বিধান সরকার, বরিশাল :  প্রাণি সম্পদ দপ্তরের হিসেবে এ বছর বরিশাল বিভাগে কোরবানিযোগ্য গবাদিপশুর সংখ্যা প্রায় সাড়ে তিন লাখ।  দপ্তরের উপ-পরিচালকের বর্ণনায় কোরবানির জন্য এ সংখ্যা যথার্থ হলেও বাস্তবে এর ভিন্ন চিত্র। গবাদিপশুর সিংহভাগ হাটে এখন কুষ্টিয়া, সাতক্ষীরা আর রাজশাহীর গরুর আধিক্য বিদ্যমান। দরদাম গেল বছরের চেয়ে গরুপ্রতি ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা বেশি। স্থানীয় বেপারীরা আশঙ্কা করছেন শুক্রবারের হাটে ভারতীয় গবাদিপশুর উপস্থিতি ঘটলে এবার শতকরা নব্বই ভাগ লোকসান গুণতে হবে তাদের।

বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ দপ্তর থেকে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, কোরবানি উপলক্ষে এবারে বরিশাল বিভাগের ৬ জেলায় স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলিয়ে ৩৩৭টি হাট বসেছে। এর মধ্যে ভোলা জেলায় ৯৮টি, পটুয়াখালী জেলায় ৬৮টি, বরিশাল জেলায় ৬৭টি,বরগুনা জেলায় ৪৫টি, পিরোজপুর জেলায় ৩৪টি এবং ঝালকাঠী জেলায় রয়েছে ২৫টি হাট। এসব হাটে প্রাণিসম্পদ বিভাগের ১০২টি মেডিকেল টিম কাজ করছে। এই ৬ জেলার ৩৭ হাজার ১২টি খামারে কোরবানিযোগ্য ষাঁড়, বলদ, গাভী, মহিষ, ছাগল, ভেড়া মিলিয়ে রয়েছে ৩ লাখ ৪৪ হাজার ৫১৪টি পশু।

দপ্তরের উপ-পরিচালক ডা. শেখ আজিজুর রহমান বলেছেন, ‘খামারীদের পালন করা বেশির ভাগ গরু সংকর প্রজাতির। তাদের খামারে শাহীওয়াল আর অস্ট্রেলিয়ার ফ্রিসিয়ান পশু রয়েছে। তবে মাংসের জন্য সবচেয়ে ভালো ও দ্রুত বর্ধনশীল ব্রাহ্মা প্রজাতির গরু জেলার মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলাতে পালন শুরু হয়েছে। এটা লাভজনক বলতে, ২ বছরে ৩ থেকে ৪শ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। গত বছর কুষ্টিয়ার হাটে ৩ বছর বয়সী ব্রাহ্মা প্রজাতির সংকর গরু ১০ লাখ টাকায় বিক্রি হয়েছিল।’

তিনি জানিয়েছেন, ৩ বছর ধরে ভারতীয় গরু আমদানিতে কড়াকড়ি থাকায় স্থানীয় গবাদীপশু দিয়েই কোরবানি সম্পন্ন করা গেছে। এবারো ঈদুল আজহায় কোরবানির পশুর কোনো সংকট হবেনা।

তবে স্থানীয় পশুর হাটগুলোর মধ্যে কেবল চরমোনাইতে স্থানীয় বলতে ভোলা,পাতারহাট, হিজলা, মুলাদী, খাসেরহাট এসব এলাকার গরুর উপস্থিতি থাকলেও অন্য হাটের মতো কুষ্টিয়া বা যশোর থেকে আনা গরুরও দেখা গেছে। চরমোনাই হাটের ব্যবসায়ী মো. রুহুল আমিন বলেছেন, ‘লোকাল গরুর চাহিদা বেশি থাকে, মাংসের স্বাদও ভিন্ন হয়। সেক্ষেত্রে গোয়ালে পালন করা নির্দিষ্ট খাবার খাওয়ানো গরুর মাংস সাদা হলেও স্বাদে ঘাস খাওয়ানো গরুর মতো হয়না। তবে চাহিদার তুলনায় কম হওয়াতে কুষ্টিয়া, সাতক্ষীরা বা রাজশাহীর দিকে ছুটেন গরুর পাইকাররা।’ রুহুল আমিন শৌলকূপা থেকে ৩১টি গরু এনেছেন। এ বছর ছোট সাইজের দেড় থেকে ২ মণের গরুর চাহিদা সবচেয়ে বেশি। মোকামে এই গরুর দাম গেল বারের তুলনায় বেড়েছে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা। মাঝারী সাইজের আড়াই থেকে ৩ মণ ওজনের গরুর মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা করে। তবে বড় সাইজের গরুর দাম খুব একটা বাড়েনি।

মোকামে গরুর দাম বৃদ্ধির কথা জানালেন বাঘিয়ার বেপারী কামাল সরদার, মো. সিরাজ মৃধা, গুয়াচিত্রার বশির মিয়া। নগরীর কাউনিয়া গরুর হাটে এসব ব্যবসায়ীরা ১০ থেকে সর্বেচ্চ ৩৯টি গরু কিনে এনেছেন। গরু আনা খরচ, খাওয়ানোর খরচ, লোকবল মিলিয়ে যে টাকায় কিনতে হয়েছে বরিশালের হাটে সেই দাম ক্রেতারা বলছে না, এমন অভিযোগ তোলেন লাখোটিয়ার গরুর বেপারী মো. জসিম। তিনি জানিয়েছেন, এক লাখ ৪০ হাজার টাকার জোড়া বলদ ক্রেতারা বলছেন এক লাখ ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত। এরকম অবস্থা চলতে থাকলে গরু ফিরিয়ে নেওয়া ছাড়া কোনো উপায় থাকবেনা। কেউবা বলছেন, সামনের বছরের অপেক্ষায় থাকতে হবে। কোরবানির হাটের এমন অবস্থা দেখে নগরীর গড়িয়ারপাড়ের ব্যবসায়ী আ. মালেক বলছেন, ‘গেল বারে ধরা খেয়ে এ বছর আর গরু আনিনি। এখন যা দেখছি আর শুক্রবারের মধ্যে ভারতীয় গরু চলে আসলে সব বেপারীরাই ধরা খাবেন নিশ্চিত। শুনেছি, ইতিমধ্যেই রাজশাহীর সীমান্ত দিয়ে মহিষ এবং সাতক্ষীরার পুঁটখালী সীমান্ত থেকে ভারতীয় গরু প্রবেশ করেছে।।’

কাউনিয়ার গরুর হাটে বুধবার পর্যন্ত যে বিকিকিনি হয়েছে তা গেল বছরের তুলনায় অর্ধেকটা-একথা জানালেন হাটের খাজনা আদায়কারী রেজাউল করিম। তিনি বলেছেন, ‘ হাটে গরুর বেশ উপস্থিতি। তবে ক্রেতা নেই। গরুর দাম বাড়ায় ক্রেতারা অপেক্ষায় আছেন শুক্রবারের। ওই দিন বিকিকিনি বেশ হবে বলে অনুমান করছি। তবে বন্যায় দেশের উত্তারঞ্চল ক্ষতিগ্রস্থ হওয়াতে সেখানে কর্মরত বরিশালের বাসিন্দারা এবারে একক নয়; ভাগে কোরবানি দেওয়ার পরিকল্পনা করায় গরু কম চলবে।’ গরু ব্যবসায়ীরা শুক্রবার বা ঈদের দিন সকাল পর্যন্ত বাড়তি দামের যে চিন্তা করছেন তা ফলপ্রসূ হবেনা বলে মনে করেন তিনি।

(দ্য রিপোর্ট/জেডটি/আগস্ট ৩০, ২০১৭)