যু রুলসের ১৬ ধারায় অনুযায়ি, ওয়াইম্যাক্স ইলেকট্রোডসের এসব মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রকাশের কারণে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশ ১৯৬৯ এর আওতায় বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষমতা আছে।

এসব বিষয়ে ফোনে কোনো মন্তব্য করবেন না বলে জানিয়েছেন ওয়াইম্যাক্স ইলেকট্রোডসের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) মো. ইকরামুল হোসেন।

(দ্য রিপোর্ট/আরএ/আগস্ট ২৯, ২০১৭)